• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভিড় বাড়ছে আকাশে...

আকাশে ওড়ার ইচ্ছে অনেকেই মনের মাঝে লালন করেন

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

ভিড় বাড়ছে আকাশে...

  • পরাগ মাঝি
  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৮

এয়ারপোর্টে বিমানে ওঠার আগমুহূর্তে সেলফিবাজি এখন একটি পরিচিত দৃশ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে অহরহই এই দৃশ্যের দেখা মেলে। অথচ দুই দশক আগেও এদেশের মানুষের কাছে বিমানযোগে চলাচল ছিল এক আরাধ্য বিষয়। যারা বিদেশ ভ্রমণ করতেন, তারাই এর স্বাদ পেতেন। সাধারণ মানুষও বিদেশ ঘুরে আসা মানুষের কাছে বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা প্রশ্ন করে জেনে নিতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথে যাতায়াত ব্যবস্থার ধারাবাহিক অগ্রগতি এই চিত্রটিকে ধীরে ধীরে বদলে দিচ্ছে। সময় বাঁচাতে কিংবা ভিন্ন স্বাদ নিতে এখন অনেকেই অভ্যন্তরীণ আকাশপথকে বেছে নিচ্ছেন।

সম্প্রতি সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলেকে নিয়ে রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষিকা নাজমুন নাহার স্মৃতি। সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে বিমানে ওঠার আগমুহূর্তে যথারীতি তিনিও সেলফিবাজি করেছেন। এক মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে ওই সেলফিগুলো তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিমানে ওঠার অভিজ্ঞতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘ছেলের জন্যই মূলত বিমানে ভ্রমণ। কারণ এত অল্প বয়সে বাসে দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করলে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হতো। ঢাকায় ফেরারও তাড়া ছিল।’

নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমার নতুন অভিজ্ঞতা। দারুণ আনন্দ পেয়েছি। প্রথমবার বলে কিছুটা ভয়ও ছিল। ভাবতাম, বিমানে চড়ে একদিন বিদেশে ভ্রমণ করব। যদিও তার আগেই দেশের ভেতরে এই স্বাদটুকু নিয়ে নিয়েছি।’

শুধু নতুন অভিজ্ঞতা আর ঘুরে বেড়ানোই নয়, নিতান্ত প্রয়োজনের খাতিরেই বর্তমানে অনেকে বিমানে ভ্রমণ করছেন। কারণ মানুষের সময়ের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। তাই ঢাকা থেকে সিলেট কিংবা চট্টগ্রামে যেতে দীর্ঘ ৮-৯ ঘণ্টা ছাড় দিতে চান না অনেকেই। আর দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তিও স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটায়।

দুই দশক আগেও অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান পরিচালিত হলেও ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে’র সেই ফ্লাইটগুলোতে খুব অল্পসংখ্যক যাত্রীই চলাচল করত। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইনস নামে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থা যাত্রা শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে অন্তত ১২টি বেসরকারি বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময়ে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তবে বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ও রিজেন্ট এয়ার নামে মাত্র চারটি বেসরকারি সংস্থা তাদের সেবা চালু রেখেছে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রুটেও নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করছে। ধীরে ধীরে যাত্রীসংখ্যাও বাড়ছে। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে বিমান সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে নানা অফার এবং ছাড়ের ঘোষণাও দিয়ে থাকে। ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করলে এখন অনায়াসেই যে কেউ ঢাকা থেকে মাত্র আধাঘণ্টায় দেশের অন্যপ্রান্তে চলে যেতে পারেন।

আকাশে ওড়ার ইচ্ছে অনেকেই মনের মাঝে লালন করেন। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সেই ইচ্ছার বাস্তব রূপ দিতে এখন অনেকটাই পরিণত। বর্তমানে দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ঢাকা) ছাড়াও সিলেটে ওসমানী এবং চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে নিয়মিত বিমান চলাচল করছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও এই তিনটি বিমানবন্দর ব্যস্ত সময় পার করছে। এ ছাড়া রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, সৈয়দপুর ও কক্সবাজারেও বিমানবন্দর রয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহনে এগুলো ব্যবহূত হচ্ছে। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের প্রতিটি জেলায়ই বিমানবন্দর করা হবে। হয়তো সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন ঘণ্টা পেরুবার আগেই মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে চলে যেতে পারবে নিতান্ত প্রয়োজন কিংবা ঘুরে বেড়ানোর ছলে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads