• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
যেসব কারণে গর্ভবতী মায়ের ব্যায়াম প্রয়োজন

কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে হালকা কিছু ব্যায়াম সহজেই করা যেতে পারে

ছবি : ইন্টারনেট

ফিচার

যেসব কারণে গর্ভবতী মায়ের ব্যায়াম প্রয়োজন

  • প্রকাশিত ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফারজানা বীথি

গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা নিয়ে নানা জনের নানা অভিমত এবং ভয়ও কাজ করে। সন্তান প্রসবের সময় নিজেকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত রাখতে এবং স্বাভাবিক প্রসব যাতে সহজ হয়, সেজন্য ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা কিছু ব্যায়াম হবু মায়ের জন্য বেশ ভালো। সুস্থ সন্তান জন্মদানের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সুষম খাবারের পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। তা না হলে অধিক বিশ্রামের এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম না করার কারণে এ সময় গায়ে পানি আসা, পেশির অসাড়তাসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভোগেন মায়েরা। কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে হালকা কিছু ব্যায়াম সহজেই করা যেতে পারে। যদিও গর্ভাবস্থায় ভারী কাজ করতে নিষেধ করা হয়, তবে হালকা কিছু ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় হবু মাকে অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। গর্ভবতী মায়ের ব্যায়াম কেন প্রয়োজন, চলুন জেনে নিই।

গর্ভকালীন বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দিতে

বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাই গর্ভকালীন বিষণ্নতায় ভোগেন, যা মানসিক ও শারীরিক নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় মানসিক বিষণ্নতা, উদ্বেগ কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম বেশ ফলপ্রসূ। এতে করে হতাশার ভাব কেটে গিয়ে মনে প্রশান্তি আসে। কাজে উদ্যম ও কর্মচঞ্চলতা ফিরে আসে।

গর্ভাবস্থাকালীন জটিলতা দূর করতে

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এমন অনেক অসুখও এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যার কোনো অস্তিত্বই ছিল না আগে। যেমন- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া এ সময় এক্লাম্পশিয়া ও প্রি-এক্লাম্পশিয়া হওয়ার ঝুঁকিতেও থাকেন মা। তা ছাড়া পা ফোলা, পায়ে পানি আসার মতো বিষয়গুলো তো রয়েছেই। উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে এক্লাম্পশিয়া ও প্রি-এক্লাম্পশিয়া হওয়া রোধ করতে বেশ সহায়তা করে ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সাঁতার কাটলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা হ্রাস পায় অনেকাংশে।

প্রসূতির শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে 

ব্যায়াম প্রসূতি মায়ের শরীরকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করে এবং স্বাভাবিক প্রসবে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে প্রসবের সময় লেবার পেইন কমায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে

গর্ভাবস্থায় অনেক গর্ভবতী মহিলারই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয়। একজন গর্ভবতী মহিলা দৈনিক যদি ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, তাহলে এ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

গর্ভাবস্থার অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে

প্রতিদিনের কিছু হালকা ব্যায়াম মূলত শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি এবং দেহকে সবল রাখার পাশাপাশি পেশিকে শক্তিশালী করে। প্রতিটি বিষয়ই গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কেননা প্রসবকালীন মাকে প্রচণ্ড শারীরিক ধকল সহ্য করতে হয়। তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মায়ের যে শারীরিক সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন, নিয়মিত কিছু ব্যায়ামে সেটা অনেকাংশেই পূর্ণ হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ সময়কার সাধারণ দুটি সমস্যা পিঠের ব্যথা এবং মাসল পুলের যন্ত্রণা থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

মর্নিং সিকনেস কমাতে

অনেক গর্ভবতী মহিলা, বিশেষ করে প্রথম সন্তান গর্ভে ধারণকারী মহিলারা মর্নিং সিকনেসের সমস্যায় ভোগেন। এ সমস্যার কারণে গর্ভবতী মহিলাদের ঘন ঘন বমি হয়। শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। খাবারে রুচি কমে আসে। খেতে পারেন না। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে এ সমস্যা অনেক কমে যায়।

অনিদ্রা ভাব দূর করতে

অনিদ্রা বা ইনসোমিনিয়া গর্ভবতী মায়ের আরো একটি কমন কিন্তু জটিল সমস্যা। প্রতিদিন হালকা কিছু ব্যায়াম অনিদ্রা ভাব কাটিয়ে পরিপূর্ণ ও গভীর ঘুমে সহায়তা করে।

ফুরফুরে মনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে

গর্ভাবস্থায় নারীর বেশকিছু শারীরিক পরিবর্তন আসে। হঠাৎ এই পরিবর্তনগুলো অনেক নারীর মনেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। এতে হবু মা অনেক সময়ই দুশ্চিন্তায় থাকেন। এতে মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়, মন ভালো থাকে না। ব্যায়ামের ফলে মস্তিষ্কে একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া ব্যায়াম এনার্জি বাড়ায়। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনে।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই নারীর শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ফলে কাজকর্মে অলসতা চলে আসে। গর্ভাবস্থায় যেসব মহিলা প্রতিদিন হালকা কয়েকটি ব্যায়াম করেন, তাদের শারীরিক ওজন স্বাভাবিক অন্য একজন গর্ভবতীর শরীরের ওজনের চেয়ে বেশ কিছুটা কম থাকে। তা ছাড়া গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ব্যায়াম করলে বাচ্চা হওয়ার পর ব্যায়ামের রুটিনে ফিরে আসা খুব সহজ হয়। ফলে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যাওয়া ওজন কমে আসে।

গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে

গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত ব্যায়ামে তার গর্ভস্থ শিশুর রক্ত স্বাভাবিক থাকে। হূৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়ামের কারণে সন্তানের মস্তিষ্ক উন্নত হয় এবং স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়।

ব্যায়ামে বাধা রয়েছে যেসব গর্ভবতী মহিলার :

* উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, এমন মায়েদের;

* রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন এমন গর্ভবতী নারী;

* হূৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অসুখ রয়েছে যাদের;

* গর্ভাবস্থার কোনো পর্যায়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেসব মায়ের ব্যায়াম নিষেধ করা হয়েছে;

* যাদের গর্ভফুল নিচের দিকে রয়েছে অর্থাৎ প্লাসেন্টা প্রিভিয়া যাদের রয়েছে;

* আগে গর্ভপাত হয়েছে এমন মায়েদেরও ব্যায়ামের জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads