• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বছরব্যাপী মানসম্মত পেয়ারা উৎপাদনের কৌশল

বছরে দুবার পেয়ারা হয়- প্রথমবার বর্ষাকালে, দ্বিতীয়বার শীতকালে

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

বছরব্যাপী মানসম্মত পেয়ারা উৎপাদনের কৌশল

  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

কৃষিবিদ মো. আবদুল্লাহ-হিল-কাফি

পেয়ারা উৎপাদনে যেভাবে কৃষক সাড়া দিচ্ছেন, তা অকল্পনীয়। পেয়ারার গুণাগুণ আপেলের থেকে কোনো অংশেই কম নয়।  পেয়ারায় ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা মানবদেহের গঠন ও বৃদ্ধিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বছরে দুবার পেয়ারা হয়- প্রথমবার বর্ষাকালে, দ্বিতীয়বার শীতকালে। সাধারণত বর্ষাকালের চেয়ে শীতকালে পেয়ারার উৎপাদন বেশি হয়। পেয়ারায় ব্যাগিং করে, জোড় কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ করে এর ফলন কাঙ্ক্ষিত সময়ে করানো যায় এবং সহজে বাজারজাত করে লাভ বেশি পাওয়া যায়। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তিনভাবে ফল ধরা নিয়ন্ত্রণ করে পেয়ারা উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব-

ক. মৌসুমি ফল উৎপাদনের সময়ে কিছু ফুল ও ফল ছিঁড়ে দিয়ে অমৌসুমি ফল ধরাকে উৎসাহিত করে;

খ. সার, পানি ও হরমোন প্রয়োগ কাংখিত মাত্রায় ব্যবহার করে;

গ. ব্যান্ডিং বা বাঁকানো পদ্ধতি ব্যবহার করে।

 

ব্যাগিং প্রযুক্তি : পেয়ারা উৎপাদনে ও ফলনে ব্যাগিং পদ্ধতি এক নবদিগন্তের যাত্রা শুরু করেছে। পলিব্যাগ ব্যবহার করে অসময়ে পেয়ারা উৎপাদন এবং পেয়ারা চাষের সমস্যা দূর করা যায়। এই পদ্ধতিতে পলিথিনের ব্যাগটি ফলের বোঁটার সাথে হালকা করে বেঁধে দিতে হয় এবং ফলের নিচের দিকে পলিথিনের মুখটি খোলা রাখতে হয়। পলিথিনের নিচে কয়েকটি ছিদ্র করে দিতে হবে যেন পলিথিনের ভেতরে সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে এবং জমাকৃত পানি বের হয়ে যেতে পারে। পেয়ারা মার্বেলের চেয়ে একটু বড় হলেই ব্যাগ পরানো হয়। ব্যাগিং করলে মাছি পোকা ফলের গায়ে বসতে পারে না। সেজন্য ফল ভালো থাকে আর সরাসরি কীটনাশক পেয়ারায় পড়ে না। ফলে স্বাস্থ্যসম্মত পেয়ারা পাওয়া যায়। এর ফলে ফল পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় এবং ফলের রঙ, মান ভালো থাকে। বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। 

কুশিভাঙা : সাধারণত বৈশাখ মাসে পেয়ারার চারা লাগানো হয়। গাছ ৮-৯ মাস বয়সের গাছে ফল আসে এবং অতিরিক্ত বৃদ্ধি কমানো এবং ডাল সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য কুশি ভেঙে দেওয়া হয়। কুশি ভাঙার ২০-২৫ দিনের মধ্যেই নতুন অতিরিক্ত কয়েকটি কুশি আসে। আর যত বেশি কুশি আসবে তত বেশি ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিবে।

জোড় কলম : সাধারণত বীজ থেকে উৎপাদিত চারা দ্বারাই সাধারণত আমাদের দেশে এর চাষ হয়ে থাকে। তবে এখন বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন করে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে উন্নত জাত সৃষ্টি করে তা কৃষকের মাঝে বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পলি পেয়ারা, আঙুর পেয়ারা এবং স্ট্রবেরি পেয়ারার জাতের চারাকে আদিজোড় হিসাবে ব্যবহার করে পেয়ারার উইল্ট রোগ এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আঙুর পেয়ারার বীজের চারা অনেক চিকন হয় বলে জোড় কলমের ক্ষেত্রে পলি পেয়রা ও স্ট্রবেরি পেয়ারা বীজের চারাকে আদিজোড় হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব। বীজ থেকে যেনতেনভাবে গজানো চারা ব্যবহার করে ফলের গুণগতমান কমে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে উইল্টিং প্রতিরোধী গাছ তৈরি করে পেয়ারার সফল উৎপাদন সম্ভব।

ব্যান্ডিং বা শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি : শাখা-প্রশাখা বাঁকানোর মাধ্যমে পেয়ারার অসময়ে বা সারা বছর ধরে ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করতে হয়। ৫-৬ বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতি প্রয়োগ থাকে। সাধারণত বছরে দুবার এই পদ্ধতিতে পেয়ারার ফুল ও ফল নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে : এপ্রিল-জুন মাস পর্যন্ত একবার, সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার। ডাল বাঁকানোর ১০-১৫ দিন আগে সার ও পানি দিতে হবে। ডাল বাঁকানোর সময় শাখাটির অগ্রভাগের প্রায় এক-দেড় ফুট মতো পাতা ফুল ফল রেখে বাকি অংশের পাতা ফুল ফল ও ছোট ডাল কেটে ফেলতে হয়। সুতলি দিয়ে গাছের ডালের মাথায় বেঁধে গাছের শাখা-প্রশাখাগুলোকে বেঁকিয়ে গাছের কাণ্ডের সঙ্গে বেধে দেওয়া হয়। এছাড়া মাটিতে খুঁটি পুঁতে খুঁটির সাথেও বেঁধে দেওয়া যেতে পারে। এপ্রিল হতে জুন সময়ে ডাল বাঁকানোর ১০-১২ দিন পর নতুন ডাল বের হয়। নতুন ডাল ১ সেন্টিমিটারের মতো হলে বাঁধা জায়গা খুলে দেওয়া হয়। আবার সেপ্টেম্বর হতে নভেম্বর ডাল বাঁকানো হলে ডাল বাঁকানোর ২০-২৫ দিন পরে নতুন ডাল গজাতে শুরু করে। সাধারণত ডাল বাঁকানোর ৪৫-৬০ দিন পরে ফুল ধরতে শুরু করে। এভাবে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ডাল বাঁকানো হলে ফল পাকতে শুরু করে অক্টোবর-জানুয়ারি মাসের মধ্যে। সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে ডাল বাঁকানো হলে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ফল পাকে। এ সময়ের ফল মিষ্টি হয় ও অন্যান্য সব গুণাগুণ বেশি থাকে। ফলের আকৃতি, রং সুন্দর হওয়ায় এই সময়ের পেয়ারার বাজারদর ভালো পাওয়া যায়।

লেখক : আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads