নামদেও ধাসালের কবিতা
ভূমিকা ও ভাষান্তর : শৌভিক দে সরকার
গত শতকের অন্যতম মারাঠি কবি এবং ‘দলিত প্যান্থার’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নামদেও ধাসাল ১৯৪৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুণের কাছে পুর-কানেরসর গ্রামে একটি দলিত মাহার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘গোলপিঠা’ প্রকাশিত হয়। ‘মূর্খা মাতারায়াণে ডোঙ্গর হালাভিলে, তুহিন ইয়াত্তা কাঞ্চি, খেল, গান্ডু বাগিচা, মী মারালে সুরিয়াচ্যা রাথাঞ্চে ঘোড়ে’ নামদেও ধাসালের উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থ্থ। ‘হাড়কি হাড়াভালা’ এবং ‘উঝেদাচী কালি দুনিয়া’ নামে দুটি উপন্যাসও লিখেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে জে ভি পাওয়ার, অরুণ কাম্বলের সহায়তায় আমেরিকার ‘ব্ল্যাক প্যান্থার পার্টি’র অনুকরণে তিনি ‘দলিত প্যান্থার পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে শুধু একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রয়োজনে সমাজ সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে কবিতাকে ব্যবহার করেননি নামদেও ধাসাল। নাগরিক আধুনিকতার ছদ্ম সংবেদনশীলতাকে ডিঙ্গিয়ে সমকালীন মারাঠি কবিতাকে এক আশ্চর্য বিস্তৃতির দিকে নিয়ে যান তিনি। ‘পদ্মশ্রী’, ‘সেভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার’ ছাড়াও ২০০৪ সালে সাহিত্য আকাদেমির ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইতে পরলোকে যাত্রা করেন গুরুত্বপূর্ণ এই মারাঠি কবি নামদেও ধাসাল।
একটি গাছ অথবা ডালপালায় নুয়ে পড়া একজন নারী
এতিম, মেঘভর্তি
একটি ঘরছাড়া আকাশ
অন্ধকারের ওই ভূতটাই কানাগলিগুলোকে জাগিয়ে রাখছে
আলোর দিকে সারি বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধরা
ধর্মনিরপেক্ষ মাটি বর্ণমালার বীজগুলি ঢেকে দিচ্ছে
তাহলে কোন সাম্প্রদায়িকতা চাঁদ বেচারিকে কলঙ্কিত করল?
আমাদের যৌথ চিৎকারই জীবনের সবকিছু ধরে রেখেছে
আমরা কি সবুজ ক্ষেতগুলিকে হাওয়ায় নেচে উঠতে দেখিনি?
এই শূন্যতার ভেতর আমার ছায়ার পেছনেই লাথি মারলাম আমি
দুমুখো জীবনের খুলে ফেলা ছায়া মাঠ পার হয়ে চলে গেল
আমাকে তাহলে কে আদর করবে?
একটি গাছ নাকি ডালপালায় নুয়ে পড়া একজন নারী?
জাদু
এই নাটকের নিয়মগুলিই আমার জ্বালাটা বাড়িয়ে দিচ্ছে
ট্র্যাজেডি আর কমেডির ভেতর আর কোনো ফারাক খুঁজে পাই না আমি।
ভাগ্যের তামাশা, দুর্দশার দশাবতার;
কীভাবে যে সময় চলে গেল! ব্রিজের নিচ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেল!
বাঁজা গাছটাতেও শেষমেশ ফুল চলে এলো
অথচ এই দেশ, আমাকে সবসময় বহিরাগত বলে গেল;
হাওয়াও আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল;
শুধু ওই অন্তহীন আকাশটাই আমাকে দয়া দেখাল।
উৎসর্গ
বাবাসাহেব-
আমাকে ক্ষমা করুন!
আপনি পুতুল পূজাকে ঘৃণা করতেন,
অনুগামীদের আপনি কখনো আপনার পূজা করতে দেননি।
কিন্তু আমি এই অপরাধটি করে ফেলেছি!
আপনি চলে যাওয়ার পর আপনাকে নিয়ে
কবিতা না লিখে থাকতে পারিনি আমি।
বাবাসাহেব, আমি আপনার পায়ে মাথা ঝুঁকিয়ে রাখলাম
যা শাস্তি আপনি দেবেন,
সারা জীবনের জন্য আমি তা মাথা পেতে নেব।
পুরাণের গল্পে তো এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে
অভিশপ্ত মানুষরা আবার তাদের চেহারা ফিরে পেয়েছে।
বাবাসাহেব,
আপনি আমাকে শাস্তি দিলে
আমার জীবন আবার আগের মতো হয়ে উঠবে।