• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বন্ধুত্বের একাল-সেকাল

বন্ধুত্বের একাল-সেকাল

প্রতীকী ছবি

ফিচার

বন্ধুত্বের একাল-সেকাল

  • মেহেদী হাসান গালিব
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৮

‘বন্ধুত্ব’ শব্দটির সঙ্গে আমাদের সবার পরিচয় ঘটে স্কুলজীবনে। একে অপরের বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে সবসময় পাশে থাকার অঙ্গীকারে শুরু হয় এই পবিত্র সম্পর্কের পথচলা। টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া, বৃষ্টির সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ফুটবল খেলা, স্কুলের সবচেয়ে রাগী স্যারের হোমওয়ার্ক ঠিকমতো করা হয়েছে কি না তার খোঁজ নেওয়া কিংবা একসঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে স্কুলজীবনের বন্ধুত্ব।

এরপর কলেজজীবনে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি পরিচয় ঘটে বন্ধুত্বের নতুন সংজ্ঞার সঙ্গে। এই সময়টায় এসে আমরা উপলব্ধি করতে পারি আমাদের সবার চলাফেরার ধরন কিংবা চিন্তাচেতনা এক নয়। মতের দিক থেকেও রয়েছে ভিন্নতা। ফলস্বরূপ আমরা খুঁজতে শুরু করি একদম নিজের মতো কাউকে। তবে ভিন্নতাও দেখা যায়। ক্লাসের সবচেয়ে মনোযোগী ছেলেটির সঙ্গে ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী ছেলেটির বন্ধুত্ব নতুন কিছু নয়। কিংবা যার মাথা সবসময় তেলে ছপছপ করে, তার সঙ্গেও কীভাবে যেন বন্ধুত্ব হয়ে যায় ক্লাসের সবচেয়ে উশকোখুশকো ছেলেটির। বন্ধুত্বের বিশেষত্বটা ঠিক এখানেই। এটি গণিতের মতো কোনো নিয়ম মেনে চলে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় যুক্ত হয় এক নতুন মাত্রা। বন্ধুর তালিকায় যেমন যুক্ত হয় অনেক নতুন বন্ধু, তেমনি বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় যুক্ত হয় নির্ভরশীলতা ও দায়িত্বশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। আর এই নির্ভরশীলতা থেকেই তৈরি হয় একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মানসিকতা। বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তের স্মৃতিই একসময় হয়ে ওঠে আমাদের কাঠখোট্টা জীবনের হাসির রসদ।

তবে ছোটবেলার সেই বন্ধুত্বের সঙ্গে এখনকার বন্ধুত্বে লক্ষ করা যায় এক বিশাল ফারাক। উদাহরণ হিসেবে কয়েক দিন আগের একটি ঘটনাই উল্লেখ করা যায়। ক্লাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফিরছিলাম। পথে এক চায়ের দোকানে তাকাতেই লক্ষ করলাম দোকানের ভেতরে গোল হয়ে বসে আছে কয়েক শিক্ষার্থী। সবাই ব্যস্ত মুঠোফোনে। কারো সঙ্গে কোনো কথা নেই। এটি শুধু একটি চায়ের দোকানের দৃশ্য নয়, খেলার মাঠ, রেস্টুরেন্ট, আড্ডা সবখানেই এখন একই চিত্র। ছোটবেলায় বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলাম প্রযুক্তি আমাদের পুরো পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। কিন্তু একইসঙ্গে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই প্রযুক্তি-ই আবার আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষদের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছে এক বিশাল দূরত্ব।

তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে আমরা যেন প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হই। প্রযুক্তি যেন আমাদের বন্ধুদের কাছাকাছি রাখার পরিবর্তে আরো দূরে ঠেলে না দেয়। তবেই আমরা ফিরে পাব পুরনো দিনে ফেলে আসা সেই বন্ধুত্বের আবেদন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বের সংজ্ঞায় অনেক পরিবর্তন এলেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসে না বন্ধুদের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা ও অনুভূতিতে। পরিবারের বাইরে তারা যেন আমাদের আরেকটি পরিবার, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। বন্ধুত্বের এই পবিত্র সম্পর্ক বেঁচে থাক শৈশব থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। বেঁচে থাক আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads