• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্যরাষ্ট্

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান

  • প্রকাশিত ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিশ্বে এখন দেশের সংখ্যা ২০৪টি। এর ১৯৩টি স্বাধীন দেশ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্যরাষ্ট্র। এত বড় বিশ্বে নিজের স্বাধীন পরিচয়, ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সহজ কথা নয়। আয়তনের দিক দিয়ে ছোট কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে ঘনবসতির হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে আপন পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এদেশের সোনালি আঁশ পাট জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্ববিখ্যাত। সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকও সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। খেলাধুলার মধ্যে ক্রিকেট এ মাটির জন্য বয়ে এনেছে প্রভূত সুনাম। বাংলাদেশের সন্তানেরা দেশ-দেশান্তরে কাজ করে গড়ে তুলেছে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। ভাষাগত দিক দিয়েও বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব পরিচয়। মুসলমান অধিবাসীর দেশ হিসেবেও এটি বিশ্বে সুপরিচিত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে সুমহান মর্যাদায় টিকে আছে। উইকিপিডিয়া এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রের অধিদফতর থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানমূলক আয়োজনটি তৈরি করেছেন কামরুল আহসানইশতিয়াক আবীর

un-5-8-2018-1-1168019045

আন্তর্জাতিক সংগঠনে বাংলাদেশের অবস্থান

জাতিসংঘ বিশ্বের স্বাধীন জাতিগুলোর সংগঠন। লিগ অব নেশনস ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৪৫ সালে ৫১টি রাষ্ট্র কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিসংঘের প্রধান কাজ বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র ১৯৩টি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে। সেটি ছিল জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশন। যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের চাঁদার হার ০.০১ শতাংশ। গর্বের ব্যাপার হচ্ছে, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রথম অংশগ্রহণ করে।

 

কমনওয়েলথের ৩২তম সদস্য

কমনওয়েলথ স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী আন্তর্জাতিক সংগঠন। একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশ্বের এমন সব স্বাধীন রাষ্ট্র সমন্বয়ে কমনওয়েলথ গঠিত। বর্তমানে বিশ্বের ৫৪টি স্বাধীন রাষ্ট্র কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত। আফ্রিকা থেকে ভারত, প্রশান্ত মহাসাগরের তীর থেকে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে কমনওয়েলথের কমবেশি ১৬০ কোটি জনগোষ্ঠী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথে যোগ দেয়। ১৯৭৩ সালে কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো যোগদান করে। দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

 

ওআইসির ৩২তম সদস্য

অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (Organization of the Islamic Cooperation) বা সংক্ষেপে ওআইসি একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী সংস্থা। এই সংস্থা মুসলমানদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ওআইসি জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশের ৫৭টি ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে এই সংস্থা গঠিত। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিন আক্রমণ করলে এবং আল-আকসা মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিলে ২৫টি মুসলিম দেশ মিলে এই সংস্থাটি গঠন করে। এ বছর সংগঠনটির ৪৫তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়।

garment

পোশাক রফতানি গ্লোবাল মার্কেটে দ্বিতীয়

বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক। বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে চীন। বাংলাদেশে প্রস্তুত পোশাক রফতানি করা হয় ইউরোপিয়ান দেশ, বিশেষ করে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে। সেই সঙ্গে আমেরিকান অঞ্চলের দেশগুলোতেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রয়েছে অন্যতম অবস্থান। এ ছাড়া নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশে তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮২টি, যেখানে কাজ করছে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমজীবী মানুষ।

 

রেমিট্যান্স অর্জনে বিশ্বে পঞ্চম

বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা মুখ্য। গত কয়েক বছরে বিদেশে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সও বেড়েছে। এদিকে রেমিট্যান্স অর্জনকারী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। বিদেশে কর্মরত ভারতীয়রা গত এক বছরে তাদের দেশে পাঠিয়েছে ৬৮ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ৬৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করে ভারতের পরেই রয়েছে চীন। ২৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করে তৃতীয় অবস্থানে আছে ফিলিপাইন। দেশটির আয়ের প্রধান উৎস রেমিট্যান্স। একে বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদার চালক’।

বিশ্বব্যাংকের তালিকায় পাকিস্তান আছে ফিলিপাইনের পরে। এই খাত থেকে তাদের আয় ১৯ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে রমজান মাসে। এই মাসে দান করাকে বিশেষভাবে মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে ইসলাম ধর্মে। এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা পাকিস্তানিরা নানা দাতব্য কাজে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠায় দেশে। বাংলাদেশের পরে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। দেশটির রেমিট্যান্স বাজার দ্রুত উত্থানমুখী। রেমিট্যান্স থেকে তাদের আয় ১৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। এরপর আছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের আয় নয় দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স থেকে ছয় দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার আয় করে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় অষ্টম শ্রীলঙ্কা। দেশটির আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস এই খাত। এই তালিকায় অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নেপাল (৬ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার), দক্ষিণ কোরিয়া (৬ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার), থাইল্যান্ড (৫ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার), জাপান (৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার), মিয়ানমার (৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার) ও মালয়েশিয়া (১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার)।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশীয় দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি যায় ওই  দেশগুলোতে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৭৭ মিলিয়ন মানুষ রেমিট্যান্স আয় করে।

7d01d7b24718b0b7ddb61abdd36e9705-574a2f2c84a85

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী জোগানে দ্বিতীয়

জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী জোগানের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বিশ্বের শান্তিরক্ষায় তিন দশকে বাংলাদেশের এ অবদান অনন্য হয়ে উঠেছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড নেশন নিউজ সেন্টারের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে শান্তি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সাফল্য ও সংলগ্নতাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী জোগানদাতা দেশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি পৃথক মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করছেন। মোট ৭ হাজার ২৪৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মধ্যে সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনের নীল পতাকা হাতে আর নীল হেলমেট পরে মিশনগুলোতে নানা কাজে নিয়োজিত আছেন এসব শান্তিরক্ষী। নিরাপত্তা প্রদান থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণ, সহিংস দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সুনাম অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আছেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকার দেশ কঙ্গো ও সুদানের দারফুরসহ কঙ্গোর বুনিয়া ও ইটুরি প্রদেশে কাজ করছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। বিশ্বশান্তির অন্বেষণে বাংলাদেশের ১৩২ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের এ আত্মত্যাগ এক গর্বের এবং অহংকারের উপাখ্যান। সহিংস কঙ্গোর প্রান্তিক গ্রামগুলোতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিচরণ, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির মূলে কাজ করেছে শান্তি অন্বেষায় চরম পেশাদারিত্ব।

 

ভাষা, ধর্ম ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান

জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। ২০১৭ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১০ লাখ, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। সাধারণত আদমশুমারি করা হয় দশ বছর পরপর। প্রতিবেদনে ধর্মভিত্তিক বিভাজনে দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালে মুসলমান জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৮ দশমিক ৪ ভাগ, যা ২০১২ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ মুসলিম বিশ্বে চতুর্থ। ভাষাগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান দখল করে আছে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। এর বেশিরভাগই বাংলাদেশে। বাংলা ভাষাভাষি মানুষ এখন ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বে।

bg

ক্রীড়ায় আন্তর্জাতিক অর্জন

খেলাধুলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য ক্রিকেট। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। ২০০০ সালের ২৬ জুন তারা দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে আইসিসির সদস্যপদ লাভ করে। বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে অস্টম, ওডিআই র্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে ১০ম স্থানে আছে।

ফুটবল বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা হলেও বর্তমান বিশ্বে তার অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। বাংলাদেশের ফুটবল দল এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এশিয়ান কাপে ১৯৮০ সালে তারা মাত্র একবার অংশ নিতে পেরেছে এবং সেখানে তারা প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এখন বাংলাদেশ ফুটবল দলের অবস্থান ১৪৭।  হকি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ৩০তম।

 

কৃষিতে সাফল্য

jute-goods

পাট রফতানিতে প্রথম

পাট বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। এ কথা স্কুলের একটি নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীও জানে। পাট বাংলাদেশের সবচেয়ে গর্বের ধন। পাট রফতানিতে এখনো বাংলাদেশ প্রথম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পাট এবং পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৬৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা এ সময়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। এখনো বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের পাটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণ স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। বর্তমান সরকার মানসম্মত পাট উৎপাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। 

 

চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ

আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কৃষির এ সাফল্য সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বে গড় উৎপাদনশীলতা প্রায় তিন টন। আর বাংলাদেশে তা ৪ দশমিক ১৫ টন। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ শ্রীলঙ্কায় প্রথমবারের মতো চাল রফতানি শুরু করে সরকার। দুই দফায় প্রায় ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করা হয়।

 

সবজি উৎপাদনে তৃতীয়

দেশে রীতিমতো সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে গেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একসময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে। এ কৃষক পরিবারগুলোর প্রায় সবাই কমবেশি সবজি চাষ করেন। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্যাল ইয়ারবুক-২০১৩ অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশে, বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। পাশাপাশি একই সময়ে সবজির মোট উৎপাদন বৃদ্ধির বার্ষিক হারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

 

মাছ উৎপাদনে চতুর্থ

একসময় ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা বাস্তব। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মাছ রফতানি বেড়েছে ১৩৫ গুণ। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের হিমায়িত মৎস্য রফতানির পরিমাণ ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে চার হাজার ১৪৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

 

আম উৎপাদনে সপ্তম

বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। গত দুই বছরে প্রায় ১০ লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে এফএও’র সর্বশেষ মূল্যায়নে জানা গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন ছিল ৭ লাখ ৮১ হাজার টন। সেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টনে উন্নীত হয়। দেশে প্রায় দেড় কোটি আম গাছ রয়েছে।

santi-180530002334

সামরিক শক্তিতে বিশ্বে ৫৭তম

সামরিক শক্তিতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৭তম। তালিকায় বরাবরের মতো প্রথম অবস্থান ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। এর পরই যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে চীন ও ভারত। বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার (জিএফপি)। বিশ্বের ১৩৩টি দেশের মধ্যকার নানা তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করে এই তালিকা তৈরি করা হয়। এসব দেশের সামরিক শক্তি বিবেচনা করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে করা তালিকায় ১২২টি দেশের তালিকায়  বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫৩তম। ব্যাপক আলোচিত দেশগুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়া ২৩ নম্বরে। মিয়ানমার আছে ৩১ নম্বরে। পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ১৭ নম্বর থেকে উঠে এসেছে ১৩ নম্বরে। সেরা ১৫-তে থাকা বাকি দেশগুলো হলো- ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জাপান, তুরস্ক, জার্মানি, মিসর, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ইসরাইল।

সামরিক সক্ষমতার ভিত্তিতে তালিকা করতে জিএফপি ৫০টি বিভাগ নির্ধারণ করেছে। বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে- সামরিক সরঞ্জাম, প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্প, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সেনাসংখ্যা প্রভৃতি।

 

বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা দ্বিতীয়

বশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক বৈশ্বিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের ১৪০টি শহরের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, অপরাধপ্রবণতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের ওপর ভিত্তি করে এ তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় বিশ্বে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অযোগ্য শহর বিবেচিত হয়েছে গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় সেরা পাঁচে রয়েছে- ১. সিরিয়ার দামেস্ক, ২. বাংলাদেশের ঢাকা, ৩. নাইজেরিয়ার লাগোস, ৪. পাকিস্তানের করাচি ও ৫. পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোর্সবাই। ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, অপরাধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অযোগ্য শহর নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। তালিকায় বসবাসের জন্য সবচেয়ে যোগ্য শহর বিবেচিত হয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের সাত বছরের রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে এবার বসবাসের শ্রেষ্ঠ শহর নির্বাচিত হলো ভিয়েনা।

 

৩৪তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মর্যাদা অর্জন করতে যাচ্ছে

দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩৪তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আর উৎপাদন সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ চলে আসবে শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে। দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ ভাগ আসবে এই খাত থেকে। এটিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার জন্য মাইলফলক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার তৃতীয় প্রজন্মের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ১২শ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট থাকবে এই প্রকল্পে। প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২১ সাল নাগাদ। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২ টাকার কম। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই রাশিয়ার সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর ১২০০ মডেলে স্থাপিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

 

মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো ৫৭তম দেশ

গত ১১ মে শুক্রবার ভোরে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ কক্ষপথে পাঠানোর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

এর ফলে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর জন্য প্রধানত সুবিধার হবে এই স্যাটেলাইট। বর্তমানে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করলে কম খরচে একই সুবিধা পাবে। সেই সঙ্গে অব্যবহূত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কাছে ভাড়া দিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা যাবে। টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়াও ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এ ছাড়া দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। এই উপগ্রহটি থেকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের আশেপাশের আরো কিছু দেশ সুযোগ নিতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads