• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
খবরের কাগজে সংসদ (ঢাকা-৮)

সংসদ ভবন

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

খবরের কাগজে সংসদ (ঢাকা-৮)

  • মো. আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীর ‘প্রাণকেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত সংসদীয় আসন ১৮১ (ঢাকা-৮)

বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের সরকার। জনগণই যেখানে সব ক্ষমতার উৎস। সংবিধানমতে, প্রতি পাঁচ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে তাদের প্রতিনিধি। যিনি মহান সংসদে দাঁড়িয়ে নির্বাচিত এলাকার জনসাধারণের সমস্যা সমাধানে কথা বলবেন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জনগণের নিজস্ব মতামত থাকে, যা অনেক সময়ই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাজেকর্মে প্রতিফলিত হয় না। তাই বাংলাদেশের সব মানুষের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে এক পাতাজুড়ে আমাদের আয়োজন ‘খবরের কাগজে সংসদ’। এখানে রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মীর পাশাপাশি কথা বলবেন তৃণমূল থেকে শুরু করে সংবিধান প্রণেতাসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা-৮ আসন নিয়ে এবারের আয়োজন। সহযোগিতায় সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন, গ্রাফিকস ডিজাইন রাজিব ফেরদৌস আর পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা আসিফ সোহান

একনজরে ঢাকা-৮ আসন

ঢাকা-৮ জাতীয় সংসদের ১৮১ নং আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে রাজধানীর মতিঝিল-রমনা-পল্টন থানা নিয়ে গঠন করা হয় ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড এ আসনের আওতাভুক্ত। এর আগে এ আসনের মতিঝিল ও পল্টন থানার আওতাভুক্ত এলাকা ঢাকা-৬ ও রমনা থানার আওতাভুক্ত এলাকা ঢাকা-১০ আসনের অধীনে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের ব্যানারে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাবিব উন নবী খান সোহেলকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে রাশেদ খান মেনন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থী হবেন রাশেদ খান মেনন। বিএনপির প্রার্থী হবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাসের আগে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, সবুজবাগ, মুগদা, খিলগাঁও নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসনের এমপি ছিলেন।

regular_3583_news_1535817617

মির্জা আব্বাস

স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি ও সাবেক মন্ত্রী

মির্জা আব্বাস ১৯৫১ সালে বৃহত্তর মতিঝিল থানার শাহজাহানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষা, কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন এই এলাকা ঘিরেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। তার বাবা মরহুম আলহাজ আবদুর রাজ্জাক বিশিষ্ট সমাজকর্মী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন। মির্জা আব্বাসের চাচা মির্জা আবদুস শহীদও বিশিষ্ট সমাজসেবক ছিলেন। তার স্বীকৃতি হিসেবে তার নামানুসারে ‘শহীদবাগ’ এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল। মির্জা আব্বাস মতিঝিল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বিকম ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তার উদ্যোগেই ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘শাহজাহানপুর সমাজকল্যাণ সমিতি’। তিনি শাহজাহানপুর অ্যাথলেটিক ক্লাবের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং ঢাকা সানরাইজ স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মির্জা আব্বাস ১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা পৌর করপোরেশনের কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তার আমলে শাহজাহানপুর, শহীদবাগ, শান্তিবাগ, খিলগাঁও বাগিচার রাস্তাঘাট, ভূগর্ভস্থ ড্রেন ও নতুন রাস্তা নির্মাণসহ এলাকার প্রভূত উন্নতি হয়। তিনি শান্তিবাগ কো- অপারেটিভ স্কুলের সভাপতি হিসেবে স্কুলটিকে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এটির উন্নতি সাধন করেন। মির্জা আব্বাস রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি এবং রেলওয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, খিলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং ‘মির্জা আব্বাস মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। উল্লেখ্য, মরহুম মেজবাহউদ্দিন সাবু ও মির্জা আব্বাসসহ আরো কিছু তরুণের প্রচেষ্টায় আইডিয়াল স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়। এরশাদ সরকারের আমলে আইডিয়াল কলেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে তার প্রচেষ্টায় কলেজটি পুনরায় চালু হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মির্জা আব্বাস এই দলের একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে সামরিক শাসন জারির পর বিএনপির সক্রিয় নেতা হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৬ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪, ’৮৬, ’৮৭ এবং ১৯৮৯ সালের বিভিন্ন সময়ে তাকে স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তাকে দীর্ঘ সময় পলাতক জীবনযাপন করতে হয়েছে। ১৯৮৮ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত যুব সংগ্রাম পরিষদের সদস্য-সচিব হিসেবে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালের ২৩ নভেম্বর আন্দোলন স্তিমিত করার জন্যে মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়; কিন্তু স্বৈরাচার পতনের দিন তালা ভেঙে তাকে মুক্ত করে আনা হয়। তিনি বৃহত্তর ঢাকা সিটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তী সময়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

বাংলাদেশের খবর : ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

মির্জা আব্বাস : যেখানে ন্যূনতম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, সেখানে নির্বাচন তো অনেক বড় বিষয়। যেখানে কোমলমতি ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে ভয় পেয়ে ভোটবিহীন সরকার তার বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন করে, চোখ তুলে ফেলে, শারীরিক শ্লীলতাহানি করে হিটলারি কায়দায় মুখ বন্ধ করতে চায় সেখানে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, সেটি আন্দাজ করা যায়। আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে আগেই তারা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি রেখেছে। আমরা এখন ভাবছি বেগম জিয়ার মুক্তি ও তার শারীরিক সুস্থতা নিয়ে। তিনি বন্দি থাকবেন আর আমরা নির্বাচন করব, এটা তো হতে পারে না।

বাংলাদেশের খবর : তাহলে এই পরিস্থিতিতে আপনারা নির্বাচনে যাচ্ছেন না?

মির্জা আব্বাস : দেশে বর্তমানে শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশের মানুষ এখন মোটামুটি একটা বৃহত্তর কারাগারে বসবাস করছে। যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষের সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করে, যেমন আইন ও বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন- এ ধরনের যে সব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে আর নিরপেক্ষ রাখেনি। দেশের মানুষের মতো তাদেরকেও জেলবন্দি করে রেখেছে। নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা কারো নেই। বাস চাপায় মানুষ মারছে আর মন্ত্রী দাঁত বের করে হাসছেন। এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা যে নেই, সেটি কোমলমতি ছাত্ররা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারকে বলব, সময় এসেছে জনদাবি বুঝুন; নইলে গণেশ উল্টে যেতে সময় লাগবে না। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের বিকল্প নেই। বিএনপির নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া অন্যকিছু ভাবেন না। তাই বেগম জিয়াকে নিয়েই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের চিন্তা সরকারের মাথায় থাকলে সেটি হবে বিরাট ভুল। নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে আর মুক্ত বেগম জিয়াকে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব। বেগম খালেদা জিয়া মানেই গণতন্ত্র। কাজেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশের খবর : আপনার এলাকার জনগণ কেন আপনাকে নির্বাচিত করবে বলে মনে করেন?

মির্জা আব্বাস : এই এলাকায় আমার জন্ম। এখানেই আমার বেড়ে ওঠা, খেলাধুলা, আমার পড়াশোনা, মেলামেশা- সবকিছুই এই এলাকা ঘিরে। এখান থেকেই রাজনীতির শুরু। ক্ষমতায় থাকাকালে আর ক্ষমতার বাইরে সব সময় এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি, এখনো করছি। ঝড় বৃষ্টি বন্যায় সব সময় সবার সঙ্গে এখানেই আছি। এলাকাটি আমার নিজের, এখান থেকেই আমি বার বার নির্বাচিত হয়েছি। কাজেই এই প্রশ্নটি বোধহয় আমার বেলায় অবান্তর।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমানে আপনার নির্বাচনী এলাকায় কী ধরনের সমস্যা আছে?

মির্জা আব্বাস : সুপেয় পানি ও গ্যাসের সঙ্কট এখনকার প্রধান সমস্যা। জলাবদ্ধতার সমস্যা, আগে এক-দুই ঘণ্টার জন্য পানি জমে থাকত। এখন সারাদিন পানি জমে থাকে। সচিবালয়ের ভেতরে হাঁটুপানি জমে বৃষ্টিতে। কারণ ঢাকা শহরকে এখন একটি চৌবাচ্চা বানিয়ে ফেলেছে এই সরকার। আমার সময়ে ঢাকার আশপাশে কোনো নিচু জলাভূমি ভরাট করতে দিইনি। যে কারণে ১/১১-পরবর্তী সময়ে আমাকে মামলায়ও পড়তে হয়েছিল। আমার কথা ছিল, ঢাকার আশপাশের খাল ও নিম্নাঞ্চল ভরাট হলে বৃষ্টির পানি ঢাকা শহরের বাইরে যেতে তো পারবেই না; বরং চারপাশের উঁচু এলাকার পানি এসে ঢাকার রাস্তাঘাট ডুবিয়ে ফেলবে। যে কারণে আমি ভরাট করতে দিইনি, বাধা দিয়েছিলাম। বর্তমান সরকার এবং এ এলাকার যিনি এখন এমপি রাশেদ খান মেনন, আরেক সংসদ সদস্য তারা তো এসবে বাধা দেননি। ফলে ঢাকার চারপাশের অঞ্চলগুলো ভরাট হয়ে উঁচু হয়েছে আর ঢাকা এখন নিম্নাঞ্চলে পরিণত হয়ে গেছে। ফলাফল ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।   

বাংলাদেশের খবর : আপনার নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে অনেক ক্লাব। ক্লাবগুলোতে চলছে জুয়া চাঁদাবাজি। এসব বন্ধ হচ্ছে না। আপনার মতামত কী?

মির্জা আব্বাস : এসবের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন বর্তমান এমপি। জুয়া, মাদকের নেশা একটি পরিবারের কতটা ক্ষতি করে, আমি তা জানি। এবং জানি বলেই আমার সময় সব ক্লাবে জুয়া ও চাঁদাবাজি সমূলে উৎপাটন করেছিলাম। আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছিল ক্লাবে কোনো জুয়া চাঁদাবাজি চলবে না। এখন চলছে, নির্বিঘ্নে। এটা তো সমগ্র দেশেরই চিত্র, যে যেমন পারছে করছে। হীরক রাজার দেশ বানিয়ে ফেলা হয়েছে।  

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়াই বিএনপি নির্বাচনে যাবে এবং তখন তারা বলবে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার জন্যই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আপনার মতামত কী?

মির্জা আব্বাস : দল আমাদের আর আমাদের দল নিয়ে কথা বলেন এমন এক লোক, যার নিজের এলাকা নাই, মার্কাও নাই। নিজের মার্কা রেখে যিনি নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন, তার মুখে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলা সাজে না। এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই, এগুলো ভিত্তিহীন কথা। কিছু লোককে মন্ত্রীই বানানো হয়েছে বিএনপিকে নিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলার জন্য। এগুলো না বললে তো তাদের চাকরিই থাকবে না। জনগণ সব বোঝে, সময়মতো জবাব  ঠিকই দেবে।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মির্জা আব্বাসকে কতটুকু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন? তিনি বলেছেন, বিএনপি আর মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত রেপুটেশন ভালো নয়। তাই নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে তার জয় নিশ্চিত। আপনি রাশেদ খান মেননকে কতটুকু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন?

মির্জা আব্বাস : কী আর ভাবব আর বলব বলুন, বেশিকিছু বলার নেই। সে যা বলেছেন ভালোই বলেছেন। যাও দু-একটি ভোট আগে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, একথা বলার পর সেটাও তার গেল।

regular_3583_news_1535817631

রাশেদ খান মেনন

সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি ও মন্ত্রী

রাশেদ খান মেনন ১৯৪৩ সালের ১৮ মে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিচারপতি আবদুল জব্বার খান পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর রাশেদ খান মেনন কলেজিয়েট স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) ও ’৬৫-৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ’৬৭-৬৯ সালে জেলে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে ন্যাপের (ভাসানী) প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল থেকে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ’৭৯ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী থেকে এবং ১৯৯১ সালে বাবুগঞ্জ-উজিরপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৪ সালে তিনি ঐক্য কংগ্রেসে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেন। ২০০৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য ও ২০১৩ সালে সর্বদলীয় সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। ঢাকা-৮ আসনের নির্বাচন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ উল আলম সোহান

বাংলাদেশের খবর : আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনাদের মনে কোনো দ্বিধা আছে কি?

রাশেদ খান মেনন : আমাদের মনে দ্বিধা থাকবে কেন? আমরা তো নির্বাচন করবই।

বাংলাদেশের খবর : এত জোর দিয়ে নির্বাচন করবেন বলছেন। বিএনপি একটা বড় দল, তাদের চেয়ারপারসন কারাগারে। সে ক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না তা নিয়ে আপনাদের কোনো মাথাব্যথা নেই?

রাশেদ খান মেনন : আমি তো মনে করি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কারণ গতবার তারা যে ভুল করেছিল, সেই ভুল এবার করবে না। গতবার তারা ভুল করেছে এবং জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এবার তাদের চেয়ারপারসনও যদি জেলে থাকে তারপরও তারা নির্বাচন করবে। এবং তখন তাদের স্লোগান হবে যে, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা নির্বাচন করছি।

বাংলাদেশের খবর : আপনি গতবার ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন নৌকা মার্কা নিয়ে। আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে করবেন, নাকি...। 

রাশেদ খান মেনন : এটা নির্ভর করবে...। এখনো তো নির্বাচনের সময় আসেনি।

বাংলাদেশের খবর : এলাকার উন্নয়নে কী কী কাজ করেছেন?

রাশেদ খান মেনন : আমার ঢাকা-৮ আসন হচ্ছে একেবারে সেন্টার অব ঢাকা। আমার এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি সামগ্রিক ঢাকার উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। একা একটা মন্ত্রণালয় বা একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে এর পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এলাকাগতভাবে যেটা আমি করেছি সেটা হলো, এখানে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে সব নামকরা। যেমন- ভিকারুন্নিসা স্কুল, আইডিয়াল স্কুল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার, উদয়ন স্কুল— এ ধরনের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে আমি এর অবকাঠামোগুলো করেছি। এই অবকাঠামো তৈরি হওয়ার ফলে এই স্কুলগুলোয় ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ ভালো হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও সেখানে বেড়েছে। বর্তমান যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ছি তার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আমরা আইসিটিবির লিঙ্ক ও আইসিটি ল্যাব করে দিয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা বোর্ডে সব সময় একেবারে টপে থাকে। এ ছাড়া আমার নির্বাচনী এলাকা বলতে মতিঝিল কলোনি, টিঅ্যান্ডটি কলোনি, পোস্টাল কলোনি, ব্যাংক কলোনি আছে। তাদের প্রথম দাবি ছিল এই কলোনিতে যেন একটা করে রুম বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আগে দুই রুম ছিল, একটা রুম করে দিয়েছি এখন তারা তিন রুমে থাকতে পারে। পানির সমস্যা ছিল এখন সমাধান হয়েছে, পুরনো বিল্ডিংগুলো সব ভেঙে ফেলে সেখানে টাওয়ার বিল্ডিং করে দেওয়া হয়েছে। অলরেডি দুটো টাওয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। আরো দুটো টাওয়ার নির্মাণাধীন আছে। আমার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পুলিশ লাইন রয়েছে। পুলিশের নিজস্ব সব রকম উন্নয়নের কাজ ওরা এখন নিজেরাই করে। ২০১০ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর—পুলিশের রেশন, ঝুঁকি ভাতা যেন তারা ঠিকভাবে পায় সেটি আমি পার্লামেন্টে তুলে পাস করে দিয়েছি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এটা চালু করেছেন। আজকে পুলিশ তাদের রেশন, ঝুঁকিভাতা, পোশাকভাতা এগুলো ভালোভাবে পাচ্ছে। পুলিশের আবাসনের ক্ষেত্রেও প্রচণ্ড সঙ্কট ছিল, সেটা এখনো দূর হয়নি। কিন্তু তারপরও দেখবেন আমার নির্বাচনী এলাকায় তাদের জন্য বড় বড় টাওয়ার তৈরি হয়েছে। রমনা থানাকে ভেঙে নতুন করে মাল্টিস্টোরেড টাওয়ার বিল্ডিং করা হচ্ছে। প্রাইভেট স্কুলগুলোর খুব খারাপ অবস্থা ছিল। আমি প্রত্যেকটি জায়গায় প্রাইমারি স্কুলগুলোকে বিল্ডিং করেছি। শিক্ষকের অভাব ছিল, সেগুলো দূর করা হয়েছে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা একটা বড় সমস্যা ছিল। সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, কাকরাইল সমুদ্র হয়ে যেত পানিবদ্ধতার কারণে; সেখানে বিশাল বিশাল পাম্প বসিয়ে পানি সরানোর চেষ্টা করা হতো। এই ক’বছরের চেষ্টার ফলে যদিও সবটা দূর হয়নি, কিন্তু পানিবদ্ধতা আনেক দূর হয়েছে। ড্রেনগুলো হয়েছে। রাস্তাগুলো হয়েছে। এই যে খিলগাঁও ফ্লাইওভার— নতুন লুপ করে দিয়েছি। উড়াল সেতুগুলোও হয়ে গেছে। আর সবচেয়ে বড় ছিল খাওয়ার পানির সমস্যা। আমি প্রায় সাতটি পাম্প বসিয়েছি, আরো কয়েকটি পাম্প বসানোর জায়গা আছে। তার ফলে অধিকাংশ মানুষের পানির সঙ্কটের সমাধান হয়েছে। গ্যাসের সঙ্কট, এটা জাতীয় সমস্যা। এখন সামগ্রিকভাবে গ্যাস নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা গ্যাসের প্রেশার ঠিক করার কাজ করেছি। আমার এমপি কোটায় একবার ১৫ কোটি টাকা, আবার ২০ কোটি টাকায় রাস্তাঘাটগুলো করিয়েছি। তার বাইরে সিটি করপোরেশনের অধীনে মেগা কতগুলো প্রজেক্ট এখানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ঝিলগুলো পরিষ্কার ও সংস্কার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের খবর : এলাকার জনগণের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

রাশেদ খান মেনন : জনগণের কাছে প্রত্যাশা একটাই, এই সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। তিনি জাতীয় ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটা নতুন নিদর্শন স্থাপন করেছেন। আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে, আমাদের রিজার্ভ বেড়ে গেছে, আমাদের এক্সপোর্ট আর্নিং বেড়ে গেছে। আমরা একটা স্বচ্ছল জাতিতে পরিণত হয়েছি। বিদ্যুৎ ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট থেকে এখন ১৮ হাজার মেগাওয়াট হয়েছে, ঢাকা মহানগরের লোকেরা ‘বিদ্যুৎ সঙ্কট’ বলতে পারে না, লোডশেডিং নেই। এগুলো মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে। চাকরিজীবীদের ১২৩ পারসেন্ট বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হয়েছে, তাদের বৈশাখী ভাতা চালু হয়েছে এবং এখন তারা ভালো জীবন কাটায়- এই জিনিসটা আমি তুলে ধরব। আমি প্রত্যাশা করব, আমার নিজস্ব এলাকার উন্নয়ন এবং জাতীয় উন্নয়ন এই দুটোকে কেন্দ্র করে অবশ্যই তারা আমাকে বা আমাদের দলকে বা আমাদের জোটকে ভোট দেবে।

বাংলাদেশের খবর : এলাকার সমস্যা সমাধানে কী করবেন?

রাশেদ খান মেনন : ঢাকা শহরের সামগ্রিক সমস্যা যানজট, জলজট, চাঁদাবাজি। এগুলো নিরসনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করব। এই যানজট, জলজট ও চাঁদাবাজি কমিয়ে নিয়ে এসে ঢাকাকে বা আমার এই অঞ্চলকে বসবাসের উপযোগী একটি সিটি হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশের খবর : আপনার আসনের মধ্যেই অনেক ক্লাব আছে। এগুলো ইদানীং মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে বন্ধ করতে পারছেন না কেন?

রাশেদ খান মেনন : মাদক এখন সারা দেশেই বিস্তার লাভ করেছে। আমরা এই মাদকের বিরুদ্ধে, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এ ধরনের দুর্নীতি, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা এলাকায় মিছিল করেছি, কমিউনিটি পুলিশ করেছি। এখন সবটাই তো সহজে সমাধান করা যায় না। তবে আমরা চেষ্টা করছি বিশেষভাবে এগুলোকে সমাধান করার জন্য।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৬ আসনটি ২০০৮ সালে ৮ এবং ৯ হয়েছে। এই দুটো আসনই বিএনপির ঘাঁটি এবং মির্জা পরিবারের দখলে। আপনি যখন নির্বাচন করেছেন, তখন এখানকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস নির্বাচন করতে পারেননি। ফাঁকা মাঠে গোল হয়েছিল। কিন্তু এবার সে রকম কিছু নাও ঘটতে পারে। যদি তিনি নির্বাচন করেন, তাহলে আপনার জন্য কি আগামী নির্বাচন সহজ হবে?

রাশেদ খান মেনন : এখানে কনটেস্টের ইলেকশন হবে। তবে আমি মনে করি, মির্জা আব্বাসের নিজের যে রেপুটেশন আছে, তার দল বিএনপির যে রেপুটেশন আছে, তাতে শুধু এই এলাকায় নয় দেশের জনগণই তাদের ভোট দেবে না।

regular_3583_news_1535817674

আবদুর রহিম

সাবেক এমপি
প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় পার্টি (জেপি)

আবদুর রহিম জগন্নাথ মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে যোগ দেন। বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ থেকে ’৭২ পর্যন্ত তৎকালীন মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশ স্বাধীনের পর সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এরপর কমিশনার ও পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ক্রীড়ানুরাগী ও ক্রীড়া সংগঠক। ১৯৮৬ সাল থেকে ’৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে প্রফেশনাল ফুটবল লিগ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, ’৯০-পরবর্তী এরশাদ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের হলেও ঢাকা-৬-এর সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহিম ছিলেন অভিযোগমুক্ত। বাকি অংশটুকু শুনি তার মুখ থেকেই। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ উল আলম সোহান

বাংলাদেশের খবর : আপনি প্রথম নির্বাচন কবে করেন?

আবদুর রহিম : ১৯৭৮ সালে প্রথম ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এলাকাবাসীর অনুরোধে ৪৩ নং ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। যেহেতু রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম, তাই অনুরোধ রক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। এই এলাকাটি তখন বেশ বড় ছিল। পুরো মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, পুরানা পল্টন, নয়া পল্টন নিয়ে ৪৩ নং ওয়ার্ড, যা এখন তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত। সেই নির্বাচনে এলাকাবাসীর ভোটে ও সমর্থনে জয়যুক্ত হই এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন শুরু করি। এর মধ্য দিয়েই সত্যিকার অর্থে আমার রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু।

বাংলাদেশের খবর : আপনি তো বিএনপির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন?

আবদুর রহিম : হ্যাঁ, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি গঠন করেন, তখন আমি এলাকার কমিশনার হিসেবে সেই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হই। এবং তখন থেকে এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা গ্রহণের আগপর্যন্ত দলটির ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। এরপর এরশাদ সাহেব জাতীয় পার্টি গঠন করলে তাতে যোগ দিয়ে ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করি। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তর মতিঝিল (তৎকালীন ঢাকা-৬) জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়ী হই। ১৯৮৮ সালে সংসদ ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দেওয়া হলে একই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভ করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। সে সময় জাতীয় পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদের পলিটিক্যাল সচিব ও উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

বাংলাদেশের খবর : সে সময় এলাকার কোনো উন্নয়ন করতে পেরেছিলেন?

আবদুর রহিম : এই এলাকায় আমার জন্ম, বাপ-দাদার ভিটা। এলাকায় যে উন্নয়ন করতে পেরেছিলাম, মানুষ আজো তখনকার উন্নয়নের কথা বলে। আইন-শৃঙ্খলার বর্তমান অবস্থা দেখে এলাকার সবাই আমার সময়ের কথা বলে, কারণ আমি আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। আমার মতামত ছিল, নিজ অথবা কোনো দলের লোকের মাধ্যমেই যেন এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট না হয়। এ বিষয়ে নির্ভয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলাম। সে সময় এলাকায় কোনো চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ছিল না যা আজ চিন্তা করলে অবিশ্বাস্য মনে হয়।

বাংলাদেশের খবর : আপনি পরবর্তী সময়ে আর কোনো সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি কেন?

আবদুর রহিম : ১৯৯০ সালে এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা চলে গেলেও আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান ও মনোনয়ন চাইতে বললেও জাতীয় পার্টির দুর্দিনে জাতীয় পার্টিকে না ছেড়ে থেকে যাই। তখন আমাদের পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তাদের নেতৃত্বে আমরা দলকে সুসংগঠিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করেছিলাম। কিন্তু ’৯১ সালে নির্বাচনে তৎকালীন সরকার তৎপর হয়ে জাতীয় পার্টিকে এমন কোণঠাসা করে, যাতে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারি এবং তা-ই হয়।

বাংলাদেশের খবর : ’৯০-এর পর এরশাদ সরকারের সবার বিরুদ্ধে মামলা হলেও আপনি ছিলেন অভিযোগ ও মামলামুক্ত, এটি কেন? এরশাদকে ছাড়লেন কেন?

আবদুর রহিম : এটি সত্যি যে, ’৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। কিন্তু গর্ব করে বলতে পারি, সংসদ সদস্য থাকাকালে এমন কোনো কাজ করিনি— যে জন্য আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হতে পারে। রাজনীতি করি নিষ্ঠার সঙ্গে, মানুষের কল্যাণের জন্য এবং সেই জিনিসটা এখনো ধরে রেখেছি। ডেপুটি মিনিস্টার ছিলাম, কিন্তু কোনোদিন আমার সঙ্গে কোনো সিকিউরিটি ছিল না। আল্লাহর রহমতে এখনো কোনো সিকিউরিটি ছাড়াই চলাফেরা করি। ১৯৯৬ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কিছুদিনের মধ্যে সেই যোগাযোগটা একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে কারণে আমরা তখন মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করি। সে সময় থেকেই এই পার্টির সঙ্গে জড়িত আছি। বর্তমানে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক।

বাংলাদেশের খবর : আগামী সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ থেকে মনোনয়ন চাইবেন?

আবদুর রহিম : গত নির্বাচনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দল যেহেতু ১৪ দলীয় জোটের শরিক ছিল, সেহেতু পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করি। কারণ এই আসন থেকে তখন ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ছিলেন রাশেদ খান মেনন। নির্বাচন আসছে, আমরা ১৪ দলের সঙ্গে ছিলাম, এখনো আছি। তাই আমাদের জন্য কিছু আসন ১৪ দলীয় জোটের নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চাইব। নেত্রীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪ দল থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন ও সমর্থন দেওয়া হয়, আমি অবশ্যই নির্বাচন করব। কারণ এখানে আগেও কমিশনার ও সংসদ সদস্য ছিলাম।

বাংলাদেশের খবর : এখন এই আসনটি ঢাকা-৮। এলাকার কী কী সমস্যা আছে? আপনি সুযোগ পেলে কী করবেন?

আবদুর রহিম : পানির পাম্প বসানো হলেও এখনো সমস্যা রয়েই গেছে। জলাবদ্ধতাও একটা বড় সমস্যা। কয়েক বছর ধরে দেখছি এলাকায় যেন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি দায়িত্ব পাই, একটা সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলব। এলাকাবাসী একবাক্যে স্বীকার করবেন যে, আমি একা ঘুরতাম। ডেপুটি মিনিস্টার ছিলাম, কিন্তু কোনোদিনই আমার সঙ্গে কোনো সিকিউরিটি ছিল না। আল্লাহর রহমতে এখনো সিকিউরিটি ছাড়াই চলাফেরা করি। এলাকার উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। ভবিষ্যতে যদি সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করব। এলাকার জন্য আমার যে ত্যাগ ও নিষ্ঠা রয়েছে তা এলাকাবাসী জানে। এই এলাকায়ই জন্মেছি এবং বর্তমানেও এখানেই থাকি। আল্লাহ যতদিন আমার হায়াত রাখবেন, ততদিনই এখানে থাকব ইনশাল্লাহ। চেষ্টা করব এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করতে। যদি ১৪ দল থেকে মনোনয়ন পাই, আমার দৃঢ় বিশ্বাস— বিপুল ভোটে জয়লাভ করব এবং আগামী দিনে আমার এলাকা ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারব। আমার আচার-আচরণ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করব যেন আমাদের মতো রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার জন্য কোনো সিকিউরিটির প্রয়োজন না হয়। আগামী দিনে এ ধরনের সমাজব্যবস্থা চালু হোক- এটাই আশা করব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads