• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ছাত্র আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন ও ছাত্রদল

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

ছাত্র আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচন

  • আনোয়ার বারী পিন্টু
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হককে মেনে নেওয়া হয়েছে। প্রমাণ হয়েছে, সাংগঠনিকভাবে সম্মিলিত হয়ে রুখে দাঁড়াতে পারলে সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। কোটা আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছিল। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ ডাকসুতেও প্রমাণিত হলো নুরুল হক নুরের বিজয় মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। ‘ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি, বদলে দেবে পরিস্থিতি’- এই কিসিমের স্লোগান দিয়ে বসে থাকলেই বিজয় আসে না। সাংগঠনিক চর্চা না করে গ্রুপে গ্রুপে সবাই নেতা হলে শুধু পরাজয় আসে না, চেপেও ধরে। দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে নিশ্চিতভাবেই ডাকসুতে অনিয়ম এবং জোরজুলুম হবে এটাই স্বাভাবিক। এই সত্য জেনে এবং মেনে নিয়ে কতটুকু নিজস্ব সক্ষমতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় শামিল হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রশ্নটা সেখানেই। ছাত্রদলের সাংগঠনিক ভিত্তি কতটা শক্তিশালী তা বোঝার জন্য মাত্র দুটি নমুনাই যথেষ্ট : 

ক. ডাকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী এজিএস প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী ভিপি এবং ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর জিএস প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খান ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি নুরুল হক নুর ভিপি প্রার্থী হয়েছেন। এরা সবাই শুধু ঢাবিতেই নয়, সমগ্র দেশেই পরিচিত মুখ। এই তারকা কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ছাত্রদলের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ভিপি পদে ছাত্রদলের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও জিএস পদে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আনিছুর রহমান অনিককে। আমি আশ্চর্য হলাম এই অসম অবস্থা দেখে?  এমন প্রার্থিতার মাধ্যমে ছাত্রদল সম্পর্কে অন্যান্য ছাত্রসংগঠন অবশ্যই মনে করতে পারে, ছাত্রদল থেকে প্রার্থী হওয়ার মতো কেন্দ্র বা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় কোনো যোগ্য ছাত্রনেতা তৈরি হয়নি! অথবা তাদের সাংগঠনিক কোনো ভিত্তিই নেই? ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রকরা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন।

খ. ডাকসুতে পাঁচটি ছাত্রী হলের চারটিতেই স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীরা ভিপি পদে জয়লাভ করেছেন। এরা কেউ ছাত্রলীগ সমর্থন করে না বরং ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এদের দরাজ কণ্ঠের স্লোগানে বার বার ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়েছে এবং তারা মার খেয়েছে। লড়াই তো দূরে, ছাত্রীদের এসব হলে ছাত্রদল কোনো প্যানেলই দিতে পারেনি। কেন পারেনি এর উত্তর আছে কি নেতাদের কাছে? ইতিহাসের সবচেয়ে সঙ্কটময় অবস্থায় পড়েও সম্ভবত ছাত্রদল বিষয়ে বিএনপি নেতাদের হুঁশ ফেরেনি। বোধশক্তি অকেজো হলে ফেরার সম্ভাবনাও নেই।

সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিটি গঠন না করে ছাত্রত্বের বয়স শেষ করে পরিকল্পিভাবে ভবিষ্যৎ নেতা সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কালে-ভদ্রে কমিটি করা হলেও দুজন কিংবা সুপার ফাইভ নাম দিয়ে একটি মুরব্বি তালিকা ঘোষণা করা হয়। এরপর কাজ একটাই- মূল দলের নেতাদের কীর্তন, স্লোগান। ফলে বর্তমানে ছাত্রদল বিকট এক অমেরুদণ্ডী প্রাণীতে পরিণত হয়েছে, যার হতভম্ব্ব রূপ আমরা ডাকসুতে দেখেছি। ছাত্রদল একটি পদও ছিনিয়ে আনতে পারেনি।

রাজনীতি কোনো ছেলেখেলা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে দেশ এবং মানুষের ভাগ্য জড়িত থাকে। এটা কোনো নাটক মঞ্চায়নের জায়গা নয়। প্রশ্ন হলো, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি সম্পাদকরা কেন ভিপি, জিএস প্রার্থী হতে পারেননি। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাবিতে কেন যেতে পারেন না? তারা বহিরাগত, নিয়মিত ছাত্র নয়। বিএনপি নেতারাই এদের লালন করছেন, তাই নেতারা এর দায় এড়াতে পারেন না।

 

লেখক : সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads