• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ফিচার

জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ‘জয় বাংলা’

  • মো. জুবায়ের হোসাইন
  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৯

‘জয় বাংলা’ শব্দদুটি ছোট কিন্তু শব্দদুটিতে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, ভালোবাসা ও সংগ্রামের ইতিহাস। আর এই আবেগের জায়গা থেকে কখনো আমরা গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছি, কখনো নিজেদের অধিকার চেয়েছি, স্বাধীনতাও ছিনিয়ে এনেছি। বাঙালি জাতির অস্তিত্বে মিশে আছে এই ‘জয় বাংলা’ জয়ধ্বনি। স্বাধীনতা আসবে বলেই ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি সৃষ্টি হয়েছিল।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৬৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষা দিবসের প্রস্তুতিতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মিসভায় প্রথম ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তোলেন আফতাব আহমাদ। মূলত পাকিস্তান জিন্দাবাদের বিপরীতে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনির উদ্ভব হয়। অনেক বাধা অতিক্রম করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ১৯৭০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম জনসম্মুখে আসে। ১৯৭০ সালের ১১ জানুয়ারি সিরাজুল আলম খান আওয়ামী লীগের মঞ্চ থেকে প্রথম ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানান। শেখ মুজিব ওই সম্ভাষণ গ্রহণ করেন। জয় বাংলার স্বীকৃতির ক্রমবিকাশ সম্পর্কে মোস্তাফা জব্বার ‘একাত্তর ও আমার যুদ্ধ’ বইয়ে লিখেছেন, “স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, বঙ্গবন্ধু প্রথম ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেননি। বরং জয় বাংলা স্লোগান প্রবলভাবে জনপ্রিয় হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে এই স্লোগানটির অনুমোদন নেয়া হয়।” শেখ মুজিব প্রথম ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি উচ্চারণ করেন ৭ জুন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে। তা ছাড়া স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বিভিন্ন স্থানে ভাষণ শেষে ‘জয় বাংলা’ বলে শেষ করতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণাময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি ব্যবহার করা হতো। সর্বোপরি আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কেন্দ্রবিন্দু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। আর এই মুক্তিযুদ্ধের সময় দল মত নির্বিশেষে সবার প্রধান স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। একটি রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন দলের, বিভিন্ন মতানুসারী মানুষ থাকবেই কিন্তু এসবকে উপেক্ষা করে সবাই আবদ্ধ হয় একই বন্ধনে, যার প্রমাণ আমরা ’৭১-এ দেখেছি ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্যে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জ্বালাময়ী এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এখনো জাতীয় স্লোগানের স্বীকৃতি পায়নি, হয়ে ওঠেনি আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও আমাদের উজ্জীবিত হওয়ার মূূলমন্ত্র একপেশে হয়ে আছে; কিন্তু আদৌ তা হওয়ার কথা ছিল না। কেননা জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্থান অনন্য। জাতিগতভাবে ৯৮ দশমিক ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি। প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠী একই ধর্মে বিশ্বাস করে। অন্তত ৯৮ শতাংশ জনগণ বাংলায় কথা বলে। এসব বন্ধন মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে, এই বাংলাদেশই আজ বিশ্বের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার একটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আর এই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই ‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগানে রূপ না নেওয়ার অন্যতম কারণ।

১৯৭১-এ সবার এক স্লোগান, এক আবেগ, এক অনুভূতি ছিল যা আমরা বর্তমানে হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু জাতীয় আবেগ ধরে রাখার জন্য একটি জাতীয় স্লোগান কি অনুপ্রেরণা দেবে না? বর্তমান প্রজন্ম দেখছে— একদল দিচ্ছে ‘জয় বাংলা’, অন্যদল দিচ্ছে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’। আবার কেউ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলছে ‘বাংলাদেশ চিরজীবী হোক’। কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের এই সোনার বাংলাদেশ গড়তে এখনো ঐক্যবদ্ধ হতে পারি ‘জয় বাংলা’— এই এক স্লোগানে, যা ছিল আমাদের প্রাক-স্বাধীনতাকালে জাতিসত্তার মূলমন্ত্র। বাঙালির আত্মপরিচয় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান হয়ে উঠুক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

hossainjubaerir@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads