• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
পিউ ফিলোমিনা ম্রংয়ের দৃপ্ত পথচলা

নারী নেত্রী মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

পিউ ফিলোমিনা ম্রংয়ের দৃপ্ত পথচলা

  • হাবিবুর রহমান, মধুপুর
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

চশমার ফ্রেমে চোখ। মান্দি রীতিতে দকশাড়ি দকমান্দা পরা। কখনো বা শাড়ি পরিহিত। শুদ্ধ বাংলায় যেমন কথা বলেন, তেমনি নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর গারো সমাজে গারো ভাষায়ও কথা বলেন। একজন আদর্শ মমতাময়ী মা। দক্ষ শিক্ষক। সুদক্ষ সংগঠক। একজন সমাজসেবিকা হিসেবে যেসব গুণ থাকা দরকার, তার সবটুকুই রয়েছে তার মধ্যে। তিনি হলেন মধুপুর অঞ্চলের পরিচিত মুখ নারী নেত্রী মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং।

১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্রে সম্ভ্রান্ত গারো পরিবারে ফিলোমিনা ম্রং জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম স্বর্গীয় যোগেশ জন মৃ, মায়ের নাম নিরদা সেলিনা ম্রং। ৩ ভাই ও ৫ বোন। তিনি পঞ্চম। তিনি জলছত্র  মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে কর্পোস খ্রিস্টি নিম্নমাধ্যমিক পাস করেন। মধুপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৮৫ সালে মধুপুর কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৯১ সালে যে স্কুলে তার হাতেখড়ি হয়েছিল, সেই জলছত্র কর্পোস খ্রিস্টি উচ্চ বিদ্যালয়েই বিএসসি শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। শিক্ষকতা চলাকালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড ও এমএড কোর্স করেন। এসএসসি পাসের পরই তার বিয়ে হয় এবং ছাত্রজীবনে তিনি দুই সন্তানের মা হন। বিয়ে, সন্তান মানুষ করা তার পড়াশোনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি, থেমে থাকেনি তার পড়াশোনা। অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর অধ্যবসায় থাকলে যে কোনো কাজেই চূড়ান্ত সফলতা আসে, তিনিই তার বাস্তব প্রমাণ। একদিকে যেমন সংসার করেছেন, অন্যদিকে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। নিজের পড়াশোনা, সংসারের পাশাপাশি দুই সন্তানকে পড়াশোনা করিয়ে এমএ পাস করিয়েছেন।

সাহসী এ নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল রাজনীতিতেও। আওয়ামী লীগের তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন তিনি।  ১৯৯৬ সালে গারো জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি তাকে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মনোনীত করেন। পরে একই সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মধুপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। সেই থেকে শুরু হয় রাজপথে মিছিল মিটিংয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ। অল্পদিনেই নিজের শ্রম ঘাম এবং মেধা দিয়ে সবার মন জয় করতে সক্ষম হন। এ ছাড়া তিনি কাল্ব, একটি বাড়ি একটি খামার, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, আকুল, মনিকা সংঘ, ওয়াইএমসিএসহ নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ ছাড়া নানা সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন। অবসর সময়ে তিনি খবরের কাগজ, বই পড়তে পছন্দ করেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি সবার প্রিয় দিদি। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। বাকি সময়টুকু সমাজের নানা কাজে যোগদান করেন। নারী উন্নয়নে তিনি সমাজে নানা ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, গারো সমাজে উচ্চশিক্ষার হার কম। চাকরি কম। আদিবাসীদের এখনো নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাটা  তিনি মেনে নিতে পারেন না। তার জাতিগোষ্ঠীকে কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে তিনি চিন্তা করেন। কীভাবে সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার জাতিগোষ্ঠীকে সামনের দিকে ধাবিত করা যায়, এ ভাবনা তাকে তাড়া করে। সবশেষে একটি সুপ্ত ইচ্ছাই তিনি পালন করেন। তিনি জানান, সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে আছেন কিন্তু গারো নারীদের কথা বলার জন্য কোনো প্রতিনিধি নেই। তাই তিনি গারো জনগোষ্ঠীর অধিকার ও পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর কথা সংসদে বলার বাসনা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads