• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তারুণ্যের শক্তি

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বরিশালে বসেছিল এক তারুণ্যের মিলনমেলা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তারুণ্যের শক্তি

  • প্রকাশিত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জোট গার্লস নট ব্রাইডসের গ্লোবাল মেম্বারস মিটিং গত জুন মাসে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনের আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাদেশের তরুণদের পরিচয় ঘটিয়ে দিতে সম্প্রতি দক্ষিণের জেলা বরিশালে বসেছিল এক তারুণ্যের মিলনমেলা। এই নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গার্লস নট ব্রাইডসের গ্লোবাল ইয়ুথ অ্যাডভোকেট সোহানুর রহমান...

বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি অর্জন করতে পারলেও এখন গলার কাঁটা হিসেবে দেখা দিয়েছে বাল্যবিয়ে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয় বাংলাদেশে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণরাই বিশেষ করে কিশোরীরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। তবুও বন্ধ করা যাচ্ছে না এই সামাজিক ব্যাধিটি। বাল্যবিয়ে শুধু বাংলাদেশেরই নয়, এর ব্যাপ্তি বিশ্বজুড়ে। তাই বাল্যবিয়ে বন্ধে তরুণ সমাজকে ক্ষমতায়ন এবং যুব সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা ছাড়া কোনো বিকল্প দেখছে না বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাগরিক সমাজের জোট গার্লস নট ব্রাইডসের গ্লোবাল মেম্বারস। গত জুনে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বারের মতো এই সংগঠনটির আন্তর্জাতিক সম্মেলনটিতে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের কয়েক যুব সংগঠক। সেই সম্মেলনটির শিখন বিনিময়ের পাশাপাশি দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যেসব তরুণ স্বেচ্ছাসেবক বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করছেন তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে উদ্যোগ নিয়েছে গার্লস নট ব্রাইড্স বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে ৩০ আগস্ট বরিশালে হয়ে গেল বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যুব সমাজের অভিজ্ঞতা বিনিময়বিষয়ক এক কর্মশালা। কর্মশালার উদ্বোধন করেন বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য ও কর্মশালার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গার্লস নট ব্রাইডস বরিশাল নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক রহিমা সুলতানা কাজল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের দারিদ্র্যপীড়িত ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে বাল্যবিয়ের হার তুলামূলকভাবে বেশি থাকে। ২০১৩ সালের বিবিএস কর্তৃক মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাসটার সার্ভের পরিসংখ্যান অনুযায়ী  রংপুর বিভাগে ১৮ বছরের আগে বিবাহ সংগঠনের হার ৭৬ শতাংশ, যা সব থেকে বেশি। আর বরিশাল বিভাগে এই হার ৭০ শতাংশ, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।’ কর্মশালায় বিভিন্ন যুব সংগঠনের ৪৫ স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করেন। কর্মশলায়  তারা বাল্যবিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করতে তাদের উদ্যোগের গল্প বলেন। যেমন শোনালেন আগৈলঝাড়ার নীলিমা কর আর পুতুল তাদের নিজেদের বাল্যবিয়ে রুখে দেওয়ার সংগ্রামী অনুপ্রেরণার গল্প। এখন তারা তাদের এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করছেন। বেসরকারি সংস্থা আভাসের সঙ্গে কর্মরত কয়েক তরুণ জানালেন কীভাবে তারা বরিশালে বাল্যবিয়ের কোনো খবর পেলেই প্রশাসনের সহযোগিতায় ঠেকান। গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত আগৈলঝাড়ার আলামিন মোল্লা আর বাবুগঞ্জের মুনতাসির-সানজিদারা গত তিন মাসে ১৩টি বাল্যবিয়ে ভেঙে দেওয়ার খবর দিয়ে সবাইকে চমকে দেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে তরুণরা যেসব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন সেই সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানালেন বাকেরগঞ্জ উপজেলার এমপাওয়ার ইয়ুথ ফর ওয়ার্কের সদস্য স্মৃতি ডি রোজারিও। হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি গল্পের ঝুলি মেলে বসা তরুণ-যুবারা শুধু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেই বসে থাকেননি, তারা বাল্যবিয়ে বন্ধে সমাধানের পথ নিয়েও আলোচনা করেন। তরুণদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বরিশালকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করতে এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং স্থানীয় উন্নয়নকর্মীরা। বরিশাল সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালকের প্রতিনিধি মো. জাহান কবির, চন্দ্রদীপ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক জাহানারা বেগম স্বপ্না, বরিশাল জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি রিপন চন্দ্র মণ্ডল, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মেহের আফরোজ মিতা, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিজ ও ডাইভারসিটি বিভাগের সেক্টর স্পেশালিস্ট কৌশিক বিশ্বাস। আয়োজনে গার্লস নট ব্রাইেসর সদস্য সংগঠন বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের চেয়ারপারসন ফিরোজ মোস্তফা বলেন, ‘সঠিক নেতৃত্ব আর কর্মপ্রেরণা পেলে তরুণরা অসাধ্য সাধন করতে পারে, ইতিহাসে এই রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা শুধু পারিই না, বাস্তবে করেও দেখাই। যুব সমাজকে ক্ষমতায়িত ও যুব সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে পারলে বাল্যবিয়েমুক্ত বাংলাদেশ শুধু স্বপ্নই থাকবে না, অচিরেই তা বাস্তবে পরিণত  হবে।’

কর্মশলায় উপস্থিত স্থানীয় উন্নয়নকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও যুব সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে বাল্যবিয়ের প্রবণতা কার্যকরভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মতপ্রকাশ করেন।

জীবন দক্ষতা আর নেতৃত্বে বিকশিত তারুণ্য বাল্যবিয়ের মতো ক্ষতিকর প্র্যাকটিস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবে এবং অন্যকে এর হাত থেকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলে রক্ষা করবে। যেখানেই বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া যাবে, তরুণরা জোটবদ্ধ হয়ে সেখানেই সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে অঙ্গীকারে কর্মশালায় অংশ নিয়ে বাড়ি ফেরা তরুণদের মুখে ছিল একটাই স্লোগান- ‘আর নয়  বাল্যবিয়ে, রুখব এবার সবাই মিলে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads