• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
নদীর তিন ভয়ংকর চিত্র- ভাঙন, দূষণ, বিলীন

প্রতি বছর বন্যায় নদী ভেঙে ফেলছে অসংখ্য পাড়

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

নদীর তিন ভয়ংকর চিত্র- ভাঙন, দূষণ, বিলীন

  • প্রকাশিত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৈয়দ ফয়জুল আল অামীন

নদী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, অনেক সময় তা ডেকে আনে ধ্বংসও। এর পেছনে মানুষেরই দোষই বেশি। নানা ধরনের বাঁধ-বাধা দিয়ে নদীর গতিপথ আমরা পরিবর্তন করে ফেলেছি। ফলে নদীও নিচ্ছে ভয়ংকর প্রতিশোধ। প্রতি বছর বন্যায় নদী ভেঙে ফেলছে অসংখ্য পাড়। দূষণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য নদী। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। নদী না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না। আমরা যেমন নদী ধ্বংসের আয়োজন করছি, নদীও আমাদের ধ্বংস ডেকে আনছে।  ১৯৯৩ সালের জুন মাসে নদীভাঙন সমস্যাকে জাতীয় দুর্যোগ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই নদ-নদী অববাহিকার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের ছোট-বড় নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ৩০০টি। এসব নদ-নদীর তটরেখা যার দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার তটরেখা নদী ভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব নদ-নদীর ভাঙনে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ হচ্ছে বাস্তুচ্যুত। আর এতে করে বাড়ছে আশ্রয়হীন পরিবারের সংখ্যা। বাংলাদেশে নদীভাঙন প্রলয়ঙ্করী দুর্যোগের মতো বিপজ্জনক হলেও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের অবস্থা পরিবর্তনে সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প একেবারেই নামমাত্র।

বিভিন্ন সংস্থার হিসাবমতে, ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রায় ৬০ থেকে ৮০ লাখ লোক নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। সেই সঙ্গে ২ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। বর্তমানে প্রতি বছর নদীভাঙনে গৃহহীন উদ্বাস্তু লোকের সংখ্যা দুই থেকে আড়াই লাখ হারে বাড়ছে। এতে বছরে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসিএস) দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বব ম্যাকরো ২০১৫ সাল নদীভাঙনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টারের (বিডিপিসি) এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫১টি জেলায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ২৭০ একর জমি। জরিপে আরো বলা যায়, নদীভাঙনে উদ্বাস্তু, গৃহহীন ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর ২ লাখ ৫০ হাজার করে বাড়ছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষ বাঁধ, রাস্তা, পরিত্যক্ত জমি প্রভৃতি স্থানে ভাসমান এবং মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এদের মধ্যে বৃহদাংশ হচ্ছে শহরমুখী।

নদীভাঙনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র। পদ্মা-যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য গ্রাম। মসজিদ-মাদরাসা, ইমারত, করবস্থান, শহর-বন্দর-গ্রাম কিছুই বাদ দিচ্ছে না নদী। নদীকে অনেক সময় মনে হয় রাক্ষস, চারপাশের সবকিছু সে গিলে খায়। নদীর ভয়াবহতা একমাত্র সেই বুঝতে পারে যার ঘরবাড়ি ভেসে যায় চোখের সামনে। পাশাপাশি মানুষও অসচেতন হয়ে নদীগুলো ধ্বংস করছে। নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে কল-কারখানা। তার বজ্র গিয়ে দূষিত করছে নদীর পানি। এক হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১৩০০ নদী ছিল বলে ধারণা করা হতো; কিন্তু এখন ছোট-বড় শাখা-উপনদী মিলিয়ে আছে প্রায় ৭০০ নদী। এর মধ্যে অনেকগুলোরই খরামৌসুমে কোনো অস্তিত্ব থাকে না। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঢাকার চারপাশের চারটি নদী- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী। নদী দূষিত হয়ে যাওয়া মানে চারপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়া। প্রকৃতির ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। একদিন এসব নদীর চারপাশে গড়ে উঠেছিল এ নগর। এ নদীগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে এই নগরও ধ্বংস হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads