• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
কোরবানির ঈদে মাংস খান সাবধানে

স্থূল বা রুগ্ণ মানুষ এ জন্যই জীবনের স্বাদ-আহ্লাদ ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন না

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

কোরবানির ঈদে মাংস খান সাবধানে

  • প্রকাশিত ১৬ আগস্ট ২০১৮

ডা. ফারহানা বিন্তে ফুলজার

আসছে ২২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা। সবাইকে জানাচ্ছি ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মানেই খুশি, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া। কোরবানি ঈদে খাওয়াটা একটু বেশিই হয়, বিশেষ করে মাংস। কেননা এই ঈদটাই পশু কোরবানির। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয় গরু আর ছাগল। গরুর মাংস এমনিতেই খুব মজার। ঈদের সময় যখন সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া হয়, কোরবানির গরুর মাংস আরো বেশি মজার। খাওয়ার সময় আর হিসাব থাকে না। অনেকে এও বলেন, কোরবানির মাংস নাকি বেশি খেলেও কিছু হয় না। আসলেই কি তা-ই? বিজ্ঞান কী বলে? গরুর কিংবা খাসির মাংস খেলে সঙ্গে সঙ্গে কিছু হয় না। যা হয় তা খুব আস্তে আস্তে। বয়স বাড়তে থাকলে তা আরো ক্ষতিকর রূপ নেয়। গরুর মাংস, খাসির মাংস, যেকোনো লাল মাংস, অতিরিক্ত তেল-চর্বি খেলে যা হয় তা হলো আমাদের শরীরে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের শিরা ও ধমনির মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়। অতিরিক্ত চর্বির কারণে শিরার মধ্যে চর্বি জমে যায়। তখন শরীরে কোলেস্টেরলের লেবেল স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত হয়ে যায়। অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের জন্য যেসব রোগ হতে পারে, সেগুলো হলো-

* উচ্চ রক্তচাপ

* ডায়াবেটিস

* করোনারি আর্টারি ডিজিস/ হার্ট অ্যাটাক

* স্ট্রোক

* কিডনি ডিজিস

* হার্ট এবং ব্রেন ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত চলাচল কমে যায়, যেমন হাত-পা।

রক্তনালীর মধ্যে যখন অতিরিক্ত চর্বি জমে, তখন শরীরের রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং রক্তের গতি কমে যায়। যখন চর্বির পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোকের মতো রোগ। প্রাথমিক লক্ষণে একেবারে মারা না গেলেও মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কাজে-কর্মে চলে আসতে পারে অলসতা। স্থূল বা রুগ্ণ মানুষ এ জন্যই জীবনের স্বাদ-আহ্লাদ ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেন না। একটা সময় তারা খুব খান, তারপর বাকিজীবনে আর খেতে পারেন না। জীবন যায় ওষুধ খেয়ে খেয়ে, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে এ তথ্য পাওয়া গেছে যে, বিশ্বে বর্তমানে যত মানুষ না খেয়ে মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় খেয়ে। আমাদের চারপাশে ফার্স্টফুডের দোকান, আর সেখানে শুধু জাংকফুড। বাড়িতেও ভারী খাবারের আয়োজন বাড়ছে দিন দিন। ক’দিন পরপরই উৎসব, মেহমান তো আসছেই। মেহমান আসা মানেই পোলাও-মাংস। তার সঙ্গে এই ঈদে মাংস খাওয়া চলবে একটানা সপ্তাহ দুয়েক। না, একটানা খাবেন না। একটু থেমে থেমে খান। আর যতটা খাবেন ততটা হাঁটবেন, পরিশ্রম করবেন। শরীরের ঘাম ঝরাবেন। ক্যালরি পোড়াবেন। তাহলেই খুব বেশি অসুবিধা নেই। বাচ্চাদের ও বয়স্ক মানুষদের সাবধানে রাখবেন। যাদের হার্ট বা ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, অ্যালার্জি আছে, তাদের গরুর মাংস একেবারেই না খাওয়া ভালো। কোরবানির ঈদ যখন, দুয়েক টুকরো গরম পানি দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে, চর্বিটা ফেলে দিয়ে আলাদা রান্না করে তাদের খাওয়ানো যেতে পারে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। এ সময় অতিরিক্ত মাংস খেয়ে অনেক সুস্থ মানুষেরই ডায়রিয়া হয়ে যায়। ঘরে খাবার স্যালাইন রাখবেন। প্রচুর পানি খাবেন। গরম থেকে বাঁচার জন্য ঘন ঘন শরবত খাবেন। অবশ্যই চারপাশ ভালো করে পরিষ্কার রাখবেন। এটা বাড়ির গৃহিণীদের প্রাথমিক দায়িত্ব। রান্নাবান্না, মেহমান তদারকি, বাচ্চাকাচ্চা সামলানো, সবাইকে খাওয়ানো, চারদিক দেখতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছুই তার নজর এড়িয়ে যায়। কোথাও হাড্ডি বা মাংসের কণা পড়ে থাকলে সেখানে পিঁপড়া আসতে পারে, মাছি আসতে পারে। তারাও রোগ ছড়াতে পারে। উৎসব যেন আমাদের রোগের কারণ না হয়, সেদিকে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবে। ঈদ মোবারক।

লেখক : মেডিকেল অফিসার, ল্যাবএইড হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads