• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জিলহজ মাসের আমলসমূহ

জিলহজ মাসের আমলসমূহের মধ্যে প্রথমে রয়েছে রোজা

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

জিলহজ মাসের আমলসমূহ

  • প্রকাশিত ১০ আগস্ট ২০১৮

এসএম আরিফুল কাদের

জিলহজ আরবি বারো মাসের শেষ মাস। যা মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতের মাস। আরবি বছরের বারো মাসের মধ্যে ‘নিষিদ্ধ মাস’ মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ। রসুল (সা.)-এর জন্মের পূর্বে এ চার মাসকে ‘নিষিদ্ধ মাস’ মানা হতো। তবে কিছু সময় সুবিধা অনুযায়ী এ মাসগুলোতে পরিবর্তন আনা হতো। এটা ছিল একান্তই গোষ্ঠী প্রধানদের ইচ্ছার বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দেওয়ার নামে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার প্রেরিত রসুল (সা)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পরবর্তী সময় এ মাসগুলোকে আলাদা গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে এ নামকরণকে মহিমান্বিত করা হয়। তাই মহিমান্বিত জিলহজকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন এ মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় আমল করা। যার ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কালামেপাকে এরশাদ করেছেন" ‘যাতে তারা কল্যাণকর স্থান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময়।’ (সুরা হজ : ২৮)। ইমাম বোখারি (র.) বলেন, হজরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ’ দ্বারা জিলহজের দশ দিনই উদ্দেশ্য। অনুরূপভাবে হজরত ইবনে ওমর (রা.)  আতা (র.), মুজাহিদ (র.), ইকরামা (র.), কাতাদাহ (র.), ইমাম নাখায়ী (র.), ইমাম আবু হানিফা (র.), ইমাম শাফেয়ী (র.), ইমাম আহমদ (র.)সহ অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত, সুনির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা জিলহজের দশ দিনই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসীর ৩ : ২৮৯)।

জিলহজ মাসের আমলসমূহের মধ্যে প্রথমে রয়েছে রোজা। এই দিনগুলোতে রোজা পালন করা সুন্নাত। বিশেষ করে যে ব্যক্তি হজে যায়নি তার জন্য আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৯ তারিখ রোজা রাখা সুন্নত। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত কাতাদাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেছেন, আরাফার দিবসে রোজা পেছনের এবং সামনের এক বছরের গোনাহ মোচন করে দেয়।’ (সহিহ মুসলিম, আহমদ, বায়হাকি)। তবে যিনি হজ করতে গিয়ে আরাফার মাঠে অবস্থান করছেন, তার জন্য রোজা রাখা বৈধ নয়। জিলহজ মাসের আবশ্যিক আমল হলো এ মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ওপর ওয়াজিব। পুরুষের জন্য আওয়াজ করে আর মহিলাদের জন্য নীরবে পাঠ করতে হবে। (ফাতওয়া শামী ৩ : ৬১)। হাদিসেও এর প্রমাণ রয়েছে" হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) ৯ জিলহজের ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (সুনানে বায়হাকি কুবরা : ৬০৭১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৫৬৮১)।

জিলহজে বেশি বেশি জিকির ও আল্লাহর গুণকীর্তন করা উচিত। কেননা, হাদিস শরিফে এসেছে" ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট এ দিনের (জিলহজের প্রথম দশক) তুলনায় কোনো দিনের কোনো আমল অধিক প্রিয় নয়। সুতরাং, তাতে তোমরা বেশি করে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) পাঠ কর। (তাবরানি ফীল মুজামিল কাবীর)

প্রত্যেক মুমিন বান্দা-বান্দির উচিত সবসময় নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা যা খারাপ কাজ করতে চায় তা থেকে দূরে থাকা। কিন্তু জিলহজ মাস এলে বিশেষভাবে ওই আমলে গুরুত্ব দেওয়া। সেজন্যই সাঈদ ইবনে জুবায়ের (র.)-এর অভ্যাস ছিল যখন জিলহজ মাসের ১ম দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা (নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ) করতেন। (দারামি : ২৫৬৪)

সব কোরবানি দাতার জন্য জিলহজের চাঁদ ওঠা থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা মুস্তাহাব। হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, তারা যেন এই ১০ দিন চুল ও নখ না কাটে। (সহিহ মুসলিম ও সুনানে ইবনে মাজাহ)। সর্বোপরি পবিত্র জিলহজ মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সচ্ছল (ছাহেবে নিসাব) ব্যক্তির জন্য কোরবানি করা। ১০, ১১ এবং ১২ জিলহজের যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। প্রত্যেক ছাহেবে নিসাব পুরুষ-মহিলাদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। (ফাতাওয়া শামী ৯ : ৪৫৩, ৪৫৭; ফাতাওয়া আলমগীরী ৫ : ২৯২; সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৬)

লেখক : আলেম ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads