• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ভাস্কর্য

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

  • প্রকাশিত ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি

বর্তমান সময়ের গতিময় জীবনপ্রবাহে কাজের অবসরে যারা প্রতিনিয়ত খোঁজেন রোমাঞ্চকর এমন কোনো স্থান, যেখানে রয়েছে প্রাকৃতিক নৈসর্গে ঘেরা সবুজ পাহাড় আর নীল আকাশে মেঘের মিতালি! তাদের মন থেকে রাঙামাটি কখনোই মুছে যায় না। সবুজ-শ্যামল চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক দৃশ্যের এই অপরূপ রাঙামাটিতে যাদের আসার সুযোগ হয়নি, তারা হয়তো বাংলাদেশের প্রকৃত সৌন্দর্য কখনোই চিত্রিত করতে পারবেন না। লীলাময়ী প্রকৃতি যেন আপন হাতে এ অঞ্চলে তার সৌন্দর্য সুধা ঢেলে দিয়েছেন। এখানকার দিগন্ত বিস্তৃত বনরাজির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ভাবুক মন খেই হারিয়ে ফেলে- ‘সবুজের কত রঙ হতে পারে!’ হালকা সবুজ, গাঢ় সবুজ, ফিকে সবুজ, শ্যামল সবুজ- এভাবে নামকরণ করতে বলা হলে হয়তো কারো পক্ষেই এই সবুজের বিশেষণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। সবুজের শেষপ্রান্তে মেঘবালিকার মিতালি, উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর তুলির আঁচড়ের মতো মাঝে মাঝে সবুজের বুক চিরে বয়ে যাওয়া কাচালং নদী আর পাহাড়ি ছড়া, যে কোনো নীরস মনকেও ভাবুক আর উদাস বানিয়ে দেয়; কিছুক্ষণের জন্য হলেও। নগর জীবনের আয়েশী জীবন যাপনে অভ্যস্ত আক্ষরিক অর্থে সভ্য মানুষ এই রূপ ভুলতেই পারেন না।

দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী এই সবুজাভ বৃষ্টিস্নাত পাহাড় আর পাহাড় সন্নিহিত রূপমাধুরী অবলোকন করতে ছুটে আসেন এক অমোঘ সুতোর টানে। আবহমান বাংলার সর্বাঙ্গজুড়ে সবুজের সমারোহ সারা বিশ্বে এক আলোচিত অনুষঙ্গ, তার মাঝে পার্বত্য রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলা যেন প্রস্ফুটিত রংধনু। যারা এর সৌন্দর্য সুধা পান করে একবার চমৎকৃত হয়েছেন, তিনি বার বার ছুটে আসতে বাধ্য হন এই প্রকৃতির কোলে। ছবির মতো সবুজে ঘেরা পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদের বিশাল স্থির নীল পানিরাশি রাঙামাটিকে বাংলার সৌন্দর্যের স্বর্গে পরিণত করেছে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার আধার পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। তাই পার্বত্য শহর রাঙামাটি পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয় একটি নাম।

রাঙামাটির প্রবেশদ্বারেই রয়েছে মানিকছড়ি বা সাপছড়ির ফুরোমোন পাহাড়। রাঙামাটি শহরের অল্প দূরেই এর অবস্থান। সবুজের বুকে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই পাহাড় ধরা হয় রাঙামাটির সর্বোচ্চ চূড়া। এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে রাঙামাটি শহরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এর উচ্চতা এক হাজার ৫১৮ ফুট। রাঙামাটি ঢোকার ঠিক আগেই মেঘের কোলে ঘুমিয়ে থাকা এই পাহাড় মানুষকে টানে এক অবর্ণনীয় আকর্ষণে। আর রাঙামাটি শহর থেকে ফুরোমোন পাহাড় যেতে হলে মানিকছড়ির সাপছড়ি হয়ে যেতে হয়। এখানে রাজবন বিহারের ফুরামোনা শাখা নামে একটি বৌদ্ধমন্দির রয়েছে, যাকে সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনভাবনা কেন্দ্র বলা হয়।

বিদ্যুতের ছোঁয়াও লেগেছে এই দূর পাহাড়ে। রাতে আশপাশের পাহাড়ি পল্লীতে যখন বিদ্যুতের বাতি জ্বলে ওঠে, তখন পাহাড় থেকে মনে হয় অসংখ্য জোনাক পোকা জ্বলে আছে মিটিমিটি। পাহাড়ের উঠলেই মনে পড়বে পাহাড়ের সঙ্গে নীল আকাশের গভীর মিতালি। ছন্নছাড়া মেঘগুলো যেন উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের কোলে। সকাল-সন্ধ্যা প্রায় সময়ই পাহাড়ে মেঘের খেলা এই ফুরমোনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। যেদিকে চোখ যাবে, শুধু মেঘ আর রঙের খেলা। পক্ষান্তরে রাঙামাটি শহরকে মনে হবে যেন একটি দূরদ্বীপের শিল্পিত শহর।

মানিকছড়ি ফেলে আরেকটু এগোলেই রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখে সেনা জোন সদরের ঠিক পাশে এবং উপজেলা পরিষদের সাথে লাগোয়া করে নির্মাণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্য। এদিকে চোখ পড়লেই মনে হবে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। ঠিক যেন ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যে ভঙ্গিতে ভাষণ দিয়েছিলেন।

মনোরম পরিবেশে বেশ অনেকখানি জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা এই স্মৃতি ভাস্কর্য এখন রূপের রানী রাঙামাটির একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বলার অপেক্ষা রাখে না, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের অস্তিত্বের পরিচয়। যার জন্ম না হলে সবুজ-শ্যামল এই সোনার বাংলার ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। মহান এই সিংহপুরুষ জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে সংগ্রামী জাতিতে পরিণত করেন, তার যোগ্য ও কালজয়ী নেতৃত্বেই আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ; একটি স্বতন্ত্র পতাকা, যার নাম বাংলাদেশ। তার ভাস্কর্য মানুষের মনে নতুন চেতনা নবপ্রেরণার জন্ম তো দেবেই। পাশেই রয়েছে মনোরম ফোয়ারা। পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ভাস্কর্য এলাকাটি যেন আরো মোহময় হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads