• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ছাত্রমেসে রান্নার কাজ করে চলছে কণা বেগমের জীবন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

ছাত্রমেসে রান্নার কাজ করে চলছে কণা বেগমের জীবন

  • আসাদুজ্জামান আসাদ, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
  • প্রকাশিত ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

ময়মনসিংহে ফুলবাড়িয়া উপজেলা পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী কণা বেগম। গরিব পরিবারের সন্তান কণা, জন্মের পর থেকেই ভাগ্যবিধাতা যেন বিরূপ তার প্রতি। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের একমাত্র আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেলে সংসার চালাতে হাল ধরেন কণা বেগম। গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কণা বেগম ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে নবম সন্তান। অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনা সম্ভব হয়নি। বিয়েও হয়ে যায় মাত্র ১২-১৩ বছরে বয়সে। ২০০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর ৩ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়েন। অসহায় মা-স্বামীহারা বিধবা কণা বেগমের সবশেষ কিছু ঘটিবাটিই ছিল সম্বল। মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসে কিন্তু কণার জীবনে তা আসেনি। স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোপুরিই বদলে যায় সংসারের চিত্র। এতকিছুর পরও হার মানেনি সে। স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে বাড়ির পাশের এক নারীর সহযোগিতায় শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন ছাত্রমেসে রান্না ও বাসাবাড়িতে কাজ করে ছেলেমেয়েদের নিয়ে জীবনের অন্ধকার কাটিয়ে বাঁচার সংগ্রামে লিপ্ত হয় কণা বেগম। তার জীবনের কথা, বেঁচে থাকার কাহিনী বলতে গিয়ে কান্নাজড়ানো গলায় তিনি জানান, অনেক রাত কেটেছে সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে না পেরে, অনাহারে থাকতে হয়েছে এক কাপড় পরে। সে অবস্থা থেকে নিজের পরিশ্রম দিয়ে তিলে তিলে পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন নিজেদের অবস্থানের।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কণা বেরিয়ে যান জীবনযুদ্ধে। এলাকার বিভিন্ন ছাত্রমেসে রান্না করে বাকি সময় বিভিন্ন বাসায় কাজ করে সন্ধ্যায় আসেন নিজ ঠিকানায়। কোনো ছুটি নেই, বিশ্রাম নেই। চলছে এক নারীর বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধ। কণা বেগম বলেন, মৃত্যুই হবে তার জীবনে ছুটির দিন, এর আগে নয়। ৬ মাস আগে ফুলবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া তাকে একটি বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছেন। সেই ভাতার কার্ড থেকে গত ৬ মাসে ৩ হাজার টাকা পেয়েছেন কণা বেগম। বাপ-ভাইয়ের ভিটায় ছোট্ট একটি ছাপরা ঘরে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা বেদনা বুকের মাঝে চাপা দিয়ে অসহায় এক নারী প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। ছেলেটাকে নিয়ে কণা বেগমের স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। বড় হয়ে মায়ের পাশে থেকে সংসারের হাল ধরবে। সে স্বপ্নও পূর্ণ হলো না কণা বেগমের। মাকে না জানিয়ে পালিয়ে চলে গেছে ঢাকায়। ঢাকায় কী কাজ করে কেমন আছে মা জানে না। তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনার শেষ নেই কণা বেগমের। তাদের লেখাপড়া, আগামী দিনগুলোতে কী হবে। নিজের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা তার নেই। ছেলেমেয়েদের চিন্তায় দু’চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এতকিছুর পরেও থেমে যায়নি তার জীবনচলা। তার সন্তানদের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছাত্রমেসে রান্না, বাসাবাড়িতে কাজ করে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাবেন কণা বেগম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads