• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাচ্চাদের খাওয়ানো নিয়ে যুদ্ধ

সাধারণত কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বাচ্চাদের খাওয়ানো নিয়ে যুদ্ধ

  • প্রকাশিত ৩০ আগস্ট ২০১৮

ডা. মালিহা রহমান

বাচ্চাদের খাওয়ানোটা যেন একটা যুদ্ধ। অনেক সময় তাদের টিভিতে কার্টুন দেখিয়ে খাওয়াতে হয়। গান-কবিতা-ছড়া শুনিয়েও তার মুখে কিছু দেওয়া যায় না। এ নিয়ে মায়ের উৎকণ্ঠার শেষ নেই। সাধারণত কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। হয়তো শিশু তার রুচি ও পরিমাণ অনুযায়ী ঠিকই খাচ্ছে, কিন্তু বাবা-মা তাতে তৃপ্ত হচ্ছেন না। মনে রাখতে হবে, বয়স অনুযায়ী মানসিক ও শারীরিক বিকাশ অন্য বাচ্চাদের মতো হলে শিশুর খাওয়া নিয়ে মা-বাবার দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

শিশুর প্রতি মা-বাবার মনোযোগ কমে গেলেও সে খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। ইদানীং কর্মজীবী মায়ের সংখ্যা অনেক। ব্যস্ততার কারণে তারা হয়তো শিশুকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। মায়েদের ব্যস্ততা শিশুর মনে দাগ কাটে। সে হয়তো শুধু খাবারের সময়টাতেই মাকে কাছে পায়। তাই অবচেতনেই তার মনে ঢুকে যায় যে, খাবার খেতে বেশি সময় নিলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে মায়ের সঙ্গ আরো বেশি পাওয়া যাবে। সে ভাবে, ঠিকমতো না খেলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে তাকে হয়তো বাবা-মা সময় বেশি দেবে। এ কারণেও অনেক সময় শিশুরা খাবারের সময় নানান বায়না ধরে, ঠিকমতো খেতে চায় না।

তবে সবার ক্ষেত্রে এটি সত্যি নয়। কিছু বাচ্চা আছে যারা সত্যি সত্যি খায় না। এদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিটাও ঠিকমতো হয় না। এদের ক্ষেত্রে দেখতে হবে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কিনা বা তার রক্তশূন্যতা আছে কিনা? অনেক সময় বাচ্চার ঘন ঘন ইনফেকশন বা সংক্রমণ হলে খাওয়ার রুচি কমে যায়। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

এর পাশাপাশি শিশুর পেটে কৃমি আছে কিনা তাও দেখতে হবে। কিছু বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া থাকতে পারে, অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা থাকতে পারে। এগুলোও অরুচির কারণ। আমাদের দেশে মূত্রনালির সংক্রমণের কারণেও শিশুদের খাবারে অরুচি হতে পারে। তাই সমস্যা গুরুতর মনে হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শমতো কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা উচিত। এ ছাড়া আরো কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন :

১. শিশুদের সঙ্গে খাওয়ানো নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আচরণগত পরিবর্তন আনুন। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ঘুম থেকে উঠেই খিচুড়ি বা অন্য খাবার না দিয়ে আগে বুকের দুধ দিন। বুকের দুধ খাওয়ানোর দুই-তিন ঘণ্টা পর অন্য খাবার দিন। খাবার নিয়ে জোর করবেন না। শিশুকে নিজের হাতে খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশনে সম্ভব হলে তাকে সঙ্গে রাখুন। তার পছন্দমতো মাছ, মাংস বা সবজি কিনুন। এতে খাবারের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়বে।

২. শিশুকে যখন-তখন চিপস, জুস, চকোলেট বা এ ধরনের খাবার দেওয়া যাবে না, এতে খিদে নষ্ট হয়।

৩. আহারের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে শিশুকে অন্যান্য খাবার বেশি দেবেন না। যেমন : ভাত খাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে দুধ বা নাশতা দেবেন না। শিশুর স্কুল যদি ১২টায় ছুটি হয়, তবে ফিরে এসে তেমন কোনো নাশতা না দেওয়াই উচিত। এক্ষেত্রে খিদে থাকা অবস্থাতেই দুপুরের খাবার দিয়ে দেওয়া যায়।

৪. শিশুকে এক খাবার প্রতিদিন দেবেন না। রোজ ডিম সেদ্ধ না দিয়ে ডিমের তৈরি নানা জিনিস যেমন, পুডিং, জর্দা ইত্যাদি দিতে পারেন। দুধের ক্ষেত্রেও তাই। পুডিং, সেমাই বা পায়েসে প্রচুর দুধ থাকে, সেটাই খেতে দিন। ফল খেতে না চাইলে কাস্টার্ড করে দিন।

৫. অনেক সময় খাবার পরিবেশনে ভিন্নতা আনলেও কাজ হয়। রঙিন পাত্রে খাবার পরিবেশন করুন। খাবার টেবিলকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলুন।

৬. শিশু যদি খুব অন্যমনস্ক থাকে, তাহলে খিদে নষ্ট হয়ে যায়। ধরুন, আপনার শিশুর বন্ধুরা সবাই বাইরে খেলাধুলা করছে আপনি জোর করে বাড়ির মধ্যে রেখে তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন, তাহলে কিন্তু আপনার শিশুটি একেবারেই খেতে চাইবে না। বরং টিভি দেখা কমিয়ে শিশুর জন্য পর্যাপ্ত খেলার ব্যবস্থা করুন, এতে খিদে বাড়বে।

৭. সচরাচর এটাই দেখা গেছে, শিশু যদি একা খায় তাহলে সে খুব বেশি খেতে চায় না। কিন্তু যদি সপরিবারে বসে একসঙ্গে খায়, তাহলে আপনার শিশুটিও খেতে উৎসাহ পাবে। তাই দিনে লাঞ্চ বা ডিনার সবাই একসঙ্গে করুন।

৮. এসব কিছুর পাশাপাশি বাচ্চা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না সেদিকেও নজর রাখতে হবে। যদি দেখা যায়, বাচ্চা সমবয়সীদের মতোই বাড়ছে এবং তার ওজনও ঠিক আছে তাহলে বুঝতে হবে তার শরীরে পুষ্টির কোনো ঘাটতি নেই। অর্থাৎ আপনার শিশুর খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক আছে।

বাচ্চা যে নিয়মিত খায় না তা বুঝবেন তার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখে, তার ওজন কমে যাওয়া দেখে। তার চঞ্চলতা কমে গেলে, শারীরিক দুর্বলতার লক্ষণ দেখলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখাবেন। গরম, সাময়িক পরিবেশ পরিবর্তন এসব কারণে বাচ্চা দুয়েক দিন খাবারের প্রতি অনীহা দেখাতে পারে। তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে যেকোনো অবস্থাতেই বাচ্চাকে প্রচুর পানি খাওয়াবেন।

লেখক : ইন্টার্নি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads