মো. এমদাদ উল্যাহ, চৌদ্দগ্রাম
মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হলো শিক্ষা। একটি দেশের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার অন্যতম উপায় এ শিক্ষা। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর শিক্ষার প্রথম সোপান হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই স্তরেই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচিত হয়। এ স্তরে শিক্ষার্থী যা শিখবে, যেভাবে শিখবে তারই প্রতিফলন সে তার ভবিষ্যৎ জীবনে ঘটাবে। এ কারণে সারা বিশ্বে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৯০ সালে এ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছে। একজন শিশুর মৌলিক শিখন চাহিদা প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে পূরণ হয়। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে যাতে দেশপ্রেম, নাগরিকতাবোধ, কর্তব্যবোধ, সৃজনশীলতা, অধ্যবসায়, সদাচার, ন্যায়নিষ্ঠা সৃষ্টি হয় সে চেষ্টা করা হয়। এসব গুণ শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করতে প্রতিদিন সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দৈনিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রাত্যহিক সমাবেশ নামে পরিচিত। সরেজমিন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাত্যহিক সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এ সমাবেশে শেখানো হয় এমন উল্লেখযোগ্য চুয়াল্লিশটি স্লোগান হলো-শিক্ষার আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো। নিরক্ষর থাকব না, দেশের বোঝা হব না। পড়ার সময় পড়ব, খেলার সময় খেলব। ধনী গরিব বিভেদ নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই। শিক্ষা আমার অধিকার, শিক্ষা আমার অহংকার। শিক্ষাই জীবনের মূল, ঝরে পড়া বিরাট ভুল। বিদ্যালয়ে আসবে যারা, সুখী জীবন গড়বে তারা। সৎপথে চলব, সুন্দর জীবন গড়ব। সদা সত্য কথা বলব, মোরা সুখী জীবন গড়ব। যার নেই শিক্ষা, তার নেই রক্ষা। কৃষক বলে শ্রমিক ভাই, শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই। লেখাপড়া শিখব, দেশটাকে গড়ব। ধূমপানে বিষপান, করব না করব না। যদি চাও দেশের উন্নতি, শিক্ষা ছাড়া নাইরে গতি। দিন বদলের বইছে হাওয়া, শিক্ষা মোদের প্রথম চাওয়া। শিক্ষা শিক্ষা শিক্ষা চাই, শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই। একীভূত শিক্ষা, হোক মোদের দীক্ষা। লেখাপড়ার বিকল্প নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই। আমরা শিশু জাতির মূল, বিদ্যালয়ে ফোটাই ফুল। শিক্ষিত কন্যা, শতগুণে ধন্যা। নারী পুরুষ সবাই সমান, শিক্ষা দিয়ে করব প্রমাণ। শিক্ষাই শক্তি, শিক্ষাই মুক্তি। নতুন বছর নতুন দিন, নতুন বইয়ে হোক রঙিন। কনুই তুলে মারব হাঁচি, অন্যকে বাঁচাই নিজে বাঁচি। শিশুর বয়স হলে পাঁচ, ভর্তি কর বিদ্যালয় কাছ। শতভাগ ভর্তির হার, বাংলাদেশের অহংকার। নখ কাটি চুল ছাঁটি, থাকব মোরা পরিপাটি। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা, পরিষ্কার রাখব। বাংলাদেশ বাংলাদেশ, চিরজীবী হোক চিরজীবী হোক। এসো বোন এসো ভাই, চলো সবাই স্কুলে যাই। মুসলিম হিন্দু ভাই ভাই, সুস্থ সুন্দর মন চাই। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলব না, পরিবেশ নষ্ট করব না। সুস্থ যদি থাকতে চান, পুষ্টিকর খাবার খান। শতভাগ ভর্তির হার, জাতির জন্য অহংকার। নিয়মিত নখ কাট, রোগ জীবাণু দূরে রাখ। করব মোরা মাদক বর্জন, গড়ব মোরা সুখের জীবন। লেখাপড়া শিখব, নতুন জীবন গড়ব। শিক্ষা জাতির অধিকার, শিক্ষা জাতির অহংকার। লেখাপড়া শিখে মোরা, উঠব হয়ে দেশের সেরা। লেখাপড়া শিখব, সোনার বাংলা গড়ব। বিদ্যালয় আমার ঘর, রাখব সদা পরিষ্কার। লাল ফুল নীল ফুল, শিশু হলো বিদ্যালয়ের ফুল। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, পরিষ্কার রাখব পরিষ্কার রাখব। ছেলেমেয়ে বিভেদ নাই, চলো সবাই স্কুলে যাই।
চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ফালগুনকরা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলেন, ‘প্রাত্যহিক সমাবেশে ছেলেমেয়েরা নীতিবাক্য শেখে। এতে ছেলেমেয়েদের অনেক উপকার হয়।’ এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাকিনা বেগম বলেন, ‘উপজেলায় ১৭৫টি সরকারিসহ তিন শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে প্রাত্যহিক সমাবেশের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুরা ছন্দের মাধ্যমে নীতিবাক্য শেখে। এতে শিশুদের পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ে।