• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ফিচার

‘এলাকার মানুষের জন্য বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি’

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০১৮

সাবিনা আক্তার তুহিন ১৯৭৯ সালের ৩ মে মিরপুর-১ শাহআলী থানার ৮নং ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হাবিবুর রহমান ভুইয়া ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং মা মাহমুদা হাবিব। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি অদৃশ্য এক টান অনুভব করতেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে অনেক জেলজুলুম সহ্য করতে হয়েছে। ২১ দিনের নবজাতক শিশুকে রেখে কারাগারে যেতে হয়েছে। তৃণমূল থেকে উঠে আসা তুহিন আজো নিজেকে একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। সাবিনা আক্তার তুহিন বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি। নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের খবরের বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ সোহান

বাংলাদেশের খবর : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন কি?

সাবিনা আক্তার তুহিন : আমি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী। নেত্রী আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন, আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি কিছু পাওয়ার আশা থেকে নয়। আমার ধ্যানজ্ঞানই হচ্ছে আমার দল ও আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আপনারা জানেন, ’৯৬ সালে পুলিশ আমাকে মেরে ডাস্টবিনে ফেলে রেখেছিল। পুলিশের সেই নির্যাতনে আমার মাতৃত্বের সমস্যা হয়েছিল, অনেক চিকিৎসা করে আমি সুস্থ হয়েছি, আমার ছেলে হয়। আমার ছেলেকে ৯ মাসের পেটে নিয়ে জেল খেটেছি। ওর জন্মের ২১ দিনের মধ্যেই বাচ্চাকে রেখে আমি আবার জেলে গেছি। এত আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ছেলের জন্ম হয় বলে নেত্রী (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) আমার ছেলের নাম রেখেছেন আন্দোলন। কারণ একটা ২১ দিনের বাচ্চাকে রেখে মা জেলে যাওয়া যে কতটা বেদনার সেটা মা ছাড়া কেউ বুঝবে না। ওয়ান ইলেভেনে নেত্রী গ্রেফতার হলে তার প্রতিবাদে আমি কোর্টের সামনে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলে আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। নেত্রীর জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এরপর নেত্রী যখন আমাকে এমপি বানালেন তখন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছি নিরলসভাবে। কাজেই কাজ করার জন্যই আমি ঢাকা-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছি।

বাংলাদেশের খবর : সেখানে একজন দলীয় এমপি রয়েছে, তারপরও কেন আপনাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে আপনি মনে করেন?

সাবিনা আক্তার তুহিন : দেখুন, একজন তৃণমূলের কর্মী হিসেবে নেত্রী আমাকে এমপি বানিয়েছেন। এর জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। এমপি হয়েছি এলাকার জন্য। আমি যে পরিমাণ কাজ করে যাচ্ছি সে রকম কেউ করেছে বলে আমার মনে হয় না। আমি এটা বলব না যে, এলাকায় যিনি বর্তমান নির্বাচিত সংসদ সদস্য আছেন আমার বড়ভাই আসলাম ভাই, তিনি কোনো কাজ করেননি। আমি কারো বিপক্ষে কোনো কথা বলতে চাই না। আপনারা এলাকায় গেলে দেখবেন এলাকার প্রতিটি লোকের সঙ্গে আমার একটি পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। সবসময় আমি এলাকার মানুষের পাশে থাকি, এলাকায় প্রতিনিয়ত আমি ঘুরে বেড়াই। কাজেই গ্যাসের সমস্যা, বিদ্যুতের সমস্যা যেটাই হোক আমি জানতে পারি এবং তখনই সেটা সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিতে পারি। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আমি ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিই। আমাদের সরকারের উন্নয়নের কথা সবার কাছে বলি। বিগত কয়েক বছর যাবৎ এলাকায় উঠান বৈঠক করে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি আর আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরছি। যেটি এলাকাতে কেউ করেনি আমার মতো। এক বছর আগে থেকে আমি উন্নয়নের লিফলেট বিতরণ করেছি এলাকায়। ২৯ বছর আমার রাজনীতির পথচলা, আমার বয়স কম, কিন্তু রাজনীতির বয়স অনেক এমপির চাইতে বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এবার এলাকায় জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেবেন। যদি জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়, যদি আমি যোগ্য হই, তবে ইনশাআল্লাহ আমি পাব। কাজেই আমি মনে করি, আমার ত্যাগ আর আমার কর্ম আমার দলের প্রতি আস্থা বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার কমিটমেন্টই আমার আগে। আমি তৃণমূল থেকে এসেছি। এখানে অনেক টাকাওয়ালারা চেয়েছিলেন, কিন্তু নেত্রী আমার মতো একজন তৃণমূলের লোককে এমপি করেছেন। তারপরও বলব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত আমার কাছে চূড়ান্ত ও মাথা পেতে নেব। আমার মতো তুহিনের চাইতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের মানুষের খুব দরকার। তাই আমার কারণে যদি একটি সিট হারায় সেটা আমি কোনো দিনও চাইব না। আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব, অন্যকে দিলেও তার পক্ষে কাজ করব।

বাংলাদেশের খবর : জনগণ কেন আপানাকে ভোট দেবে?

সাবিনা আক্তার তুহিন : আমি আমার এলাকার মানুষের জন্য বিশেষ করে নারীদের জন্য মহিলাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে চলেছি। আমার এলাকায় মোট ভোটারদের মধ্যে ৬০ ভাগ মহিলা ভোটার এবং আমি বিশ্বাস করি, এলাকার মহিলাদের জন্য যতটুকু কাজ করেছি তারা নিজে থেকেই আমাকে ভোট দেবে। আমি যদি কাউকে ৫০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করি, সেই টাকা খরচ করলেই শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আমি যদি তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর সাহায্য করি, তবে সে আত্মনির্ভর হলো। আমার ৭টা ওয়ার্ড, ১টা ইউনিয়নে আমি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ব্যবস্থা করা আছে। এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া মহিলাদের মধ্যে প্রতিমাসে ১০টা করে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। যেমন সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আপনারা যদি কাউকে মাছ দেন, তবে সে মাছ রান্না করে খেয়ে ফেলবে। আর যদি তাকে মাছ ধরার ট্রেনিং দেন, তবে সে নিজে মাছ ধরে খেতে পারবে।’ এছাড়া করছি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার। রাত ১২টার সময় যদি শুনি কেউ সমস্যায় পড়েছে আমি চলে যাই। আমি কিন্তু নিজে প্রার্থী হতে চাইনি, এলাকার মানুষ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাচ্ছে এবার আমি যেন প্রার্থী হই। আমার র্যালিতে ৩০ হাজার লোক হয়, কিন্তু আমার একটা টাকা খরচ হয় না। কর্মীরা ভালোবেসে নিজেরা টাকা খরচ করে ব্যানার-ফেস্টুন বানিয়ে নিয়ে আসে। এসব আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা নয়তো কী? আমিও সবসময় সবকিছু এলাকার মানুষের সঙ্গে শেয়ার করি। কারণ তারা আমার সব কিছুর অংশীদার। আমি নিজেও একজন কর্মী। আমি যেহেতু সবসময় মাঠে থাকি, অন্য কর্মীরাও স্পিড পায়। আমি এলাকায় থাকি। অন্যদের মতো গুলশান, বনানী বা ন্যাম ভবনে থাকি না। সপ্তাহের সাতদিন আমি এলাকার মানুষের কাজেই থাকি বলে জনগণের দাবিতে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। এই এলাকায় আমার জন্ম, এলাকার সবাই আমাকে তুহিন নামেই ডাকে, পুরো নামে কেউ আমাকে ডাকেও না। এলাকার সবাই আমাকে তাদের নিজের মেয়ে মনে করে এবং এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। কাজেই এলাকার মানুষ আমাকে এবার যখন নির্বাচন করতে বলছেন, ইনশাআল্লাহ তারাই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

বাংলাদেশের খবর : বিগত সময়ে আপনার এই এলাকায় আপনার দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। উন্নয়ন কি হয়েছে সেই দিক থেকে?  

সাবিনা আক্তার তুহিন : দেখুন, আসলাম ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতো। তিনি আমার দলের মাননীয় সংসদ সদস্য, তার প্রতি অবশ্যই আমার সম্মান আছে। আমি কাউকে অযোগ্য বলতে চাই না, এলাকার জনগণই সব বলবে। এলাকায় মাদকের সমস্যা আছে। আছে আরো নানা সমস্যা।

বাংলাদেশের খবর : আপনিও তো এমপি, আবার মনোনয়ন চাইছেন। কী সমস্যা সমাধান আপনি করবেন?

সাবিনা আক্তার তুহিন : মাদকের বিস্তার আছে। এলাকাকে মাদকমুক্ত, দখলমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত করব। এলাকায় পানি জমে যায়। গ্যাসের সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করব। মহিলা এমপি বলে যে কিছু করতে পারব না তা ঠিক নয়। ইচ্ছা আর সততা থাকলে সব সম্ভব। এবং এটা বলব আমরা যারা রাজপথে দীর্ঘদিন পরীক্ষিত, তারাই মনোনয়ন পাবে। আমি মিরপুরকে একটি মডেল হিসেবে তৈরি করতে চাই। একটি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সবাইকে নিয়ে আমি ফার্স্ট হব, একা নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads