• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বরিশালের আমড়া সারা দেশে নামকরা

আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

বরিশালের আমড়া সারা দেশে নামকরা

  • নাহিদ বিন রফিক
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

আমড়া বাঙালির অতিপ্রিয় একটি ফলের নাম। টক-মিষ্টি মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ। পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। তাই একে গোল্ডেন আপেলও বলা হয়। আমড়ার সিংহভাগ কাঁচা খাওয়া হলেও ভর্তা, আচার, চাটনি আর পরিপক্ব ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বা। আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত হয়। আর তাই বরিশালের আমড়া সারা দেশে নামকরা।

প্রসিদ্ধ হিসেবে সবাই বরিশালের আমড়া বললেও আসলে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে (নেছারাবাদ) আমড়ার রাজধানী বলা যায়। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনায়ও আমড়া ভালো জন্মে। এসব এলাকায় পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া চাষ হয় সমানতালে। বর্ষা মৌসুমে ওখানকার নিচু জমিগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে স্থানীয় কৃষকরা উঁচু করে কান্দি বা বেড তৈরি করেন। এ পদ্ধতিকে সর্জান বলে। দুই বেডের মাঝখানে প্রশস্ত নালা থাকে, যাতে ছোট নৌকাযোগে ফল সংগ্রহ করতে সহজ হয়। মাঘ-ফাল্গুনে গাছে মুকুল আসে। কার্তিক-অগ্রহায়ণে ফল পাকে।

বাংলাদেশে দুই প্রজাতির আমড়ার চাষ হয়। দেশি এবং বিলাতি। বিলাতি আমড়ার অপর নাম বরিশালের আমড়া। দেশি আমড়া খেতে টক, বিচি বড়। বিলাতি আমড়া খেতে মিষ্টি, বিচিও ছোট। ভালো ফলনের জন্য আমড়ার উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি আমড়া-১ এবং বারি আমড়া-২। বারি আমড়া-১ বারো মাসি। গাছ বামনাকৃতির হয়। ফলের আকার ছোট। স্বাদ হালকা টক। এ ছাড়া এফটিআইপি বাউ আমড়া-১ নামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাত উদ্ভাবন করেছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর (২০১৭-১৮ খ্রি.) বরিশাল অঞ্চলে ২০ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে বরিশালে ৩৫৩ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ৫৯১ হেক্টর, পিরোজপুরে ৪৯৩ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ২৫৯ হেক্টর, বরগুনায় ২০৫ হেক্টর এবং ভোলায় ১৭০ হেক্টর। উপজেলাওয়ারী সর্বোচ্চ জমির পরিমাণ ঝালকঠির সদর এবং রাজাপুরে। দুই উপজেলাতে ২৬০ হেক্টর করে। চলতি বছরে চাষের পরিমাণ বেড়েছে। নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিফাত শিকদার জানান, গতবার তার উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৭৫ টন আমড়া উৎপাদন হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫২ হেক্টর জমিতে ১৭ টন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করেন।

চাষিরা গাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যান ভাসমান হাটে। সেখানে আমড়া কেনার জন্য শত শত ট্রলারসহ পাইকারি বিক্রেতারা জমা হন। সেখান থেকে সরবরাহ করা হয় সারা দেশে। এসব হাটের মধ্যে ঝালকাঠি সদরের ভিমরুলি, বাউকাঠি, নবগ্রাম এবং নেছারাবাদের আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, আদমকাঠি, ধলহার অন্যতম। এক টন আমড়ার বাজার দর (পাইকারি) ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। আর খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ২৮-৩০ টাকা।

বর্ষা মৌসুম চারা লাগানোর উত্তম সময়। চারা রোপণের জন্য পর্যাপ্ত রোদ পড়ে এমন উঁচু, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত উর্বর দো-আঁশ মাটি বেছে নিতে হবে। নির্বাচিত স্থানে একটি উপযুক্ত গর্ত তৈরি করতে হয়। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা হবে তিন ফুট করে। গর্তে যেসব জৈব ও অজৈব সার প্রয়োগ করতে হবে তা হলো- গোবর ২০ কেজি, টিএসপি ও এমওপি ২০০ গ্রাম করে এবং জিপসাম ৫০ গ্রাম। এসব সার দেওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন পর গর্তের মাঝখানে সোজা করে চারা রোপণ করতে হয়। গাছ হতে গাছের দূরত্ব ২২-২৫ ফুট। তবে বারোমাসি গাছের দূরত্ব হবে ১৫-১৬ ফুট। গাছ লাগানোর পর চারাটি শক্ত খুঁটির সঙ্গে সামান্য ঢিলা করে বেঁধে দিতে হবে, যেন ঝড়ে হেলে না পড়ে। ছাদে ওপর টবে চাষ করা যায় বারমাসি আমড়া। ফল পাওয়া যায় বছর খানেক পরই। শুধু প্রয়োজন বছরে চারবার সার দেওয়া, সেই সঙ্গে যত্নআত্তি। গাছের বৃদ্ধি এবং কাঙ্ক্ষিত ফল ধারণের জন্য বছরে দু’বার সার দেওয়া দরকার। সার বছরে দু’বার; একবার বর্ষার আগে মার্চ মাসে, আরেকবার বর্ষার পর সেপ্টেম্বর মাসে দিতে হবে। দুপুরবেলায় মাটিতে গাছের ছায়া যতটুকু পড়ে ততটুকু স্থানে ছয় ইঞ্চি গভীর করে ভালোভাবে কুপিয়ে সার দেওয়া উত্তম। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হয়। চারা রোপণের পরের বছর গাছপ্রতি যে পরিমাণ সার দিতে হবে তাহলো-জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১৫০ গ্রাম, এমওপি ১০০ গ্রাম, জিপসাম ৫০ গ্রাম। গাছের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিবছর কিছু পরিমাণ সার বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এভাবে ১০ বছর পর্যন্ত।

লেখক : টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষিবিষয়ক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads