• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
‘পাগল বিজ্ঞানী’ মাইক

মনপুরা দ্বীপে ডাকবাংলোর ডাইনিংয়ে মন দিয়ে খাচ্ছেন মাইক (সবার বাঁয়ে)। নিশিদলের অন্য তিন সদস্য বাঁ থেকে তাপস ভূঁইয়া, সাইমা আকন্দ ও ক্লাউডিয়া লোপেজ (ভেনিজুয়েলা)

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

‘পাগল বিজ্ঞানী’ মাইক

  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রথম দেখায় মনে হতে পারে তিনি একজন বিজ্ঞানী, পাগল বিজ্ঞানী। দিন-দুনিয়ার খোঁজখবর খুব একটা রাখেন না। বাস্তবেও তা-ই। তবে আদতে তিনি বিজ্ঞানী নন। পাহাড়ি জঙ্গল থেকে মাশরুম কুড়িয়ে বিক্রি করেন। এই পেশাতেই আছেন মাইকেল হানসেল। তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলেছেন শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ

বিজ্ঞানী না হলেও মাইকেল হানসেল বিজ্ঞানীদের চাইতেও গম্ভীর। সহজে হাসেন না, কাঁদেন না। লম্বাটে শরীর নিয়ে রাস্তায় সোজা হাঁটেন। একদম কথা বলেন না বললেই চলে। সারাক্ষণ মন যেন কোথায় পড়ে থাকে। কিছু জিজ্ঞেস করলে মিনিটখানেক সময় নিয়ে সম্বিৎ ফিরে পান। এরপর বুনো চোখে তাকিয়ে থাকেন।

বলি, মাইকেলের ঢাকা শহর কেমন লেগেছে?

অপেক্ষার পর খসখসে, কিন্তু হালকা আওয়াজে একটা জবাব পাওয়া গেল- ‘ঢাকা, খারাপ না।’ সরাসরি ‘খারাপ’ বলে দিলেও করার কিছু ছিল না। একরোখা মাইকেল একবার যা বলেন, সেটা থেকে নড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একটু বুনো স্বভাবেরই বলা যায়। মোবাইল ব্যবহার করেন না, ইন্টারনেটের ধার ধারেন না। ঢাকার দিনগুলোতে ঘরের ভেতর তার সঙ্গী ছিল বই। আর বাইরেও হাতে বই এবং কাঁধে একটা মশক ঝুলিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে তাকে।

মাইক থাকেন কানাডার পাহাড়ি জঙ্গলে। ক্যালগেরি শহর থেকে দূরে, অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের সীমান্তের দিকে। ওই এলাকাজুড়ে পাথুরে পাহাড়। পাহাড়ের পিঠে বন। এই বনেই থাকেন বছরের বেশিরভাগ সময়। বন থেকে মাশরুম কুড়ান, ওগুলো জমা করেন এবং কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। কানাডার ওই এলাকার মাশরুমগুলো খাওয়ার জন্য বিখ্যাত। বাইরের দুনিয়ায়ও চাহিদা খুব। জঙ্গল থেকে মাশরুম কুড়িয়ে জঙ্গলেই থাকেন। ওগুলো বিক্রি করে কিছু পয়সা জমান। আর এই জমানো পয়সা খরচ করতেই বেরিয়ে যান বিশ্বভ্রমণে।

বাংলাদেশে এসে প্রথম দিকে ঢাকার অলিতে-গলিতে তাকে ঘুরতে দেখা গেছে। এরপর হুট করেই উধাও। ফিরে আসার পর জানা গেছে গিয়েছিলেন শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়। পরে খোঁজ পেলেন ভ্রমণ সংগঠন নিশিদলের। এই দলের সঙ্গে রাত জাগতে রাশভারী এই লোকটি লঞ্চে করে চলে গেলেন ভোলার মনপুরা দ্বীপে। সেখানে গিয়ে সঙ্গী করলেন একটি লাঠি। যেখানেই যান, লাঠিটি যায় তার আগে। মনপুরার হরিণবন দেখে কিছুটা চঞ্চল হয়ে উঠলেন তিনি। হুটহাট ঢুকে যেতেন জঙ্গলে। একবার লাঠির আগায় করে ছোট্ট একটি প্রাণী এনে সঙ্গীদের চোখের ডগায় তুলে ধরলেন। এরপর একটু হাসলেন। ‘এই প্রথম মাইকেলকে হাসতে দেখলাম।’ জানালেন নিশিদলের সঙ্গে থাকা সাইমা আকন্দ। এর পরও তাকে হাসতে দেখা গেছে, ফিরে আসার দিন। সাইমা বললেন, ‘মনপুরায় লেগুনায় করে দলের সবাই ঘুরছিলাম। মাইকেল তখন লেগুনার বাইরের দিকে পা-দানিতে পা রেখে হাতলে ঝুলছিলেন। বাচ্চারা তাকে দেখে লেগুনার পিছু নিয়েছিল। ইরানের আমান আর চীনের ইনগ্রু দম্পতি তাদের ঝুলি থেকে অনেকগুলো পেন্সিল, স্কেল, আয়না ও খেলনা বের করে বাচ্চাদের দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ঝাঁপি থেকে ছোঁ মেরে সবগুলো নিয়ে নিলেন মাইকেল। পরে এগুলো তিনিই বিলিয়েছেন। বিপুল উৎসাহে ও হাসিমুখ নিয়ে ঢিল ছুড়ছিলেন, বাচ্চারা লুফে নিচ্ছিল।’

‘আসলে রাশভারী লোকদের হাসিটাও কেমন যেন বেমানান’, বললেন তিনি।

মনপুরায় প্রাণবন্তই ছিলেন মাইকেল। সেখান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন কিছু ডালপালা। সেগুলো দিয়ে কী করবেন, জিজ্ঞেস করতেই হাত ঝেড়ে সব ফেলে দিলেন। মনপুরা কেমন লেগেছে?

‘ভালো’। জানালেন মাইকেল। আচ্ছা, আপনি এত গম্ভীর কেন? জবাবে একটু লজ্জা পেলেন, কিন্তু হাসলেন না। এরপর আকাশে তাকিয়ে উদাস হলেন মাইকেল হানসেল।

‘কম কথার এই মাইকেলের আচরণ অদ্ভুত হলেও মানুষ হিসেবে চমৎকার। নিশিদলের আনুষ্ঠানিক অনুভূতি শেয়ারিংয়ের সময় তো তিনি লাগাতার কথা বলেছেন। যদিও অনেকে শুনতে পায়নি।’ বললেন দলের অন্য সদস্য তাপস ভুঁইয়া। তিনি জানালেন, রাতে খাবার তৈরির জন্য আগুন ধরানোর কাজটা মাইকেলই করেছিলেন। আগুনে মাংসও পুড়িয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads