• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি সংসদ সদস্য, জাতীয় পার্টি (এরশাদ)

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

এলাকার জনগণের কাছে প্রত্যাশা, নির্লোভ ব্যক্তিকেই তারা নির্বাচিত করবে -সালমা ইসলাম

  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম আবেদা খাতুন। স্বামী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বাবুল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও যমুনা গ্রুপের কর্ণধার। সালমা ইসলাম বাংলাদেশের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৭৪ নং (ঢাকা-১) আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির জাতীয় মহিলা পার্টির সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা-১ আসনের নির্বাচন নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান।

বাংলাদেশের খবর : নির্বাচন তো খুবই কাছাকাছি সময়ে চলে এলো। আপনারা কি এবার এককভাবে নির্বাচন করছেন, নাকি জোটবদ্ধ হয়ে?

সালমা ইসলাম : এ মুহূর্তে আসলে এতটুকু বলা সম্ভব যে, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যা বলবেন বা সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা সেভাবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তিনি যদি আমাদের জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে বলেন আমরা তাই করব। অবশ্য এখন পর্যন্ত তিনি আমাদের এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলেননি। তাই আমরা তার নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

বাংলাদেশের খবর : আপনার রাজনীতিতে আসা নিয়ে কিছু জানতে চাই।

সালমা ইসলাম : আসলে আমার ইচ্ছে ছিল ভালো একজন ডাক্তার হব। তবে ডাক্তার হতে পারিনি। কারণ পড়ালেখা শেষ করার আগেই আমার বিয়ে হয়ে যায়। আসলে আমরা ভাইবোন বেশি ছিলাম বলে মা-বাবার পক্ষে আমাদের সবাইকে খুব বেশি পড়াশোনা করানোর সুযোগ হয়নি। এসএসসিতে পড়ার সময় আমার বিয়ে হয়েছে। তারপরও অবশ্য পড়াশোনা করেছি। এক্ষেত্রে আমার স্বামীই ছিল অনুপ্রেরণা। তার সহযোগিতায় আমি এমএ এলএলবি পাস করেছি। তার সহযোগিতা না পেলে এতসব সম্ভব হতো না। মাতৃকুলে আমার এক মামা, শামসুল হক সাহেব ছিলেন গভর্নর। বঙ্গবন্ধু তাকে মুন্সীগঞ্জ থেকে গভর্নর বানিয়েছিলেন। বলতে গেলে মামাদের দেখেই আমার মধ্যে রাজনীতি করার অনুপ্রেরণা এসেছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। তা ছাড়া আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আপনারা জানেন, আমি একজন ল’ইয়ার। ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে আমি সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছি।

বাংলাদেশের খবর : কেন মনে করছেন জনগণ আপনাকে আবার ভোট দেবে?

সালমা ইসলাম : গত সাড়ে চার বছরে আল্লাহর রহমতে এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করতে পেরেছি এবং সে কারণে আমি জানি এলাকার মানুষ আমাকে আবারো নির্বাচিত করবে।

বাংলাদেশের খবর : বিস্তারিত বলবেন কি?

সালমা ইসলাম : এলাকার বড় সব সড়কই কার্পেটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানকার পদ্মার ভাঙন ঠেকাতে আমি সরকারের কাছ থেকে ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ এনেছি, যেগুলোর কিছু কাজ হয়েছে কিছু এখনো চলছে। তিনটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নেও যথেষ্ট কাজ করেছি। বিশেষ করে জিঞ্জিরা থেকে কেরানীগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ থেকে নবাবগঞ্জ, দোহার ও শ্রীনগর পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কগুলো প্রশস্তকরণের জন্য সরকারের কাছ থেকে ৪৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ নিতে পেরেছি। এই কাজও চলমান রয়েছে। আরো ৩৮টি সড়কের উন্নয়নকাজের বরাদ্দের বিষয়টি প্রসেসিংয়ে আছে। আশা করি শিগগির টেন্ডার হয়ে যাবে। এলাকায় ৯৫টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন নদী ও খালে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। নবাবগঞ্জে দুটি ইউনিয়ন পরিষদে ভূমি অফিস নির্মাণ করা হয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আমার দুই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আধুনিকীকরণ এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করাতে পেরেছি। গ্রাম পর্যায়ে ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলার কাইলাইল ইউনিয়নে ১০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতাল স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। স্থানীয় ৮৫টি স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ৪৩টি স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ টেন্ডার আহ্বান পর্যায়ে রয়েছে। ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ, নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় বিভিন্ন বাঁধ সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য ২১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ করাতে পেরেছি। স্থানীয় পর্যায়ে স্থাপন করা হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র। এই সময়ের মধ্যে কেবল দোহারেই ৯০ হাজার বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০৮টি মসজিদ, ৫২টি কবরস্থান ও ৭৫টি মন্দিরের উন্নয়নে অনুদান দেওয়া হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলায় ফায়ারস্টেশন স্থাপনের কাজও এগিয়ে চলছে। বিশুদ্ধ পানি পেতে ২৫২টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশের খবর : আপনি তো অধিকাংশ সময়ে ঢাকাতেই থাকেন, এলাকায় যান কখন?

সালমা ইসলাম : আমি সব সময় এলাকার খোঁজখবর রাখি। সব ধরনের পার্বণে আমি এলাকায় নগদ অর্থসহ সহযোগিতা করে থাকি। এলাকাবাসীর সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়ার জন্য সপ্তাহে তিন দিন আমি এলাকায় ছুটে আসি।

বাংলাদেশের খবর : নির্বাচনে তো একাধিক প্রার্থী থাকবে। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর প্রতি আপনার চাওয়া কী?

সালমা ইসলাম : প্রার্থী যতই থাকুক, তাতে সমস্যা নেই। কারণ আমি মনে করি জনগণ যাকে তাদের সুখে-দুঃখে পাশে পায় তাকেই ভোট দেবে। আল্লাহতায়ালা আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। তাই এমপি পদ আমার কাছে টাকা কামানোর মাধ্যম নয়। আমি চাই এলাকাবাসীর জন্য কিছু করতে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই আমার আনন্দ। তাই এলাকার জনগণের কাছে আমি এতটুকু প্রত্যাশা করব- যাদের লোভ নেই, সারাক্ষণ মানুষের উন্নতি নিয়ে ভাবে, তেমন মানুষকেই যেন তারা নির্বাচিত করেন। তবে আমার একটিই চাওয়া, জনগণ যেন ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচনে পাস করায়। আমি যেন তাদের সেবা করতে পারি।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমানে ছাত্রদের আন্দোলন বিষয়ে আপনার মতামত কী?

সালমা ইসলাম :  তাদের দাবি যৌক্তিক। সরকারের উচিত হবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাবি মেনে নেওয়া। তা না হলে এটা যে কোথায় গিয়ে শেষ হবে, বলা যায় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads