• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মধুপুরের আনারস

এ এলাকা আনারস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

মধুপুরের আনারস

  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০১৮

হাবিবুর রহমান, মধুপুর  

মধুপুর গড়ের লালমাটির উঁচু এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না। তাই এ এলাকা আনারস চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।  কোনো কোনো স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেও আনারস চাষে তেমন ক্ষতি হয় না। গড়ালের মধুপুর এলাকার পিরোজপুর, চাপাইদ, চাঁনপুর, আঙ্গারিয়া, পীরগাছা, মমিনপুর, ধরাটি, মালাইদ, বাঘাডোবা, কালিয়াকুড়ি, শোলাকুড়ি, হরিণধরা, চুনিয়া, কাকড়াগুনি, বেদুরিয়া, জালিচিড়া, জলই, গায়রা, সাধুপাড়া, জলছত্র, মাগন্তিনগর, বেরীবাইদ, জয়নাগাছা, আউশনারা, মহিষমারা, আলোকদিয়া, গারোবাজারসহ ঘাটাইল, ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামে আনারসের চাষ হয়ে থাকে। কার্তিক মাস থেকে জমি প্রস্তুত করে আনারসের চারা লাগানো শুরু হয়। চলে চৈত্র মাস পর্যন্ত। আনারস চাষে খরচ অনেকটা কম। মধুপুরে দুই ধরনের আনারস চাষ হয়ে থাকে। হানিকুইন ও জায়েন্ট কিউ। বৈশাখ মাস থেকে আনারস পাকা শুরু হয়। ভাদ্র মাস পর্যন্ত সিজনাল আনারস থাকে। আশ্বিনা আনারস থাকে দুই মাস। স্বাদের দিক থেকে সিজনালটি বেশি। 

রসালো ফল আনারসের রাজধানী  মধুপুর গড়। অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে গড় এলাকার লালমাটির প্রধান কৃষিপণ্য আনারসের। এক দশক আগেও লালমাটির আনারসের স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল অতুলনীয়। স্বাদে ভরপুর ছিল আনারস।  এখন আনারসের ভরা মৌসুম। চারদিকে আনারসের মৌ মৌ গন্ধ। আনারসকে ঘিরে কৃষকের ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। কাকডাকা ভোর থেকে বাগান থেকে আনারস কেটে সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, ঘোড়ার গাড়িতে বাজারে নিয়ে আসেন কৃষকরা। সকাল থেকেই শুরু হয় বেচাকেনা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বাজার। প্রতিদিনই বসে আনারসের বাজার। মধুপুরের মধ্যে আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার জলছত্র, মোটের বাজার, গারো বাজার। অন্যদিকে ঘাটাইল, ফুলবাড়িয়া, সাগরদীঘিসহ নানা স্থানেও রয়েছে ছোট-বড় বাজার। এসব বাজার থেকে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নাটোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল. খুলনা, মেহেরপুর ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার নানা প্রান্তে আনারস নিয়ে যাওয়া হয়।  

এবার আনারসের দাম অনেকটা কম বলে জানালেন গড় এলাকার কৃষকরা। মধুপুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে জলছত্র আনারস বাজারে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আনারসের দাম কমার কারণ। এ এলাকায় আনারস চাষে এক সময় কোনো সার ব্যবহার করা হতো না। চারা লাগানোর পর প্রাকৃতিকভাবেই ফলন হতো। বিনা সারে বা জৈব সারে উৎপাদিত আনারস ছিল স্বাদে ভরা। যখন বাজারে রাসায়নিক সার বিক্রি শুরু হলো, তখন থেকে কৃষকরা ধান-পাটের  পাশাপাশি আনারসের বাগানে সার ব্যবহার শুরু করেন। স্বাদেও ঘাটতি হয়নি। এক দশক ধরে সারের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির হরমোন ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফলন বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নামে কৃষকরা। ফলের আকার বৃদ্ধি, উজ্জ্বল রঙ, গন্ধ তৈরি, সতেজতা, টাটকাসহ আকারে বড় করতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন তারা। এই প্রতিযোগিতার ফলে আনারসের স্বাদ ও  চাহিদা কমছে। স্থানীয়রা আরো জানান, হরমোন ও কীটনাশক মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সরে না এলে এ ফলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনি হারাবে লালমাটির ঐতিহ্য।  

পিরোজপুর গ্রামের আনারস চাষি মো. হরমোজ আলী জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হরমোন ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হরমোনের কারণে আনারস আকারে বড় দেখা গেলেও স্বাদ আগের চেয়ে কমে যাচ্ছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির অভাবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আনারসের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হরমোনের প্রয়োগবিধি না জানার কারণে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আনারসকেন্দ্রিক জুস কারখানা ও রফতানির দাবি জানান তিনি।  

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, কৃষকের ন্যায্যমূল্যের জন্য আনারস সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ থাকা দরকার। জুস, জেলি, চকোলেট তৈরির কারখানা স্থাপন প্রয়োজন। কীটনাশক ব্যবহারে যে টাকা খরচ হয়, তা না করে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহারের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক দূরত্বে আনারস চাষ করলে কৃষক লাভবান হবেন। আনারস সংরক্ষণ ও রফতানি করতে পারলে কৃষক আনারসের ন্যায্যমূল্য পাবেন। তিনি আরো জানান, এ বছর মধুপুর এলাকায় ৬ হাজার ৫৭১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে জায়েন্টকিউ ৬ হাজার ৩৮১ হেক্টর এবং হানিকুইন ১৯০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৫৯২ টন। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads