• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
চিরপ্রত্যাশিত স্বপ্নগাথা : গৌরবের ৬৬ বছরে পদার্পণ

ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের পরিকল্পনায়

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

চিরপ্রত্যাশিত স্বপ্নগাথা : গৌরবের ৬৬ বছরে পদার্পণ

  • প্রকাশিত ২৭ আগস্ট ২০১৮

আকরাম হোসাইন

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরবঙ্গে শিক্ষার প্রসার ও জ্ঞানের বিস্তার ঘটাতে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দাবি তোলেন শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ্। পরে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। ওই বছরেই ৬ জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরবময় ৬৫টি বছর পেরিয়ে ৬৬ বছরে পদার্পণ করেছে।

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে পদ্মার তীরের বড় কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠিরের ওপর তলায়। সেখান থেকে ১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের সবুজ চত্বরে। অস্ট্রেলিয়ার স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায় এই ক্যাম্পাস পূর্ণতা লাভ করে এবং এক অনাবিল সৌন্দর্যে ভরে ওঠে।

প্রথম ভিসি অধ্যাপক ইতরাত হোসেন জুবেরীকে নিয়ে মাদার বখশ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এই দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের ৬ জুলাই অধ্যাপক ইতরাত হোসেন জুবেরীকে ভিসি নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। পরে রাজশাহী শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে মতিহার থানায় নির্মাণ করা হয় স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো। ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়। ১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৮টি বিভাগ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০০ শিক্ষক, তিন হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় সাড়ে ৩৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে ছাত্রদের ১১টি ও পশ্চিম দিকে ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি সুবিশাল আকারের আবাসিক হল। বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরি। এ ছাড়া রয়েছে দেশের সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘর শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। সাবাস বাংলাদেশ নামে একটি ভাস্কর্য আর রয়েছে গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার।

তা ছাড়া ১৫টি সংগঠন নিয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য সংগঠন যেমন- বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ডিবেটিং ফোরাম (বিএফডিএফ) প্রধান বিতর্ক সংগঠন। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন হলভিত্তিক বিতর্ক ক্লাব। ক্যারিয়ারের জন্য রয়েছে ক্যারিয়ার ক্লাব।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে গবেষণা ও জাতীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক বিজ্ঞানী ও গবেষক রয়েছেন।

গ্রন্থাগার, চিকিৎসাকেন্দ্র আধুনিকায়ন, আবাসিক সঙ্কট নিরসনে ১৭টি হল, জোহা চত্বর, টিএসসিসি পূর্ণাঙ্গসহ নানা কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় অপ্রাপ্তিও রয়েছে অনেক। ছাত্র সংগঠনগুলোর সংঘাতময় রাজনীতিতে বছরের প্রায় দিনই অস্থিরতা লেগে থাকে মতিহারের সবুজ চত্বরে। সংঘাতে ঝরে পড়ে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। তবুও আশাবাদী অভিভাবকরা প্রতিবছরই এ বিদ্যাপীঠে পাঠায় তাদের স্নেহের সন্তানদের। আকাঙ্ক্ষা শুধু স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে দেশ ও জাতির হাল ধরবে তাদের সন্তানরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads