• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
তিন প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ২৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা

কর্নফুলি টানেল

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

তিন প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ২৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালের শেষের দিকে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়নি সময়মতো। তিন বছরে প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫০৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেই প্রকল্পটির মেয়াদ আরো আড়াই বছর বাড়াতে চাইছে সেতু বিভাগ। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো বিভাগের প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা। প্রস্তাব আমলে নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। 

২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বহুমুখী এ প্রকল্পের কাজ আটকে যায় বহুমুখী জটিলতায়। কয়েক দফায় সংশোধন শেষে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই এ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়। এ হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। 

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিভিন্ন জটিলতার কারণে সরকারের বড় আকারের প্রকল্পগুলোর কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিদেশি সহায়তা পাওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, পরামর্শক নিয়োগ, ঠিকাদার মূল্যায়নসহ প্রতিটি ধাপেই বাড়তি কালক্ষেপণ করা হয়ে থাকে। ফলে প্রকল্পের কাজ ঝুলে থাকে বছরের পর বছর ধরে। এর ফলে পণ্য ও উপকরণের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বাড়ে প্রকল্পের ব্যয়। 

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা পদ্মা সেতুর পাশাপাশি পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয়ও সংশোধনের কারণে এক দফায় বেড়েছে। ২০১৬ সালে নেওয়া প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পের সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সংশোধনে বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। 

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণ, পদ্মা রেল সংযোগ আর কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে মোট বাড়তি ব্যয় হচ্ছে ২৬ হাজার ২৩৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এই তিন প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৩ হাজার ৫৯৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় কাজ শেষ করতে হলে এই তিন মেগা প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে ৭৯ হাজার ৮৩০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় তিনগুণে উন্নীত হলেও তিন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৫০ শতাংশ। 

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধের কারণে ওই সংস্থার পাশাপাশি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সহায়তা না পাওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হতে প্রায় ৬ বছর চলে যায়। এরই মধ্যে রেলপথ যুক্ত করে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পরবর্তীকালে প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। 

প্রথমে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও পরবর্তীতে চীন সরকারের অর্থ সহায়তা পেতে বাড়তি সময় লাগায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে বলে জানা গেছে। আইডিবি থেকে ঋণ নেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ঢাকা সফরে এসে চীনের প্রেসিডেন্ট এ খাতে সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দীর্ঘ দেড় বছরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে গত মাসে ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণের চুক্তি করে চীনের এক্সিম ব্যাংক। এর ফলে সংশোধিত প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কমে আসে। 

বিদেশি সহায়তা ছাড়ে বিলম্বের কারণে অনেক সময় প্রকল্পের গতি কমে আসে বলে মনে করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সম্প্রতি বিভাগের এক প্রতিবেদনে সহায়তা ছাড়ে গতি না আসার ১৩ কারণ চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিভাগটি। এতে বলা হয়েছে, অনেক সময় সঠিক পরিকল্পনা না করেই প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্প তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার অভাব আছে। এর ফলে কাজ শুরুর আগেই অনেক প্রকল্পের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করতে হয়। অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সহায়তা ছাড়ে বাড়তি সময় লাগে বলে মনে করে ইআরডি। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে উপযুক্ত জনশক্তি নিয়োগ দেওয়া হয় না। আবার প্রকল্পের মাঝ পর্যায়ে জনশক্তির কর্মস্থল বদল করা হয়ে থাকে।  

ক্রয় প্রক্রিয়া বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণে বাড়তি সময় লাগায় প্রকল্পের কাজ আটকে থাকে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বেশ কয়েকটি খাত নিয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয় বলেও দাবি করেছে ইআরডি। দাতাসংস্থার পক্ষ থেকেও অনেক সময় ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন, ঋণচুক্তি সম্পাদন, ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন, ঠিকাদার অনুমোদন, পরামর্শক নিয়োগ ও অর্থ ছাড়ে দাতাদের পক্ষ থেকে বাড়তি সময় ক্ষেপণ করা হয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। 

প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে ধীরগতি বিরাজ করে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বছরের পর বছর কাজ ঝুলে থাকলে অনেক সময় বিদেশি দাতারা সহায়তার অর্থ প্রত্যাহার করে নেয়। পরে একই কাজের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দিয়ে নতুন প্রকল্প নিতে হয়। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎসে ঋণের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads