• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন

প্রতীকী ছবি

ফিচার

ওবায়দুল কাদেরের হার্ট অ্যাটাক

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন

  • মোহন রায়হান
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে এখন সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি আছেন। এটা ছিল সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক। সাধারণত এ ধরনের অ্যাটাকে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়। মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ অনুগ্রহে তিনি বেঁচে আছেন। তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতের জন্য ডেকে আনা হয় সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং উপমহাদেশের কিংবদন্তি হার্ট সার্জন ডা. দেবী শেঠিকে। শেঠির পরামর্শে কালবিলম্ব না করে তাকে দ্রুত সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। তবে বাংলাদেশের ডাক্তাররা ওবায়দুল কাদেরকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন বলে দেবী শেঠির বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানায়। যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশে সফল চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হতো, তাহলে একটি উদাহরণ তৈরি হতো। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদও হূদরোগে আক্রান্ত হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, ‘কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যদি অন্য দেশে চিকিৎসা নিতে চান, তার অর্থ হলো- তার নিজ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা একদম ভালো নয়। এটা তার ব্যর্থতা। আমি নিজে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারলেও আমার জনগণের তো সেই সামর্থ্য নেই।’ নিজের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করে তিনি দেশেই চিকিৎসা করিয়েছিলেন এবং এখনো সুস্থ আছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকেও দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করে দেশেই চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলতে শুনেছি। সেজন্য আপনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের আশা একদিন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, ধনাঢ্য ব্যক্তিরাসহ সবাই নিজের দেশেই চিকিৎসা করাতে পারবেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হবে না।

বর্তমান আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে এই মানুষটি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অসুখ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন! শুধু ওবায়দুল কাদেরই নন, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ  পেশাজীবি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন কোনো শ্রেণি নেই যাদের মধ্যে হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ নেই। শুধু বাংলাদেশই নয়, আধুনিক যন্ত্রনির্ভর এই মুনাফাকাঙ্ক্ষী শতাব্দীতে সারা বিশ্বেই এসব জীবন-ঘাতক রোগ ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। হূদরোগ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিলার হিসেবে উদ্ধত! পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লোক মারা যায় হূদরোগে। প্রতিদিন হূদরোগে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে সারা বিশ্বে, প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার ৩০০, প্রতি মিনিটে ৩৮ জন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে মারা যায় ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯১ জন, প্রতিদিন মারা গেছে ৩০৯ জন। অথচ একটু স্বাস্থ্যসচেতন হলেই মানুষ এই ভয়াবহ রোগগুলোকে প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে পারে অর্থাৎ এগুলো থেকে দূরে থাকতে পারে।

১৫টি মূল কারণে মানুষের হার্টের ব্লক বা হূদরোগ হয়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডাক্তার অপারেশন করুক আর সবচেয়ে দামি রিং লাগান, ওই ১৫টি কারণ দূর না করলে আবার ব্লক হবে। যত রিং পরান, যতবার অপারেশন করান, বার বার হবে। ওই কারণগুলো দূর করার প্রধান উপায় লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। সব ডাক্তারই সে কথা স্বীকার করবেন কিন্তু কীভাবে কোন্ কোন্ বিষয়ে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলার কিংবা তদারকি করার সময় তাদের নেই! অপারেশন বা রিং হার্টের একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা, বরং স্থায়ী ব্যবস্থা হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাভ্যাস পরিবর্তন করা। অর্থাৎ হার্টের চিকিৎসা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নেই। যে ব্যবস্থার উদ্ভাবক আমেরিকার নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির জনক ডা. ডিন অর্নিশ আর এই উপমহাদেশে তার অনুসারী ভারতের ডা. বিমল ছাজেড়, এমবিবিএস, এমডি। ডা. অর্নিশের জবাবৎংধষ ঐবধৎঃ উরংবধংব চিকিৎসা পদ্ধতির আলোকে ডা. ছাজেড় ঝপরবহপব অহফ অৎঃ ঙভ খরারহম (ঝঅঅঙখ) চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছেন, যা হার্টের রোগের পূর্ণাঙ্গ এবং স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। পাশাপাশি একই পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। কারণ হার্টের রোগের ১৫টি কারণের মধ্যে এই তিন রোগ অন্যতম। বাংলাদেশে একমাত্র সাওল হার্ট সেন্টারই এ পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাব্যবস্থা দিয়ে থাকে। গত ১০ বছরে সাওল ৩০ হাজারেরও বেশি রোগীকে এই যুগান্তকারী চিকিৎসাসেবায় সুস্থতা দিয়েছে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে কলকাতা অ্যাপোলোতে হার্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সেখানে ডা. বিমল ছাজেড়ের ‘হূদরোগ মুক্তির পাঁচটি সহজ পদক্ষেপ’ বইটি পড়ে রিং বা বাইপাস না করেই সাওল পদ্ধতি অনুসরণ করি এবং সুস্থ হয়ে ডা. বিমল ছাজেড়কে বাংলাদেশে নিয়ে আসি এবং সবার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জায়গা-জমি বিক্রি করে ঢাকায় সাওল হার্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করি। সম্প্রতি চট্টগ্রামেও একটি শাখা হয়েছে। আমাদের প্রতীতি হলো, সাওল পদ্ধতি অনুসরণ করলে যাদের হার্ট ব্লকেজ হয়েছে, তারা যেমন বিনা রিং, বিনা অপারেশনে হার্টের রোগ প্রতিকার করতে পারবেন তেমনি যাদের এখনো হার্টের রোগ হয়নি তারা এর থেকে মুক্ত থাকবেন আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার আর মেনটাল স্ট্রেস। শুধু দরকার স্বাস্থ্য সচেতনতা। যে কারণে আমরা একটি স্বাস্থ্য সচেতনতার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে ফ্রি হার্ট, ডায়েট, ইয়োগা-মেডিটেশন সেমিনার এবং দেশব্যাপী জাতীয় ও আঞ্চলিক সেমিনারের আয়োজন করছি। আমি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, যারাই এই সেমিনারে অংশ নেবেন, তারা এসব মহাঘাতক রোগ থেকে আমার মতো দূরে থাকতে পারবেন।

আমি মনে করি ওবায়দুল কাদেরের হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া উচিত। শুধু সচেতন হলেই চলবে না, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে কেউ আর হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়ে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে জরুরি এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। সাওল হার্ট সেন্টার সেই কাজটি যারপরনাই গুরুত্ব দিয়ে করে থাকে। সুস্থ থাকার পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে সেমিনারগুলোর মাধ্যমে সবিস্তারে জানিয়ে থাকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জনাব ওবায়দুল কাদের আপনার অত্যন্ত স্নেহভাজন এবং বিশ্বস্ত। তিনিই আজ সিভিয়ার হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বেডে শয্যাশায়ী।  দেশের অসংখ্য রোগীর অবস্থা একইরকম। তাই হূদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের মতো মহামারী অসুখ প্রতিরোধে সচেতনতা, কম খরচে উন্নত চিকিৎসার পাশাপাশি লাইফস্টাইল পরিবর্তনে দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিন। তাহলেই আমরা ভালো চিকিৎসার নিশ্চয়তা পাব এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যময় জীবনযাপন করতে পারব।

 

লেখক : কবি, প্রতিষ্ঠাতা- সাওল হার্ট সেন্টার, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads