তরুণদের পরিচালিত সংগঠন মুভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘উগ্রবাদ নিয়ন্ত্রণে ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশকদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশকরাসহ বেশ কয়েকজন লেখক, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন এক্সিম ব্যাংক অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর এবিএম রাশেদুল হাসান এবং সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল হক তুষার। এতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সহকারী উপকমিশনার আবদুুল মান্নান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ফিচার এডিটর মিরাজ রহমান, গার্ডিয়ান প্রকাশনীর নুর মোহাম্মাদ আবু তাহের, রাহনুমা প্রকাশনীর মাহমুদুল হাসান, মাকতাবাতুত তাকওয়ার শাহাদাত বিন শামসুজ্জামান, রকমারিডটকমের কোঅর্ডিনেটর আবদুল মালেক ও এহসানুল হক, সিয়ান পাবলিকেশন্সের প্রতিনিধি মাসুদ শরীফ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ইসলামী গ্রন্থ ও লেখক নির্বাচন পদ্ধতি, সম্পাদনা নীতিমালা, প্রকাশনায় রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অনুসরণ, উগ্রবাদী বিষয়ের উপস্থিতি যাচাই প্রক্রিয়া, বর্তমান সময়ে প্রকাশকদের সচেতনতা ও দায়বদ্ধতাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। উপস্থিত মূলধারার ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশকরা বলেন, তারা বই নির্বাচনে যথেষ্ট সতর্ক থাকেন। উগ্রবাদী গ্রন্থ তারা প্রকাশ করেন না, এমনকি প্রশ্রয়ও দেন না। বরং যারা ইসলাম সম্পর্কে নিজের মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে বই প্রকাশ করে, তাদের কারণে মূলধারার গ্রন্থ প্রকাশকরা উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেই সঙ্গে জঙ্গি আশ্রম থেকে উদ্ধার করা যে কোনো ধরনের ইসলামী বইকে শুধু মলাট দেখে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়া উগ্রবাদী বই হিসেবে পুলিশের আখ্যা দেওয়ারও সমালোচনা করেন। পাশাপাশি যত্রতত্র গড়ে ওঠা ছাপাখানাগুলোকে নজরদারির আওতায় আনার সুপারিশ করেন।
ভিসি রাশেদুল হাসান বলেন, ইসলামকে জড়িয়ে যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে, তা বন্ধে মূলধারার প্রকাশকদের এগিয়ে আসতে হবে। কেবল আইনকানুন করে উগ্রবাদ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানো এক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিটিটিসির সহকারী উপকমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, যারা সমাজকে অস্থিতিশীল করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। যারা বৈধ, আইনানুগভাবে তাদের প্রকাশনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা যদি একতাবদ্ধ হয়ে উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার বন্ধে ভূমিকা রাখেন, তবে পুলিশের পক্ষেও অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। তিনি আরো বলেন, উগ্রবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রকৃত ধর্মীয় ব্যাখ্যার অভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে মূলধারার ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশক, লেখক, নাগরিক সমাজ সবার একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই।
বায়তুল মোকাররম আদর্শ পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. সিরাজুল হক বলেন, একসময় বাংলাদেশে ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশের পরিমণ্ডলটি ছিল ছোট্ট, এখন বিরাট পরিসর লাভ করেছে। ফলে বিভ্রান্তি বেড়েছে। আমরা সচেতন হলে এই বিভ্রান্তি অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, সঙ্কট আছে সেটা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রকাশকরা সর্বাংশে দায়ী নন। অনেক সময় সাধারণ ইসলামী বইকেও জঙ্গিবাদী বই হিসেবে মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়। ফলে আমাদের প্রকাশনা বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলায়ও শুধু ইসলামী গ্রন্থ প্রকাশক হওয়ার কারণে আমাদের জায়গা দেওয়া হয় না। এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।
সমাপনী বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, অনুবাদ ও প্রকাশনা শিল্পের জন্য বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও সমস্যাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন নীতিমালা দরকার। একই সঙ্গে ইসলামী টেক্সটের ব্যাখ্যায় নানা ধরনের হেরফের থাকায় ও লেখা সম্পাদনায় গুণী আলেমদের সমন্বয়ে কোনো নির্ধারিত অথরিটি না থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছেন অন্যরা। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ইসলামী বই ও উগ্রপন্থি বই নির্বাচন ও পার্থক্য করার কোনো সঠিক পরিমাপক নেই। এ বিষয়গুলো প্রকাশকদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে কাজ করে যাবে মুভ।