• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে

গত ৪৫ বছরে ৬০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে

প্রতীকী ছবি

ফিচার

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস

আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আত্মহত্যাকে অনেক ধর্মেই পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, তার নানান দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ আছে। বিভিন্ন বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, মানুষ তখনই আত্মহত্যা করে যখন তার জ্ঞান, বুদ্ধি, উপলব্ধি এমনকি অনুধাবন শক্তি পর্যন্ত লোপ পায়। সে তখন নিজেকে অসহায় এবং ভরসাহীন মনে করে। বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো আত্মহত্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক চাপ, হতাশা, অবসাদ ও হেনস্তার শিকার হয়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আবার আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও পারিবারিক সঙ্কটের কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রিভেনটিং সুইসাইডে বলা হয়, প্রতি বছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন সফলভাবে আত্মহত্যা করেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২০ সালে এই সংখ্যা প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজনে পৌঁছবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপর এক তথ্য থেকে জানা যায়, গত ৪৫ বছরে ৬০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে। মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা, ধনী দেশগুলোয় বেশি বয়সী মানুষ এবং দরিদ্র দেশগুলোয় অল্প বয়সের মানুষ আত্মহত্যা বা আত্মঘাতী হয় বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দরিদ্র দেশগুলোতে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয় ৭৫ শতাংশেরও বেশি। আর ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালিত হবে। বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়। এ উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি)। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসাথে’। আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা ২০০৩ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় দিবসটি পালন করে থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ধনী দেশগুলোয় সাধারণত বেশি বয়সী মানুষ আত্মহত্যা করে। দরিদ্র দেশগুলোয় অল্প বয়সের মানুষ আত্মঘাতী হন বেশি। ৭৫ শতাংশেরও বেশি আত্মহননের ঘটনা ঘটে দরিদ্র দেশগুলোতে। বেশিরভাগ দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আর ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে আত্মহত্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাই বেশি, যাদের বয়স ১৪ থেকে ৩০ বছর। বাংলাদেশ পুলিশ এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যানও প্রায় কাছাকাছি। এ কারণে বাংলাদেশে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজকরা এবার বাংলাসহ ৭১টি ভাষায় এই প্রতিপাদ্যের ব্যানার তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। ২০১০ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ প্রকাশিত এবং প্রফেসর এএমএম ফিরোজ ও প্রফেসর এসএম নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার প্রবণতা মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। আরো বলা হয়, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আত্মহত্যা করে, যার মধ্যে বিষপানে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে দেশে আত্মহত্যা করেন ১০ হাজার ৭৪৯ জন। আর ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ২৫৬ জন। দুই বছরের এই হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জনের বেশি আত্মহত্যা করেছেন। এসব আত্মহত্যা ঘটনার বেশিরভাগই ফাঁসিতে ঝুলে, বিষপান অথবা আগুনে পুড়ে ঘটেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং এনজিওর বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি নারী-পুরুষ আত্মহননের চেষ্টা করে। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ নারী-পুরুষ আত্মহননের মাধ্যমে মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা আত্মহত্যা করেন তাদের তিনজনের মধ্যে একজন মাদকাসক্ত এবং ৭৫ শতাংশ মাদকাসক্তই আত্মহত্যাপ্রবণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চল, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এবং জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। গত ৫০ বছরে সারা বিশ্বে, মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আত্মহত্যার হার শতকরা ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সারা বিশ্বে যত মানুষ আত্মহত্যার মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে ২.০৬ শতাংশ বাংলাদেশি। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ১২৮.০৮ জন আত্মহত্যা করেন। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহসিন আলী শাহ্ বিবৃতিতে বলেন, আত্মহত্যা মানে নিজেকে হত্যা করা ঠিকই; কিন্তু পাশাপাশি এর সঙ্গে থাকতে হবে নিজেকে খুন করার প্রগাঢ় ইচ্ছাশক্তি। তিনি বলেছেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবার আগে যা করণীয় তা হলো, এর কারণগুলো খুঁজে বের করা। শুধু চিকিৎসক নন, পাশাপাশি আত্মহত্যা প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব পরিবার ও সমাজ থেকেই।

জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই

বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও সেটি দ্রুত কার্যকর না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে চরম মানসিক যন্ত্রণা, হতাশা বা গ্লানি, যা কষ্টের সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। মনে রাখা দরকার, এ জীবন শুধু নিজেকে নিয়ে নয়- নিজের দুঃখ, কষ্ট, কঠিন সমস্যার গণ্ডির বাইরেও আছে এক বড় পৃথিবী। যেখানে অন্যরাও পুরোপুরি সুখী নয়। নিঃসঙ্গতা, চরম একাকিত্ববোধ থেকেও আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসে। একটু ভাবলেই দেখবেন, নিজেকে নিঃশেষ করার আগে চারদিকে তাকান, দেখবেন বেঁচে থাকার মতো অনেক কারণ আছে। আছে অনেক প্রয়োজন। পৃথিবীতে অনেক কিছু উপভোগের, আনন্দের উৎস আছে। আবার পৃথিবীকে অনেক কিছুই দেওয়ার আছে আপনার। কেন আপনি শূন্যতায় ঝাঁপ দেবেন। আপনার জীবনের অনেক মূল্য। অবারিত সম্ভাবনা আছে আপনার মাঝেও। মন হালকা করুন, দেখবেন আত্মহত্যার হাতছানিও উধাও হয়ে যাবে। আবেগ নয়, যুক্তি দিয়ে ভাবুন- পৃথিবীতে আপনি একাকী নন। আবার আমরা সবাই একা। সবাইকেই চলে যেতে হয়। জীবন চলার পথে বাধা, ব্যর্থতা, পরাজয় আছেই। তারপরও আছে জয়ের অমিত সম্ভাবনা।

আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব

সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মহত্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে এমন মানুষকে যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কথা বলার সুযোগ পেলে সেই পথ থেকে তার ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। তাদের মতে, বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে অসংখ্য হটলাইন চালু করা জরুরি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ‘কান পেতে রই’ নামে এ ধরনের একটি হেল্প লাইন চালু হয়েছে। যারা মানসিক বিষাদগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা সমাধানের নানা পথ বলে দেয়। সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর- ০১৭৭৯-৫৫৪৩৯১, ০১৭৭৯-৫৫৪৩৯২, ০১৬৮৮-৭০৯৯৬৫, ০১৫১৭-৯৬৯১৫০।

আত্মহত্যার পূর্ববর্তী মানসিক লক্ষণ

- ঘন ঘন মৃত্যুর কথা বলা, আমি বাঁচতে চাই না, দূরে কোথাও চলে যাব, জীবন দিয়ে দেব এসব বলা। এ ছাড়া শারীরিকভাবে নিজের ক্ষতি করা, যেমন- হাত কাটা, নিজের শরীরে আঘাত করা।
- বড় কোনো দুর্ঘটনার শিকার, প্রিয় কোনো ব্যক্তিকে হারানো (মৃত্যু/হারিয়ে যাওয়া), ডিভোর্স, আপন ব্যক্তিদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, মানসম্মান হানি, ব্যবসায় ক্ষতি।
- পারসোনালিটির পরিবর্তন, সবসময় দুঃখী হয়ে থাকা, অন্যমনস্ক, চিটচিটে মেজাজ, হতাশ, ক্লান্ত হয়ে থাকা।
- ব্যবহারে পরিবর্তন, স্কুল-কলেজে, কাজের জায়গায়, দৈনন্দিন জীবনের কোনো কিছুতে মন দিয়ে কাজ না করতে পারা।
- ঘুমের সমস্যা, বাজে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা, অনেক রাতে/ভোরে না ঘুমিয়ে চলাফেরা করা।
- খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, খাবারে অনীহা কিংবা অতিরিক্ত খাওয়া।
- আত্মমর্যাদা কমে যাওয়া, নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করা, নিজের প্রতি ঘৃণা, লজ্জাবোধ হওয়া।
- ভবিষ্যতের কোনো আশা না থাকা।

আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব

- নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া : নিজের প্রতি যত্নবান হলে, নিজেকে ভালোবাসতে শিখলে মানুষ জীবনের মায়া বেশি করে।
- নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা মানুষকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারে।
- একাকিত্ব থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কাজ করে। তার মধ্যে সাহস জোগাতে হবে, জীবনের মূল্য বোঝাতে হবে।
- পারিবারিক সহযোগিতা অনেক বড় জিনিস। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এমন ব্যক্তিদের সে সময় পারিবারিক সাহায্যের খুব প্রয়োজন হয়।
- নিজের ফিলিংস শেয়ার করার মাধ্যমে মন হালকা করা।
- আত্মহত্যা দমনে গণসচেতনতার বিকল্প নেই। সমাজ, রাষ্ট্র সর্বস্তরে আত্মহত্যা প্রতিহত করতে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি)

 

আত্নহত্যাকে ‘না’ বলতে হবে

আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের মেডিকেল ডিরেক্টর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হার্বার্ট হেনডিন বলেন, নান্দনিকতার আবরণে আত্মহত্যাকে শৈল্পিক করে দর্শক বা পাঠকের জন্য আকর্ষণীয় করা হলে তা আত্মহত্যার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক টাইমসের একটি রিপোর্টের কথা তিনি বলেন, যেখানে স্কুল পড়ুয়া দুই কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যাকে রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনীর সঙ্গে তুলনা করে বর্ণনা করা হয়েছে। এভাবে ‘রোমান্টিক ফ্লেভার’ দেওয়ায় কিশোর-কিশোরীদের কাছে আত্মহত্যা তথাকথিত মহৎ বা অনুকরণীয় কোনো দৃষ্টান্ত বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হতে পারে। পাশ্চাত্যে মধ্যবয়সী বা শেষবয়সী মানুষেরা একাকিত্বে ভোগেন- যাকে বলা হয় empty nest syndrome. এই একাকিত্বের কারণে সেখানে ৪০-৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি আর বাংলাদেশে ১১-২৫ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের আরেক গবেষণায় দেখা যায়, মানব মস্তিষ্কের সেরিব্রোস্পাইনাল (Cerebrospinal) তরলের মধ্যে ‘৫-হাইড্রোক্সইনডোলএসেটিক অ্যাসিড (5-Hydroxyindoleacetic acid) নামক একটি রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। আত্মহত্যা করার জন্য প্রথমে বিক্ষিপ্তভাবে মনের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা আসে। এরপর এই বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলো বার বার আসতে থাকে। ব্যক্তি এই চিন্তা থেকে সহজে মুক্ত হতে পারে না।

মনে রাখতে হবে, মানসিকভাবে যারা অসুস্থ, যারা বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্বের বিকার বা মাদকাসক্তিতে ভুগছেন তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি। অনেক সময় অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা হয়ে থাকে- এক্ষেত্রে যারা বেঁচে ওঠেন তারা কিন্তু পরে অনুতপ্ত হন। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার ইচ্ছা ততটা তীব্র থাকে না। কিন্তু যারা লোকচক্ষুর আড়ালে সুইসাইডাল নোট লিখে এবং দীর্ঘ পরিকল্পনার পরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, তারা সত্যিকার অর্থেই মরে যেতে চান। তারা যদিওবা কোনো কারণে আত্মহত্যা করতে ব্যর্থ হন, তবু মনে রাখতে হবে যে এরা পরবর্তী সময়ে আবারো আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারেন। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী কিন্তু স্বেচ্ছামৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব। একবারের জন্যই তো পৃথিবীতে আসা, তাই আত্মহত্যাকে ‘না’ বলতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে আত্মহত্যার প্রবণতা।

আহমেদ হেলাল

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি,

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads