• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
পশুর খুঁটিনাটি বিশেষত্ব

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

সনাতন পাঠ

পশুর খুঁটিনাটি বিশেষত্ব

কাজী নজরুল ইসলাম

  • প্রকাশিত ২৫ আগস্ট ২০১৮

ঘোড়ার ভুরু হয় না। (তাই বলে কই তাকে তো বিশ্রী দেখায় না)। রোমন্থনকারী জন্তু মাত্রেরই ক্ষুর বিভক্ত। (কিন্তু সাহিত্য-রোমন্থনকারী প্রাণীগুলোর আদতে ক্ষুর হয় না। —এটা বুঝি ব্যতিক্রম)।

তিমি মৎস্যের দাঁত হয় না। তবে হাড়ের মতো এক রকম পাতলা স্থিতিস্থাপক (যা রবারের মতো টানলেই বাড়ে আবার আপনি সংকুচিত হয়) জিনিস তার ফোকলা মুখের উপর-চোয়ালে সমান্তরাল হয়ে লেগে থাকে। তাই দিয়ে এ মহাপ্রভুর দাঁতের কাজ চলে।

কচ্ছপ বা কাছিমের আবার দাঁত বিলকুল নদারদ্্ (ছেলেবেলায় কিন্তু শুনেছি যে কাছিমে আর ব্যাঙে একবার কামড়ে ধরলে মেঘ না ডাকলে ছাড়ে না)।

শশক বা খরগোশের চোখ কখনো বন্ধ হয় না, কেননা বেচারিদের চোখের পাতাই নেই। মেম সাহেবদের মুখের বোরকার চেয়েও পাতলা একরকম চামড়ার পর্দা ঘুমানোর সময় তাদের চোখের ওপর ঘনিয়ে আসে। (মানুষের যদি ওরকম হতো, তাহলে তো লোকে তাকে ‘চশমখোর’, শালার চোখের পর্দা নেই প্রভৃতি বলত। তাছাড়া চোখের পাতা না থাকলে প্রথমেই তো আমাদের চোখে ঘা হয়ে ফ্যাচকা-চোখো হয়ে যেতাম)।

নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হরিণের নাকি নাকের ছ্যাদা ছাড়া আরো কতগুলো ওইরকম ছ্যাদা আছে। আশ্চর্য বটে!

প্যাঁচার চোখে কোনো গতি বা ভঙ্গি নেই, অর্থাৎ কিনা তাদের ওই ভাটার মতো চোখ দুটির তারা নড়েও না চড়েও না। সদাসর্বদা ডাইনি মাগীর মতো কটমট করে তাকায়।

ভেড়ার আবার উপর-চোয়ালে দাঁত হয় না। (তাহলে দেখা যাচ্ছে যার উপর-চোয়ালের দাঁত ভেঙে যায়, তিনিও ওই ভ্যাঁ-গোত্রের)।

উট তো একাই একটা বিদ্্ঘুটে জানোয়ার, যাকে দূর থেকে আসতে দেখে অনেক সময় একটা সচল দোতলা বাড়ি বলেই মনে হয়। কিন্তু এর চেয়েও ওই কুঁচবগলা’র হত্তম সংস্করণ জীবটির একটা বিশেষ গুণ আছে। সে গুণ আবার পেছনকার পদদ্বয়ে। উষ্ট্র-ঠাকুর তার পেছনের শ্রীচরণ দুটি দিয়ে তার বড় বপুর যে কোনো স্থান ছুঁতে পারেন।

একটি হাতির গর্দানে (স্কন্ধে) মাত্র চল্লিশ হাজার (বাপস!) মাংসপেশি থাকে। সাধে কি আর এ-জন্তুর হাতি নাম রাখা হয়েছে!

কাঁকড়া এগিয়েও যেমন বেগে হাঁটতে পারে, পিছিয়েই তেমনি হাঁটতে পারে। বাহাদুরি আছে এ মস্তকহীন প্রাণীটির।

আপনারা কোনো সর্বদর্শী জানোয়ার দেখেছেন কি? সে হচ্ছে জিরাফ। এই জন্তুপ্রবর চতুর্মুখ না হয়েও আগেও যেমন দেখতে পান, পেছনেও তেমনি দেখতে পান। ভাগ্য আর কাকে বলে!

আরেকটি মজার বিষয় হয়তো আপনারা কেউ লক্ষ্যই করেননি। বৃষ্টি হওয়ার আগে বিড়াল জানতে পারে যে বৃষ্টি আসবে, আর সে তখন হাঁচে। অতএব বিড়ালকে বৃষ্টির দূত বললে কেউ আপত্তি করবেন না বোধহয়।

উত্তর আমেরিকার ময়দানে একরকম লাল খেঁকশিয়ালী আছে। শুনেছি, দুনিয়ার কোনো প্রাণীই নাকি তাদের সঙ্গে দৌড়াতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশি খেঁকিও বোধহয় কম যাবে না। দেব নাকি এই লাল খেঁকির সঙ্গে আমাদের দেশি খেঁকির একদিন ‘ঘোড়-দৌড়’ লাগিয়ে? ৎ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads