• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
অসহনীয় যন্ত্রণা শেষে প্রিয়াঙ্কা এখন সুস্থ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

অসহনীয় যন্ত্রণা শেষে প্রিয়াঙ্কা এখন সুস্থ

  • সাহিদা সাম্য লীনা
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৮

আমরা পারি বটে! আমরা সহ্য করি অত্যাচার। আমাদের সহ্যসীমা আছে। হয়তো এর মধ্যে কেউ বাঁচে, কেউ মরে। প্রিয়াঙ্কা মরেনি বটে তবে জীবনে যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো তা এই শিশুটির শৈশবের স্মৃতিকে বিষাদময় করে তুলবে বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ২৩ অক্টোবর ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের গজারিয়া কান্দি গ্রামে এক বীভৎস ঘটনার আত্মপ্রকাশ হয় জনসম্মুক্ষে। 

মাত্র পাঁচ বছরের মেয়ে প্রিয়াঙ্কার শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে কবিরাজি চিকিৎসার নাম করে। এক বছর বয়সে সিলেটের সুফিয়া নামে এক মহিলার কাছ থেকে প্রিয়াঙ্কাকে দত্তক নেয় শাহেনী। সেই থেকে শাহেনী দেখভাল করছে প্রিয়াঙ্কার। কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে বেড়াতে আসে শাহেনী। তখন প্রিয়াঙ্কার অদ্ভুত আচরণ দেখে শর্শদী বাজারের লন্ড্রি দোকানদার অমৃত দাস ও আবদুল্লাহ নামে দুই কবিরাজ প্রিয়াঙ্কাকে ঝাড়-ফুঁক ও মোমবাতির ছ্যাঁকা দিয়ে চিকিৎসা দেন। পরে কবিরাজদের কথামতো শাহেনীও তাকে প্রতিদিন মোমের ছ্যাঁকা দিতেন। এরপরই  প্রিয়াঙ্কা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে পাশের বাড়ির একজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে শাহেনীকে সে রাতেই এবং তার দেওয়া তথ্যে অপর দুই কবিরাজকে সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর নির্যাতনকারী শাহেনী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করে বলেছেন, প্রিয়াঙ্কার ওপর জিন ভর করত। সে সময় প্রিয়াঙ্কার শরীরে আগুনের ছ্যাঁকা দিলে জিন চলে যেত। আর সে কারণেই তাকে তিনি আগুনের ছ্যাঁকা দিতেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েটির সারা শরীর মোমবাতির আগুনে ছিদ্র হয়ে গেছে। তার গায়ে আগুনের ছ্যাঁকা দিয়ে জিন তাড়ানোর নামে ওই দুই কবিরাজ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেনও বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নির্যাতনের শিকার শিশু প্রিয়াঙ্কা ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খবর পেয়ে পুলিশ তদন্ত করে তার ওপর নির্যাতনের প্রমাণ পায়।

মোমবাতির আগুনে ঝলসানো প্রিয়াঙ্কাকে দেখে নির্বাক প্রতিবেশীরা। নিষ্পাপ শিশুটির ওপর কতটা অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে তা তার শরীরের দগদগে চিহ্নগুলোই বলে দেয়। প্রিয়াঙ্কার প্রতি যিনি মমতার হাত বাড়িয়েছেন, তিনি সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবির। তিনি জানান, প্রিয়াঙ্কা আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছে। ওকে সম্পূর্ণ সুস্থ করার জন্য আমরা সদা তৎপর। ধীরে ধীরে ওর শরীরের ক্ষতও একসময় চলে যাবে।

অবশেষে প্রিয়াঙ্কার ওপর অত্যাচার শেষ হয়েছে। অসহ্য যাতনায় নিঃশেষ দেহ নিয়ে বাচ্চাটির হাসপাতালের বেডে কাতরানোর পালা শেষ হয়েছে। প্রিয়াঙ্কা এখন হাসছে, খেলছে, খাচ্ছে। অবুঝ পাঁচ বছরের শিশুর শিশুত্ব কেড়ে নেওয়া সহজ কিন্তু তা ফিরিয়ে আনা সময়ের ওপরই বর্তায়। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads