• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
ঘোড়দৌড়ের রানী তাসমিনা

ঘোড়সওয়ারি তাসমিনা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ঘোড়দৌড়ের রানী তাসমিনা

  • নওগাঁ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘোড়দৌড়ের রানী নওগাঁর তাসমিনা। ঘোড়সওয়ারি তাসমিনাকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং পিপলস’-এ স্থান পাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার পূর্ব চকসুবল গ্রামের ওবায়দুল হকের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে তাসমিনা। ইতোমধ্যে প্রামাণ্যচিত্র ‘অশ্বারোহী তাসমিনা’ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ঘোড়ার পিঠে সওয়ারি। এক হাতে লাগাম, অন্য হাতে চাবুক আর দুই চোখজুড়ে স্বপ্ন প্রথম হওয়ার। ‘দি হর্স গার্লস’ খ্যাত ঘোড়সওয়ারি তাসমিনা দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। একের পর এক সেরা পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম ও শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেয় তাসমিনা। সে কারণে তাসমিনার দর্শকপ্রিয়তাও কম নয়। যেখানে চলে ঘোড়দৌড়ের রানী তাসমিনার অংশগ্রহণ, সেখানেই নামে মানুষের ঢল। বাড়িতে ঘোড়া ছিল, তাই খেলার ছলে খেলা শেখা। এমন অবস্থায় বেড়ে ওঠা কিশোরী তাসমিনা এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশজুড়ে। সারা দেশে ঘোড়দৌড় খেলায় এখন উজ্জ্বল মুখ ১৩ বছর বয়সী তাসমিনা। হাজারো পুরুষ খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছে সে। খেলার মাঠে দর্শক মাতিয়ে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে খুব অল্পদিনেই হয়ে ওঠে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়। তাই খেলার মাঠে দর্শকের চোখ এখন কেবল তার দিকেই। দরিদ্র পরিবারে জন্ম, তাই সওয়ারিই হয়ে উঠেছে সংসারের সম্বল।  

তাসমিনার মা তহুরা বেগম বলেন, এখানেই শেষ নয়, সাহসী তাসমিনা এ পথ ধরে যেতে চায় বহু দূর। তাসমিনাকে আত্মপ্রত্যয়ী ও সাহসী প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশী তার বাবা-মা। মেয়েকে নিয়ে নির্মিত সিনেমা গ্রিসে ‘অলিম্পিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়াং পিপলস’-এ স্থান পাওয়ায় খুশি তারা। এখন তাদের কাছে মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কিন্তু তাসমিনার স্বপ্ন পূরণে দরিদ্র বাবার সামর্থ্য যৎসামান্য। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার ছিল ঘোড়ার শখ। ছোট একটি ঘোড়াও ছিল তার। দেখতে দেখতে মেয়ে একদিন ওই ঘোড়ায় চড়ে বসে। দিনে দিনে ওর ভয় ভেঙে যায়। কিন্তু অভাবের কারণে সেই ঘোড়া তাসমিনার বাবা বিক্রি করে দেন। তবে এরই মধ্যে তাসমিনার নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে।  

তাসমিনার বাবা ওবায়দুল হক বলেন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একমুঠো ভাত খেয়ে ঘোড়ার পিঠে ওঠে। দুপুরে সামান্য কিছু খেয়ে আবার ঘোড়া নিয়ে বের হয়। সারা দিন ঘোড়ার পিঠেই থাকে। তার একটা বড় ঘোড়া চাই। আমরা গরিব মানুষ। ঘরভিটে ছাড়া কিছু নেই। কৃষিকাজ করি। বড় ঘোড়ার দাম অনেক। কোথায় পাব। মেয়ে বোঝে না। এজন্য প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাই। মেয়ে অন্য মানুষের বড় ঘোড়া চালায়। তিনি জানান, তিন বছর আগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মেয়েকে নিয়ে প্রতিযোগিতায় যান। প্রতিযোগিতায় অন্যের ঘোড়া দিয়ে জিতে মেয়ে একটি টেলিভিশন পুরস্কার পায়। কিন্তু ঘোড়ার মালিক সেই পুরস্কার নিয়ে নিলেন। মেয়ের মন খারাপ হয়ে গেল। এরপর যেখানেই প্রতিযোগিতা হয়, মেয়েকে ওবায়দুল ধরে রাখতে পারেন না। 

তাসমিনা জানান, তার স্বপ্ন বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার। এজন্য বড় হয়ে সে পুলিশের চাকরি করতে চায়। কারণ সেখানে ঘোড় সওয়ারির পদ রয়েছে। সেখানে সে ঘোড়া চালিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। বর্তমানে তার একটি বড় ঘোড়া চাই। এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে দিন পার করছে সে। তার কথা- কেউ কি তাকে একটি বড় ঘোড়া কিনে দেবে না?  

নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আবদুল বারী বলেন, বিশেষ করে তাসমিনাকে দেখতে মানুষের বিশেষ আগ্রহ দেখা গেছে সব প্রতিযোগিতায়। মেয়েটি যেভাবে ঘোড়া চালিয়ে প্রথম হয়, এটি সত্যিই বিস্ময়কর। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও তার নাম রয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে তাসমিনার মতো ছোট্ট মেয়েটি সাহসী প্রতিবাদের প্রতীক। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads