• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জমজম কূপের গোড়ার কথা

শিশুপুত্রের খেলাচ্ছলে পায়ের গোড়ালির আঘাতে আঘাতে পানি আসছে

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

জমজম কূপের গোড়ার কথা

  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০১৮

জমজম কূপ মক্কার পবিত্র কাবা ঘরের পূর্ব পাশে অবস্থিত। মহান আল্লাহতায়ালার মহিমা। তিনি কী না করতে পারেন, তা এসব নিদর্শন না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না। হজের মৌসুমে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ পান করছে, আজ অবধি মক্কা-মদিনা শরিফের জনসাধারণ ও অগণিত তীর্থযাত্রী পান করছেন এবং সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু পানির স্তর একটুও কমছে না, বরং একই রকম আছে। মনে হয়, মহা সমুদ্র থেকে পানি উত্তোলিত হচ্ছে এবং ব্যাপক উত্তোলনের পরও পানির স্তরের পরিবর্তন হচ্ছে না। আল্লাহপাকের কী অসীম রহমতের ধারা! হাজার হাজার বছর আগের ঘটনা। কালের বিবর্তনে কোনো পরিবর্তন নেই। চাহিদা অনুযায়ী পানি উত্তোলিত হচ্ছে; কিন্তু কমতি নেই। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)সহ বিবি হাজেরাকে ঊষর প্রস্তরময় পাহাড়-পর্বতঘেরা জনমানবশূন্য মক্কার এক উপত্যকায় আল্লাহর নির্দেশে নির্বাসনে পাঠান। সেখানে না ছিল মানুষ, না ছিল আহার্যের কোনো ব্যবস্থা, না ছিল পানীয়জলের ব্যবস্থা। একবার ভাবুন তো! কেমন স্বামী আর কেমন স্ত্রী! যে স্ত্রী দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্রসহ সুনিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সেখানে থেকে গেলেন। শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর জীবন সংশয়, দুশ্চিন্তায় অধির হয়ে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পানির অন্বেষায় বের হলেন বিবি হাজেরা। পার্শ্ববর্তী সাফা পাহাড়ে আরোহণ করে পানির জন্য চতুর্দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিলেন। হ্যাঁ, ওই যে অদূরে অন্য একটি পাহাড়ের চূড়ায় চিক চিক করছে পানি! ভালোভাবে দৃষ্টি প্রসারিত করলেন। হ্যাঁ, ঠিক পানিই তো! ওই পাহাড়ের (মারওয়া) উদ্দেশে ছুটলেন। একদিকে পানিকে লক্ষ্য করছেন আর একদিকে নিচে রেখে আসা নিজের শিশুপুত্রের দিকে খেয়াল রাখছেন। দুই পাহাড়ের মধ্যে বিবি হাজেরা, শিশুপুত্র আড়াল হয়ে পড়ছে, তাড়াতাড়ি দৌড়ে পার হলেন পানির জন্য। কিন্তু হায়! পানি কোথায়? প্রখর রৌদ্রতাপে প্রস্তরময় বালুকণায় মরীচিকার সৃষ্টি হয়ে পানির মতো দেখাচ্ছিল। আবার তাকালেন চতুর্দিকে, দেখতে পেলেন ফেলে আসা সাফা পাহাড়েই তো পানি! আবার ফিরলেন সাফা পাহাড়ের দিকে। পানির আশায় এভাবে একবার দু’বার নয়, সাতবার দু’পাহাড়ে ছুটলেন। স্রষ্টার প্রতি কী গভীর আস্থা, পানি মিলবেই। দেখতে পেলেন হজরত ইসমাঈলের পাদদেশে পানি। বিবি হাজেরা তাড়াতাড়ি এসে শিশুপুত্রের কাছে দেখেন, হ্যাঁ, ঠিকই পানি! শিশুপুত্রের খেলাচ্ছলে পায়ের গোড়ালির আঘাতে আঘাতে পানি আসছে। মা হাজেরা তো অবাক। মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন। পানি যাতে গড়িয়ে যেতে না পারে, তাই আশপাশ থেকে প্রস্তর ও বালু এনে চারপাশে বৃত্তাকারে পানি যতটুকু গড়িয়েছে ততটুকু বাঁধ দিয়ে আটকালেন এবং পানিকে জমজম, অর্থাৎ থাম থাম বললেন।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
কলামিস্ট ও সংগঠক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads