• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কলেজের সেইসব দিনগুলোতে

অনেক স্বপ্ন নিয়ে পা রেখেছিলাম কলেজ আঙ্গিনায়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

কলেজের সেইসব দিনগুলোতে

  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৮

সাগর মল্লিক

জীবনের ছোট্ট গণ্ডি পেরিয়ে তখন বিশালত্বের স্বাদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে পা রেখেছিলাম কলেজ আঙ্গিনায়। মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। কত অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই কলেজের আঙিনা জুড়ে, তা লিখলে একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে হয়ত!

সাদা-কালো ড্রেস ছেড়ে প্রথম রঙিন পোশাকে ক্লাস করা। নতুন পরিবেশ, অজানা পরিস্থিতি নিয়ে কলেজের প্রথম দিন। শেষ বেঞ্চের শেষ কোনায় বসা। সেই আমার প্রথম কলেজ জীবনের শুরু। সুখ, দুঃখ, হাসি, তামাশা, তিক্ততা নানা কিছুর সমন্বয়ে গড়া কলেজ জীবন।

কলেজের প্রথম দিনটিতে ক্লাসবিহীন স্যারদের দীর্ঘ বক্তৃতা শেষে সবাইকে লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা দেওয়া হলো। সেই গোলাপের শেষ পরিণতি নিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করেছি। কিন্তু সব ক্লাসের একজনই সে ফুল পায়নি। সেই ভাগ্যবান বালক হলাম আমি!

দিনটি কেমন যাবে সে তো ভোরের সূর্য দেখে বোঝা যায়। কিন্তু ভোরের কালো মেঘ সরিয়ে সকালের সূর্য উঁকি দিতে আরম্ভ করল। আমিও নিয়মিত কলেজে যাওয়া শুরু করলাম। দেড়শ’ জনের ক্লাসে সব থেকে লম্বা আর নিয়মিত স্যারদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারায় বন্ধু জুটতে দেরি হলো না।

ভদ্র, শান্তশিষ্ট থেকে দুষ্ট হয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগল না। বন্ধুদের সঙ্গে নির্দিষ্ট বেঞ্চ, ক্লাসে স্যারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে চিরকুট চালাচালি, ক্লাসের পেছন থেকে চিল্লানি। ভদ্র হলেও পাশের বেঞ্চের মেয়েদের দিকে যে নজর যেত না- সেটা বললেও ভুল হবে। ক্লাস ফাঁকিসহ আরো কত কী!

বিপ্লব স্যারের ইংরেজি ক্লাস সবাই আগ্রহ নিয়ে শুরু করলেও ফাঁকা ক্লাসে শেষ হতো সময়। কিন্তু মোক্তার স্যারের ক্লাসটা কেউ মিস করতে চাইতাম না। শুরু থেকে শেষ অবধি ভর্তিই থাকত তার ক্লাস।

নুরুজ্জামান স্যারের বায়োলজি ক্লাসটি মোটেও ভাল্লাগত না। স্যার ক্লাস নিতে এলে বলতাম ছবি আঁকানো শেখাতে। কারণ স্যার চিত্র আঁকতে অতটা পারত না। স্যার চিত্র আঁকাতে ব্যস্ত আর আমরা টেবিলে কলম খেলায়। স্যারের ছবি আঁকতে আঁকতেই ক্লাসের সময় শেষ।

ক্লাসের পেছনে বসে রসায়ন স্যারকে কাজল পাগল আর অঙ্ক স্যারকে বাবু বাবু বলে চেঁচানো নতুন কিছু নয়।

ব্যবহারিক খাতা নিয়ে সব থেকে বেশি কাহিনী। বরাবরের মতো ফাঁকিবাজ ছাত্র আমি। ফলে ক্লাস করা হয়নি। কোনো রকমে কারো খাতা দেখে ব্যবহারিক লিখলাম। এবার আসল চ্যালেঞ্জ খাতা স্বাক্ষর করানো। দল বেঁধে স্যারদের কাছে গেলাম। আমাদের খাতা স্বাক্ষর হলো না। তাহলে উপায়! এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন আমাদের দলের আইডিয়াবাজ বন্ধুটি। এক দিনের কঠিন গবেষণা শেষে আবিষ্কার হলো স্যারদের স্বাক্ষরের কত সুন্দরভাবে নকল করা যায়। নিজেরাই তখন স্যার হয়ে খাতা স্বাক্ষর করলাম!

সবকিছুর মধ্যে সম্পর্ককে দূর থেকে দেখতেই আমার বেশি ভালো লাগে। খুব কাছে যেতে পারি না কারো। তাই বন্ধু, ক্লাস এত কিছুর মধ্যেও সবার অপ্রিয় কবিতার বকবকানি আর লাইব্রেরি ছিল আমার সব থেকে প্রিয় জায়গা। ল্যাবের তেলাপোকা কিংবা রসায়নের জৈবযৌগ আমাকে খুব বেশি টানতে পারেনি। খেলাধুলা, ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছু ঠিকঠাক হলেও ব্যাক বেঞ্চে হেলান দিয়ে আকাশ দেখার নেশাটা বেড়ে চলতে লাগল।

কলেজ ক্যাম্পাস, বন্ধুত্ব, পড়াশোনা, টিউশনি, ক্লাস ফাঁকি, খেলা সব কিছু নিয়ম করে চলতে থাকল। আর চলতে থাকে কলেজ বন্ধুরা মিলে আমাদের টুকরো টুকরো কাজগুলো।

এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে ঠিক করলাম ঈদে শহরের সব ভিক্ষুককে খাওয়াব। ছোটদের শিক্ষা পরামর্শ ক্যাম্পেইনসহ নানা কাজ। সব থেকে উল্লেখযোগ্য ছিল আমাদের সমবায় লাইব্রেরি।

প্রথমে কয়েকজন মিলে সবার বই একত্রিত করলাম। একটা ঘরে কিছু তাক জোগাড় করে বই রাখা হলো। বইয়ের তালিকা তৈরি হলো। একটা খাতায় সদস্যদের নাম, মাসিক ১০ টাকা চাঁদা। আর কে কখন কী বই নেয় এবং বই নেওয়া ও জমার তারিখ।

চলতে থাকল আমাদের কাজগুলো, আমাদের লাইব্রেরি। চলতে থাকল সময় আর বন্ধুদের সঙ্গে বোনা সেই স্বপ্নগুলো।

জীবনের প্রয়োজনে ছুটে চলা জীবনে রয়ে যায় শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর মান্নাদের সেই গান

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই

কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই,

আজ আর নেই....

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads