• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাব

নাটোরে প্রাণ আর এফ এলের কারখানায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত কর্মীরা

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাব

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

কৃষিপ্রধান হলেও বাংলাদেশ কৃষি ও খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াজাতকরণে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। দেশে প্রায় আড়াইশ’ মাঝারি আকারের খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেখানে রয়েছে দক্ষ জনশক্তি ও উন্নত প্রযুক্তির অভাব। এতে দেশে নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, খাদ্যশস্যের এ ধরনের অপচয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি, তেমনি খাদ্য অধিকারকেও বঞ্চিত করছে। সার্বিকভাবে পুষ্টি নিরাপত্তাকে করছে বাধাগ্রস্ত।

ফলে এখন খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। শস্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সব প্রযুক্তি দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিশ্বে ক্রমবর্ধমান প্রায় ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে একটি অন্যতম অংশীদার।

দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের মধ্যে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কী পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হচ্ছে, তার বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যানের উপাত্তে ধারণা করা সম্ভব। সম্প্রতি ক্রিশ্চিয়ান এইডের সহায়তায় খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘খাদ্যের অপচয় রোধে রাষ্ট্রের ভূমিকা ও খাদ্য অধিকার’ শীর্ষক সেমিনারে এ ধরনের তথ্য জানানো হয়। সেখানে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদিত মোট শস্যের পোস্ট হারভেস্ট লস ১৩ শতাংশ। ক্ষতি হওয়া এসব শস্যের আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এ ক্ষতি দেশের মোট বাজেটের প্রায় ১০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রায় ৩০ শতাংশ।

তবে দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ হচ্ছে না এমনটা নয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত ২৪৬টি খাদ্য উৎপাদনকারী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ছোট। মাঝারি আকারের কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোতে দক্ষ জনবল এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। এ দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে খাদ্যশস্যের ঘাটতি পূরণে। 

উৎপাদন বাড়ছে দ্রুত : বর্তমানে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। আলু উৎপাদনে বিশ্বে নবম এবং এশিয়ায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া মিঠা পানির মাছ ও ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে আছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বছরে সবজি উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টন। প্রতিবছর তা ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। শাক-সবজির মতো দ্রুত বাড়ছে ফলের উৎপাদনও।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ছয় লাখ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ টনের বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছে প্রায় এক কোটি ২১ লাখ টন।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য তৈরিতে আগ্রহ কম : দেশে উৎপাদন বাড়ায় এখন সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায়। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত আম ও আনারস ছাড়া অন্যান্য ফলের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুত তেমনভাবে সম্ভব হয়নি। প্রাণ, ইগলু, ড্যানিশ ও আকিজ আম থেকে ফ্রুট ড্রিংকস তৈরি করে অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ও সেই সঙ্গে রফতানি করছে। আর শেফার্ড গ্রুপের তাইওয়ান ফুড প্রসেসিং কোম্পানি আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণ করছে, যার পুরোটাই রফতানি হচ্ছে। 

তবে দেশে কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচুর উৎপাদন ক্রমাগত বাড়লেও এসব প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে ২ শতাংশেরও কম। এসব ফল থেকে নতুন নতুন প্রক্রিয়াজাত করা খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহ কম উদ্যোক্তাদের।

ফল প্রক্রিয়াজাতে পাইলট প্রকল্প নিয়েছে সরকার : এদিকে ফল প্রক্রিয়াজাতের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ের তত্ত্বাবধানে রাঙামাটির নানিয়ার চরে এ প্রকল্পটির কাজ চলছে। যদিও এ কাজে দুটি প্রকল্প নিতে চেয়েছিল অধিদফতর। কিন্তু পরে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এর স্থাপনা নির্মাণ ও মেশিনপত্র ক্রয় চলছে। এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলে সেখানে পেঁপে, কলা, আনারস, আম, কাঁঠাল এবং সমজাতীয় যে কোনো ফলের চিপস বানানো হবে। প্রতিদিন সেখান থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ২০০ কেজি চিপস উৎপাদিত হবে, যা দেশের বাজারের পাশাপাশি রফতানি করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।

গতি নেই রফতানিতে : এদিকে দেশ থেকে খাদ্যপণ্য রফতানিও মিশ্র অবস্থায় রয়েছে। সর্বশেষ গত অর্থবছর (২০১৭-১৮) কৃষিপণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ২১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। তবে এ অর্থ সার্বিক রফতানির মাত্র দেড় শতাংশ। এর মধ্যে প্রতি বছর ক্রমাগত কমছে সবজি রফতানি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শাকসবজি রফতানি কমেছে তিন দশমিক ৭৬ শতাংশ। কিন্তু শুকনো খাদ্য রফতানি বেড়েছে ৮৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, মানের বিষয়ে ইউরোপে কড়াকড়ি আরোপে রফতানি কমে গেছে তিন বছর আগেই। এখন আবার কিছু পণ্য যাচ্ছে। তবে তা আগের তুলনায় মাত্র এক-চতুর্থাংশ।

তিনি বলেন, এখন আর যত্রতত্র সবজি উৎপাদন করে ইউরোপের বাজার ধরা সম্ভব নয়। এ জন্য রফতানি পণ্য আলাদা করে উৎপাদন করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ জন্য আলাদা ইপিজেড করছে। এ ব্যাপারে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads