• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দ্বিমুখী লড়াইয়ের আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪)

জাতীয় সংসদ

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

দ্বিমুখী লড়াইয়ের আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪)

  • প্রকাশিত ১৪ অক্টোবর ২০১৮

দ্বিমুখী লড়াইয়ের আসন-১৭৭ (ঢাকা-৪)

বর্তমান ঢাকা-৪ আসনে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে সীমানা পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে শ্যামপুর ও কদমতলী নিয়ে গঠিত হয়। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন নেতা। তারা হলেন সাবেক এমপি ও বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সানজিদা খানম, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ড. আওলাদ হোসেন এবং শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। বিএনপিতে মনোনয়ন দৌড়ে নতুনদের মধ্যে এগিয়ে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন। তিনি সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে। জোটবদ্ধ হয়ে কিংবা এককভাবে, যেভাবেই নির্বাচন করা হোক—জাতীয় পার্টি থেকে এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সাজানো হয়েছে আজকের খবরের কাগজে সংসদ। সহযোগিতায় সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন, পরিকল্পনা গ্রন্থনা ও সম্পাদনায় মো. আসিফ উল আলম সোহান

 

একনজরে ঢাকা-৪ আসন

 

Untitled

জাতীয় সংসদের আসন নং : ১৭৭।

অন্তর্ভুক্ত থানা ও সীমানা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ (সাবেক ৮৩), ৫১ (সাবেক ৮৭), ৫২ (সাবেক ৮৮), ৫৩ (সাবেক ৮৯), ৫৪ (সাবেক ৯০) নং ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর ইউনিয়ন এ আসনের অন্তর্ভুক্ত।

জনসংখ্যা : ৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ জন।

ভোটার সংখ্যা : ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৮।

সাবেক এমপিদের নাম 

২০০১ : সালাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

২০০৮ : সানজিদা খানম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

২০১৪ : সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, জাতীয় পার্টি (এরশাদ)

 

MLN_9823

শেখ হাসিনা-এরশাদ-মেনন-ইনুর ঐক্যের কাছে কোনো ঐক্য টিকবে না : সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা

 

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তখন তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জগন্নাথ কলেজ শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ’৬৯ সালের গণআন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেননের সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের মিছিলে সাথী হিসেবে সামনের কাতারে থেকে স্লোগান ধরেছেন। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা-৪ আসনে পরপর দুবার সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

 

বাংলাদেশের খবর : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি-না, এ নিয়ে কোনো সংশয় জাতীয় পার্টির মধ্যে আছে?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বলতে আপনি কোন বিষয়টি বোঝাচ্ছেন, তা আমি ক্লিয়ার নই।

বাংলাদেশের খবর : যেমন দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে। বিএনপি বলছে, চেয়ারপারসনের মুক্তি ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : এটি তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য, পরিবেশ সেটা বলে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানমতে এবং সঠিক সময়েই নির্বাচন করবেন। আর বিএনপি একটি বৃহৎ দল, তারা নির্বাচনে না গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে তাদেরই। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখার জন্য হলেও সময়মতো বিএনপি নির্বাচনে যাবে। 

তবে হ্যাঁ, আমি এটুকু বলতে পারি, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আমাদের পার্টির মধ্যে কোনো সংশয় বা দ্বিধা নেই। আপনি জানেন, দুই মাস পর জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে একটি অশুভ গোষ্ঠী বর্তমানে দেশের শান্তিময় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপতৎপরতায় লিপ্ত আছে। কিন্তু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, দেশপ্রেমিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে অতীতের মতো আগামীতেও যদি কোনো বিশেষ দল বা অশুভ গোষ্ঠী দেশে নাশকতার চেষ্টা করে, তাহলে তা প্রতিহত করবে। আরেকটা কথা বলতে চাই, অনেকেই নির্বাচন সামনে রেখে ফ্রন্ট, ঐক্যজোট অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যতদিন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মধ্যে ঐক্য থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের মধ্যে মহাঐক্যের কাছে কোনো তথাকথিত জাতীয় ঐক্য টিকবে না।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপি নির্বাচনে না এলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি আপনারা এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে সেই সিদ্ধান্তই আছে।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসনের জনগণের বর্তমানে কি কোনো সমস্যা আছে?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : আগেই বলেছি, আমার এলাকার প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। কিন্তু তা স্থায়ী নিরসনে কাজ শুরু হয়েছে। এক বছরের মধ্যে সেই সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া ৫৩, ৫২ ও ৫৮ ও ৫৯ নং ওয়ার্ডে আরো কিছু রাস্তা মেরামত করতে হবে। আশা করছি, আগামীতে এমপি হতে পারলে সেই রাস্তাগুলোও  মেরামত করার ব্যবস্থা নেব। এছাড়া মীর হাজিরবাগসহ আরো কয়েকটি এলাকায় পানির সঙ্কট আছে। এই সমস্যা দূর করতে আরো কয়েকটি পানির পাম্প বসানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসনে সংসদ সদস্য থাকাকালে আপনি এলাকার জন্য কী কী কাজ করেছেন?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : আমি অবিভক্ত ঢাকা-৪ আসনে আশির দশকে দুবার সংসদ সদস্য ছিলাম। তখন আমি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল করেছি, পোস্তগোলায় বুড়িগঙ্গা সেতু করেছি, ১৬টি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি, শহীদ ফারুক সড়কসহ অর্ধশতাধিক সড়ক নির্মাণ করেছি। মাতুয়াইল এলাকায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে গ্যাসের সংযোগ দিয়েছি। শ্যামপুর শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করেছি। ডিএনডি বাঁধ করেছি। এ ছাড়া আরো শত শত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি আমার নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদের আন্তরিক সহযোগিতায়। ২০১৪ সালে আবারো পল্লীবন্ধু এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদ আমাকে ঢাকা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও উদারতার কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দেয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী পরিবারের সব সদস্য আমার পক্ষে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আমাকে বিজয়ী করেছেন। এই মেয়াদে আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এলাকার প্রধান সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা থেকে আমার এলাকার কদমতলী থানার ৫২, ৫৩, ৫৮ ও ৫৯ নং ওয়ার্ডসহ পুরো ডিএনডি অঞ্চলের মানুষকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় ৫৫৮ কোটি টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিএনডি নিষ্কাশন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই প্রকল্পের কাজ করছে। কাজটি পুরোপুরি শেষ হতে আরো এক বছর লাগবে। এই কাজ শেষ হলে আমার নির্বাচনী এলাকার কদমতলী থানাসহ পুরো ডিএনডি অঞ্চলের মানুষ সারা জীবনের জন্য জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষা পাবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বড়ইতলায় রেলস্টেশন করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং জেলা পরিষদের সহযোগিতায় গত সাড়ে চার বছরেরও বেশি সময়ে আমার এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার করেছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রতিবছর খাল সংস্কার করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমার নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ করেছি। কবরস্থানের উন্নয়ন করেছি। পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটের আধুনিকায়ন করেছি। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি পানির পাম্প বসিয়েছি।  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সহস্রাধিক সোলার প্যানেল স্থাপন করেছি। দুই শতাধিক সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করেছি। ১৮২টি মসজিদের সংস্কারের জন্য অর্থসহায়তা প্রদান করেছি। দুই নতুন মসজিদ নির্মাণ করেছি। মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লাব ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য অর্থসহায়তা দিয়েছি।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসনের জনগণ কেন আরেকবার আপনাকে নির্বাচিত করবে বলে আপনি মনে করেন?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : দেখুন, আমি কথা নয়- কাজে বিশ্বাস করি। এ কথাটি আমার এলাকার প্রতিটি মানুষ জানে। আমি দিনের বেশিরভাগ সময় আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করি। এ ছাড়া এলাকার সার্বিক উন্নয়নে আমি যে আন্তরিকভাবে কাজ করেছি তা দৃশ্যমান। তা ছাড়া আমি কারো উপকার করতে না পারলেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কারো ক্ষতি করিনি এসব কারণে আমার এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপি নির্বাচনে এলে ঢাকা-৪ আসনে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কতটা শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : যে ব্যক্তি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে দুর্বল ভাবে, তারচেয়ে বড় বোকা এই পৃথিবীতে কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি সেই তালিকায় পড়তে চাই না। তাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী যিনিই হবেন,  তাকেই আমি শক্তিশালী প্রার্থী মনে করি।

বাংলাদেশের খবর : এবার আওয়ামী লীগের কাছে আপনারা ঢাকার ভেতরে ৭ থেকে ৮টি আসন চাইবেন এরকম শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

বাংলাদেশের খবর : বিএনপিসহ ড. কামালদের ঐক্যজোট নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা : বিএনপি দেশের একটি বড় দল, তাদের জনসমর্থন আছে, কর্মীবাহিনী আছে। ব্যক্তি হিসেবে ড. কামাল সাহেব শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু তার দল গণফোরাম বা যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, তাদের দলের কর্মীই নেই। তাই বিএনপির মতো এত বড় একটি দল কেন যে তাদের সঙ্গে জোট করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, জননেত্রী শেখ হাসিনা, পল্লীবন্ধু এরশাদ ও মেনন-ইনু সাহেবদের ঐক্যের কাছে আর কোনো ঐক্য টিকবে না।

 

received_171322520463960

নৌকা থাকলে জাতীয় পার্টি এখানে টু পার্সেন্ট ভোট পাবে : সানজিদা খানম

সানজিদা খানম ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু পরিষদের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয়। এরপর ছাত্রলীগে যোগদান করে নানা পদবি লাভের মধ্য দিয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

বাংলাদেশের খবর : আপনার শিক্ষাজীবন ও রাজনীতি সম্পর্কে বলুন।

অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম : আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি, তখন আমার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর আমি অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। রাজনীতির শুরু বঙ্গবন্ধু পরিষদ দিয়ে এবং ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে। পরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের ওয়ার্ডের সেক্রেটারি হই। তারপর আওয়ামী লীগের থানা সেক্রেটারি হই। তার আগে আওয়ামী লীগের মূল দলের একটি ইউনিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম একেবারে রুট লেভেলে। এখন আমি আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদে’র সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার। এটা হলো আমার রাজনৈতিক পরিচয়। এর বাইরে আমি ওই এলাকার কাউন্সিলর ছিলাম। ২০০৮ সালে যে এলাকার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম, সেখানে অনেক ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলাম ২০০২ সালে। এটি তখন ছিল তিনটি ওয়ার্ড— ৮৮, ৮৯ ও ৯০ নং ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তার আগে ওই এলাকার স্কুল ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার ছিলাম। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলাম। কালচারাল সেক্রেটারি ছিলাম ইলেক্টেড। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। তারপর ২০০৮ সালে ঢাকা-৪ থেকে এমপি হলাম। সেই নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী আবদুল হাই ৪৮ হাজার ৫০০ ভোটে হেরেছিলেন। তারপর ২০১৪ সালে আবার নৌকার মনোনয়ন পেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করি। দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন পেলেও ওই সময় এই আসনটি জাতীয় পার্টির বাবলা সাহেবকে ছেড়ে দিলে নেত্রী আমাকে সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপি করে এলাকার দায়িত্ব দেন।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন?

সানজিদা খানম : হ্যাঁ, অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। কারণ এটা আমার সিট ছিল। এবার আমি চাইব এবং নেত্রী আমাকে দেবেন আশা করছি।

বাংলাদেশের খবর : আগামী নির্বাচন কি সঠিক সময়ে হবে? বিএনপি তো বলছে বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন নয়। বিএনপির নির্বাচনে আসা না আসার কারণে আপনার এলাকার রাজনীতিতে কি কোনো প্রভাব পড়বে?

সানজিদা খানম : অবশ্যই সঠিক সময়ে নির্বাচন হবে। আর আমার বিশ্বাস বিএনপি এবার নির্বাচনে আসবে। এত বড় ভুল তারা আর কখনো করবে না। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসেনি—এ কারণে কিন্তু তাদের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। তাই আমার ধারণা, এবার নির্বাচনে আসবে। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে আর হবে না। এখানে আবার নৌকা লাগবে। কারণ বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো কন্টেস্টই হবে না। বাবলা সাহেব গত নির্বাচনে টোটাল ভোট পেয়েছিলেন ১৭ হাজার। আড়াই লাখ ভোটের মধ্যে অনলি ১৭ হাজার ভোট পেয়ে বাবলা সাহেব পাস করেছিলেন। তাও আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে পাস করাতে। সুতরাং এই ১৭ হাজার ভোট দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ফাইট করা অসম্ভব। আমার সঙ্গে বিএনপির পার্থক্যই ছিল প্রায় ৫০ হাজার। সে কারণে আমি আশা করি বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং এলে ঢাকা-৪ নির্বাচনী আসনে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে পাস করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের খবর : কিন্তু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব তো বলেছেন এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। যদি সেরকম হয়, তখন তো আপনার বিপক্ষ প্রার্থী হবে জাতীয় পার্টি? 

সানজিদা খানম : হোক। কোনো সমস্যা নেই। তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কন্টেস্ট হবে। বিএনপি এত বড় দল, বিএনপির সঙ্গেই ৪৮ হাজার ভোটের পার্থক্য ছিল আমার। জাতীয় পার্টির তো এখানে অস্তিত্বই নাই। নৌকা থাকলে জাতীয় পার্টি এখানে টু পার্সেন্ট ভোট পাবে। কারণ ঢাকা শহরে জাতীয় পার্টির টু পার্সেন্ট ভোট।

বাংলাদেশের খবর : আপনি তো ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনের এমপি ছিলেন। এখনো সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং ওই এলাকার দায়িত্বে আছেন। আবার জাতীয় পার্টির বাবলা সাহেব একই আসনে এমপি হয়েছেন। এলাকার জনগণের কী ধরনের সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন, যেগুলো দ্রুত সমাধান করা উচিত?

সানজিদা খানম : এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জলাবদ্ধতা। এর কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। কাজটি শুরু হয়েছে ৫৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। আমি যখন নির্বাচিত এমপি ছিলাম, তখনই আমরা বাজেটটি করেছিলাম। তখন বাজেট ছিল ২৩৬ কোটি টাকার। পরে ওই সময়টা নির্বাচনের আগে আগে তো—এটা পাস হলেও একনেকে আর পাস হয়নি। একনেকে পাস হলো আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর। এখন ৫৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার কাজ চলছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পানির পাম্প স্থাপন করা হবে। আপনারা জানেন, এটা আসলে ডিএনডি এলাকা। এর ৭০ ভাগ পড়েছে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় আর ৩০ ভাগের কিছু অংশ পড়েছে আমার এলাকায় এবং বাকিটা ঢাকা-৫-এর মোল্লা সাহেবের এলাকায়। এই কাজটা হয়ে গেলে আমাদের এলাকায় আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। এখানে কোনো সরকারি হাইস্কুল ছিল না। আমি জুরাইনে শেখ কামাল সরকারি হাইস্কুল করেছি।

বাংলাদেশের খবর : মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী, যেহেতু এখান থেকে জোটের একজন আছে?

সানজিদা খানম : যে কাজ আমি এখানে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে করেছি, তিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি কর্মী হিসেবে সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আমি আশা করি, উনার বিশ্বাস রাখার জন্য এবং গত ১০ বছর ধরে যে একনাগাড়ে আমি এলাকার মানুষের পাশে থেকেছি, সেজন্য এলাকার মানুষও আমাকে ভোট দেবে, আর দলও আমাকে আবার মনোনয়ন দেবে, যেটা আমি ছেড়েছিলাম ২০১৪ সালে, উইথড্র করেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে। সুতরাং এটা তো আমার পাওনা। এবার তো নেত্রী আমাকে দেবেনই। নমিনেশন আমি পাবই ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : সম্প্রতি ড. কামাল সাহেবদের ঐক্যজোট। আল্টিমেটলি জোটটা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই। এই জোট নিয়ে আপনার মতামত কী?

সানজিদা খানম : এই জোটে কোনো কাজ হবে না। এই জোটে যারা আছেন তাদের চরিত্র যদি দেখেন, তাদের দলের চিত্র যদি দেখেন—তাহলেই বোঝা যাবে তাদের ভবিষ্যৎটা কী? ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তার কী ভূমিকা ছিল? তিনি একটা দল করলেন। সেই দলের কী অবস্থা? একটা সিটও তো পেলেন না জীবনে। তারপর মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেবের ইতিহাসটাও আপনারা সবাই জানেন। জাসদ ছাত্রলীগ করতেন একসময়। তিনি তো কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলেন না। তারপর আপনি বিএনপির কথা চিন্তা করেন— বিএনপি দলের যিনি প্রধান, তিনি তো জেলে আছেন। তারপর ভারপ্রাপ্ত যাকে করা হয়েছে, তিনিও পলাতক। সুতরাং তাদের দলও তো স্কাটার্ড হয়ে গেছে। ওই অর্থে মুসলিম লীগের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই সমস্যা। সুতরাং যাদের নিয়ে জোট করা হয়েছে, এই জোট থাকবে বলে মনে হয় না। আর বি. চৌধুরী সাহেব তো সকালে একটা বলবেন, বিকালে আরেকটা বলবেন। একসময় বলবেন আমি নাই, আবার বলবেন আমি আছি। এই রকম ঐক্য, এটা কিসের ঐক্য? মনে হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী যে দল আছে, এটা তাদেরই কোনো ঐক্য। এটা নির্বাচনের কোনো ঐক্য নয়।

বাংলাদেশের খবর : আইনজীবী হওয়ায় আপনার কাছে একটি বিষয় জানতে চাচ্ছি। সম্প্রতি সাবেক বিচারপতি এস কে সিনহা আমেরিকা থেকে একটি বই প্রকাশ করেছেন এবং প্রেস কনফারেন্স করে বিভিন্ন কথা বলছেন। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনার মতামত কী? 

সানজিদা খানম : এটাও ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ। এটা বিএনপি, জামায়াত ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সিনহার এ সময়ে বই প্রকাশ। আমরা মনে করি, দেশের এখন যে চেহারা— জননেত্রী শেখ হাসিনা পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় না থাকলে তা সম্ভব হতো না। মানুষ কিন্তু এখন কথায় বিশ্বাস করে না, কাজে বিশ্বাস করে। আমার এলাকায় গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন আমি করেছি, শিক্ষার উন্নয়ন, নির্বাচনের সার্ভার স্টেশন ছিল না—সেটা করছি। কলেজ ছিল না, কলেজ করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করেছি। কবরস্থান, শ্মশানঘাটের উন্নয়ন করেছি। জুরাইন কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো রিজার্ভ ছিল না, তাই পার্শ্ববর্তী যে জায়গাগুলো বেদখল হয়েছিল সেগুলো উদ্ধার করেছি মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের জন্য, সেখানে মসজিদও করা হয়েছে। শ্মশানঘাট থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে লাশ পোড়ানোর সুবিধার্থে সেখানে গ্যাস লাইনেরও ব্যবস্থা করেছি। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের ব্যবস্থা করেছি— এগুলো চলমান। দেশের মানুষের কল্যাণে এসব কাজ চলবেই। এই যে সারা দেশের মতো আমার নির্বাচনী এলাকায়ও (ঢাকা-৪) উন্নয়ন হয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনেও এখানে নৌকা মার্কা জয়ী হবে।

 

ROBIN

দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত : তানভীর আহমেদ রবিন

বাবা আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ অবিভক্ত ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক। রবিন আমেরিকার ডিভ্রাই ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমানে ঢাকা-৪ ও ৫ দুটি আসনই নিজ পরিবারের হাতে রাখার জন্য সালাহউদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা-৫ এবং ছেলে রবিন চাইবেন ঢাকা-৪ আসন থেকে। যদিও চূড়ান্ত মনোনয়নের সিদ্ধান্ত দেবে দলীয় হাইকমান্ড এবং মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তানভীর আহমেদ রবিনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের রেজাউল করিম লাভলু

 

বাংলাদেশের খবর : আপনি ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন। আপনার  শিক্ষা ও  রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন। 

তানভীর আহমেদ রবিন : আমার বড়বাবা হাজী জুলফিকার সরদার এবং আমার দাদা হাজী আবদুল বারেক সরদার এলাকার জমিদার ছিলেন। আমার বাবা আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা-৪ ও ৫ আসনে পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। আমি ১৯৯৩ সালে লেখাপড়ার জন্য আমেরিকায় চলে যাই। সেখানে জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল এবং ডিভ্রাই ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করি। লেখাপড়া শেষে দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করি। ১/১১-এর সময় রাজনীতিতে আমার সক্রিয় হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য আমার বাবা আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদসহ শত শত নেতাকর্মী কারাগারে থাকা অবস্থায় দল যখন  বিপর্যস্ত, তখন আমি তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে সাংগঠনিকভাবে ঢাকা-৪ ও ৫ এলাকার দলের দায়িত্ব গ্রহণ করি।

বাংলাদেশের খবর : আপনি কি ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন?

তানভীর আহমেদ রবিন : অবশ্যই আমি মনোনয়ন চাইব। এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মী ও সিনিয়র নেতাদের দাবি আমি আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসন থেকে প্রার্থী হই।

বাংলাদেশের খবর : কেন মনে করছেন দল আপনাকে মনোনয়ন দেবে?

তানভীর আহমেদ রবিন : তৃণমূল থেকে উঠে আসা উদীয়মান সাংগঠনিক কর্মী এবং বিএনপি পরিবারে আমার জন্ম। ১/১১ থেকে আজ পর্যন্ত দল ঘোষিত ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় দল আমাকে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়। আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখার জন্য বর্তমান সরকার আমার বিরুদ্ধে ৮২টি মামলা দায়ের করে এবং আমি পরপর তিনবার কারাবরণ করি। যার কারণে তরুণ প্রার্থী হিসেবে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূল নেতাকর্মী ও জনগণের প্রত্যাশা বিবেচনা করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে, যারা একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের তুলনায় আপনি একেবারেই তরুণ। এ ছাড়া আপনার বাবা সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা-৫ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এক পরিবার থেকে দুজনকে কি দল মনোনয়ন দেবে বলে মনে করেন?

তানভীর আহমেদ রবিন : দলের স্বার্থে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এখানে আমার কোনো মতামত নেই। দলের প্রয়োজনে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। দলীয়ভাবে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমার বাবা বিএনপির নির্বাহী কমিটির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক এমপি আলহাজ সালাহউদ্দিন আহমেদ নির্বাচন করবেন। 

বাংলাদেশের খবর : বর্তমানে দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে। সিনিয়র নেতারা বলছেন আগে বেগম জিয়ার মুক্তি, তারপর নির্বাচন ভাবনা। এলাকাভিত্তিক নির্বাচনের প্রস্তুতি আপনার আছে? 

তানভীর আহমেদ রবিন : দেখুন, বিএনপি বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ও নির্বাচনমুখী দল। দলীয় চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই। তাকে কারাগারে রেখে নির্বাচনের কথা ভাবছি না। এখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র নেতাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো এলাকাভিত্তিক সব প্রস্তুতি আমাদের আছে।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমানে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য যে ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনার মতামত কী?

তানভীর আহমেদ রবিন : তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আমি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশব্যাপী বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন, হামলা-মামলা ও গুম, খুন করে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তরুণ সমাজ আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচির জন্য সিনিয়র নেতাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ রেখেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ মোতাবেক শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা অবৈধ সরকার পতনের লক্ষ্যে যে কোনো কঠোর আন্দোলন ও কর্মসূচি পালনে প্রস্তুত রয়েছে, যার প্রমাণ ৩০ সেপ্টেম্বরের মহাসমাবেশ।

বাংলাদেশের খবর : বর্তমান সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন তরুণ ও নতুন প্রার্থী হিসেবে আপনি কতটা সফল হবেন বলে মনে করছেন?

তানভীর আহমেদ রবিন : বর্তমান সংসদ সদস্য এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নন এবং নিয়মিত এলাকাবাসীর খোঁজখবর নেন না। আমার পূর্বপুরুষ ও আমি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা। এলাকাজুড়ে রয়েছে আমার আত্মীয়-স্বজনের বসবাস। সাংগঠনিকভাবে ঢাকা-৪ এলাকাজুড়ে রয়েছে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান। সেই অবস্থান থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লে কোনো প্রার্থীই আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারবে না ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশের খবর : ঢাকা-৪ আসনে কী কী সমস্যা এখন প্রকট?

তানভীর আহমেদ রবিন : যেসব সমস্যা প্রকট, তার মধ্যে জলাবদ্ধতা, মাদকের আগ্রাসন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, যানজট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা অন্যতম। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads