• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইছামতী নদীর পানিতে আহার খোঁজেন ছখিনা বেগম

ছখিনা বেগম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

ইছামতী নদীর পানিতে আহার খোঁজেন ছখিনা বেগম

  • কে এম আনিছুর রহমান, সাতক্ষীরা
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ নাংলা গ্রামের মৃত আকবর আলীর স্ত্রী ছখিনা খাতুন। টানা ৩৯ বছর ধরে চোখের জলে স্বপ্ন ভাসিয়ে সীমান্ত নদী ইছামতীর পানিতে জাল টেনে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর কপাল ভাঙলেও মন ভাঙেনি তার। ওপারে ভারত, এপারে বাংলাদেশ, মাঝখানে ইছামতী। এই ইছামতীর বুকেই নিবিষ্টমনে ঠেলা জাল ঠেলে প্রায় ৪০ বছর ধরে সংসারের হাল ধরে রেখেছেন শক্ত করে। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ছখিনা খাতুনকে বার্ধক্য যেমন কাবু করতে পারেনি, তেমনি দীর্ঘ চল্লিশ বছরের জীবন সংগ্রামেও তিনি দমে যাননি এতটুকু। জীবনের সঙ্গে হার না মানা অবিরাম সে সংগ্রাম শুরু হয়েছে ১০-১১ বছর বয়স থেকেই। গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করা ছখিনা খাতুন বাবার সংসারে চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন। অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক দীনতার কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। অল্প বয়সেই বাবার সঙ্গে নদীতে জাল টেনে রেণু পোনা ধরা শুরু করেন। সারাদিন ইছামতীর বুক ছেনে রেণু পোনা ধরতেন। ওই রেণু পোনা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে বিক্রি করত বিভিন্ন মৎস্যঘেরে। সারাদিনের পরিশ্রমের পর রেণু পোনা বিক্রি করে আয় হতো  ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সেই যে শুরু, এখন পর্যন্ত এই ইছামতী নদীর সঙ্গেই তার জীবনের মিতালি।

ছখিনা খাতুন বলেন, ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরেই তার জীবন কেটেছে। এখনো এই মাছ ধরেই চলে তার সংসার। এই আয় দিয়েই তার একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের সব খরচ মিটাচ্ছেন।

নদীতে মাছ ধরতে গিয়েই পরিচয় আকবর আলীর সঙ্গে। পরে দুজন সংসার পাতেন দক্ষিণ নাংলা গ্রামে। সংসার চলছিল দুজনের সমান পরিশ্রমে। দুজনই মাছ বিক্রি করে যা পেতেন, তাতে সাদামাটাভাবেই চলছিল সব। এর মধ্যেই কোল জুড়ে আসে তাদের একমাত্র ছেলেসন্তান। সংসারের চাহিদা যখন বাড়তে থাকে, তখন বিয়ের সতেরো বছরের মাথায় স্বামী মারা যায়। আবারো তার জীবনে দুর্বিষহ অবস্থা নেমে আসে। সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। এই দুর্দিনের মধ্যেও যেমনি শক্ত হাতে ধরেছেন সংসারের হাল, তেমনি টেনেছেন মাছ ধরার জাল।  ইছামতী নদীতেই মাছ ধরে কোনো রকমে সংসার চালাতে থাকেন। জীবনের প্রয়োজনে তিনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি; বরং নদীর সঙ্গে তার জীবনের সম্পর্ক গভীর থেকে আরো গভীরতর হয়েছে। ফলে ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত, আবার কোনো কোনো সময় দুপুরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন। ছখিনা আরো জানান, শুধু তিনিই নন, এই নদীতে মাছ ধরে তার এলাকার এবং আশপাশের অনেক নারী-পুরুষ। এই নদীর সঙ্গে মিশে আছে তাদের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads