• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
লাল পাহাড়ের দেশে...

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য রাঙামাটি

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

লাল পাহাড়ের দেশে...

  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মো. জয়নাল আবেদীন, কাউখালী, রাঙামাটি

রাঙামাটি, এ যেন এক অপরূপ বাংলাদেশ! নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য রাঙামাটি। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদবেষ্টিত উঁচু-নিচু পাহাড়, সবুজ বৃক্ষরাজি, হ্রাদের স্বচ্ছ জলরাশি, পাহাড়ি ঝরনাধারা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনধারা সব মিলিয়ে অসাধারণ এক পরিবেশ পার্বত্য রাঙামাটির। দুই হাজার ৩৬১ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটারের রাঙামাটি সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ সৃষ্টি।

নামকরণ : রাঙা শব্দের অর্থ হলো রঙিন বা লাল। চাকমা ভাষায় লাল বা রঙিনকে রাঙা বলা হয়। রাঙামাটি নামকরণের সুস্পষ্ট মতামত পাওয়া না গেলেও কথিত আছে, রাঙামাটির মাটি অনেকটা লালচে বা রঙিন বর্ণের হওয়ায় রাঙামাটি বলা হতো। আর এ থেকেই এ জেলার নামকরণ করা হয়েছে রাঙামাটি।

প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৮০ সালের ২০ জুন তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত হয় পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম। জেলা সৃষ্টির আগে এর নাম ছিল কার্পাস মহল। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান ও ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়িকে পৃথক করে পার্বত্য জেলার মূল অংশ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথাগত রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় রয়েছে চাকমা সার্কেল চিফ। চাকমা রাজা হলেন নিয়মতান্ত্রিক চাকমা সার্কেল চিফ।

প্রশাসনিক এলাকা : রাঙামাটি জেলায় রয়েছে একটি সংসদীয় আসন ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি। এ জেলায় রয়েছে ১০টি উপজেলা, ১২টি থানা, ২টি পৌরসভা, ১৫৯টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৩৪৭টি মৌজা। লোকসংখ্যা মোট ৬ লাখ ২০ হাজার ২১৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮২৩ জন, মহিলা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯১ জন।

ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান : বিশ্বের দ্বিতীয় সুইজারল্যান্ড খ্যাত এ রাঙামাটি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের প্রথম আকর্ষণ। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। দর্শনীয় স্থানগুলো সহজেই মন জুড়িয়ে দেয় ভ্রমণপিপাসুদের। জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চাকমা রাজবাড়ী। রাঙামাটিতে ভ্রমণপিপাসুদের প্রধান আকর্ষণ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও দেশের প্রথম মানবসৃষ্ট কাপ্তাই লেক। প্রায় ৭৫৬ বর্গকিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ লেকটি তৈরির পেছনে রয়েছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মৎস্যচাষের লক্ষ্য। অপার সম্ভাবনার এই লেকটির বহুমুখী ব্যবহার এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ও আন্তঃউপজেলা যোগাযোগে আনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

রাঙামাটি সদর উপজেলায় প্রবেশের শুরুতেই মানিকছড়িতে চোখে পড়বে মুক্তিযুদ্ধের এক মহান বীরসেনানী, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের ভাস্কর্য। একটু সামনে এগোলেই ভেদভেদিতে রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতিদের উপজাতীয় জাদুঘর। আরেকটু সামনে গেলেই সিও অফিস এলাকায় দেখা মিলবে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল আকৃতির ভাস্কর্য। তার পাশেই রয়েছে উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য বর্ধনের ফোয়ারা। পাশেই বাংলাদেশ আর্মি পরিচালিত আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট, যা রাঙামাটিতে জনপ্রিয় হয়েছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে। একই স্থানে দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে হ্যাপি আইল্যান্ড। এটি রাঙামাটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অন্য মাত্রা যোগ করেছে। রাজবন বিহার, চাকমা রাজবাড়ী রয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর মধ্যে। রাঙামাটি দর্শনার্থীদের অন্যতম একটি আকর্ষণ হলো ঝুলন্ত ব্রিজ। তবলছড়ি এলাকার ঝুলন্ত ব্রিজটি রাঙামাটির অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া রয়েছে ডিসি বাংলো, পলওয়েল ন্যাচার পার্কের মতো অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। শিলার ডাক খ্যাত শুভলং ঝরনা। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে খুব কমই পাওয়া যাবে যিনি শুভলং ঝরনায় যাননি। শুভলং ঝরনাটি জেলার বরকল উপজেলায় হলেও জেলা সদরের কাছে হওয়ায় দর্শনার্থীরা খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ঝরনা থেকে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের কাউখালী উপজেলার কলাবাগান এলাকায়ও রয়েছে অসাধারণ এক ঝরনা, যা রাঙামাটির পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই উপজেলায় রয়েছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্র। একই স্থানে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সজীব ওয়াজেদ গ্রাউন্ড স্টেশন-২। রাঙামাটিকে বিশ্বের কাছে চিনিয়ে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। এ উপজেলায় রয়েছে পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুল, রাঙামাটি টেক্সটাইল মিল, ঝুলন্ত সেতুসহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। সারা দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সাজেক। এর অবস্থান রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়। সাজেক মানেই অন্যরকম রাঙামাটি। রাঙামাটি মানেই লাল পাহাড়ের অপরূপ এক বাংলাদেশ।

 

হোটেল / মোটেল / রিসোর্ট

 

সরকারি

১. সার্কিট হাউজ জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ভেদভেদী, আমানতবাগ, রাঙামাটি।   ফোন-০৩৫১-৬২০১২

২. বন বিভাগ রেস্ট হাউজ। বন বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বনরূপা, রাঙ্গামাটি। ফোন-০৩৫১-৬৩৩৫১

৩. এলজিইডি রেস্ট হাউজ, এলজিইডি কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।      টিঅ্যান্ডটি এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে।     ফোন-০৩৫১-৬৩১৪৮

৪. উসাই রেস্ট হাউজ। উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ভেদভেদী, আমানতবাগ, রাঙামাটি।   ফোন-০৩৫১-৬৩৩৮৯

৫. জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন এটি প্রতিষ্ঠান। পাবলিক হেল্থ এলাকায় অবস্থিত।   ফোন-০৩৫১-৬৩২৬২

৬. কৃষি বিভাগ রেস্ট হাউজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।  ট্রাইবেল আদাম, বনরূপা।  ফোন-০৩৫১-৬২৩২৪

৭. বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।  চম্পকনগর, রাঙামাটি। ফোন-০৩৫১-৬২২৮৮

৮. বিসিক রেস্ট হাউজ। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।  রাঙামাটি স্টেডিয়াম এলাকায় অবস্থিত।   ফোন-০৩৫১-৬২০৩৭

৯. পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।  তবলছড়ির ডিয়ার পার্ক এলাকায় অবস্থিত।    ফোন-০৩৫১-৬৩১২৬

 

 বেসরকারি

১.  হোটেল সুফিয়া, ফিশারিঘাট, কাঁঠালতলী, রাঙামাটি। মোবা-০১৫৫৩৪০৯১৪৯

২.  হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, রিজার্ভ বাজার, রাঙামাটি। মোবা-০১৭২৬৫১১৫৩২

৩.  হোটেল নাদিসা, বাস স্টেশন, রিজার্ভ বাজার। মোবা-০১৮২৮৮০০৭০০

৪.   মোটেল জর্জ, কলেজ গেট, রাঙামাটি। মোবা-০১৫৫৮৪৮০৭০১

৫.   হোটেল আল-মোবা, নতুন বাস স্টেশন, রিজার্ভ বাজার। মোবা-০১৮১১৯১১১৫

 ৬. হোটেল মিডওয়ে, হোটেল হিলসিটি, হোটেল লেকভিউ, রিজার্ভ বাজার।

 ৭. হোটেল মাউন্টেন ভিউ, সিদ্ধি ভবন, পর্যটন সড়ক। মোবা- ০১৫৫৩৪৪০৩২৪

 ৮. হোটেল ডিগনিটি, কালিন্দীপুর, রাঙামাটি।

 ৯. হোটেল শাপলা, নিউ কোর্ট বিল্ডিং রোড, রাঙামাটি। মোবা-০১৮১৯৬৩৬৯৫৫

 ১০. হোটেল রাজু, নতুন বাস স্টেশন, রিজার্ভ বাজার। মোবা-০১৮১১২৫৮৩০৫

 ১১. হোটেল ড্রিমল্যান্ড, নিউ কোর্ট বিল্ডিং সড়ক।

 ১২. নিডস হিল ভিউ, বনরূপা, রাঙামাটি। ফোন-০৩৫২-৬৩৬০৬

 ১৩. হোটেল মধুমিতা, প্রধান সড়ক রিজার্ভ বাজার। মোবা-০১৮৭৯১০৪১০৫

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads