• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

ফিচার

মোবাইল ফোন আসক্তি

  • আসিফ হাসান রাজু
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০১৯

আসিফ হাসান রাজুআধুনিকতার এ যুগে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি অতিমাত্রায় লক্ষণীয়। বিশেষ করে তরুণ সমাজ আজ স্মার্টফোনের দিকে অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে এখন যেন স্মার্টফোনই একমাত্র সঙ্গী। মোবাইলে গেম, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গান, ভিডিও দেখা ইত্যাদি কাজের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে স্মার্টফোন। আগে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি কিংবা সশরীরে দেখা করা। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকৃষ্টতার ফলে আমরা আজ অনেক সহজে মোবাইলের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে খুব সহজে যোগাযোগ করতে পারি।

অনেক উপকারের পরেও বর্তমান সময়ে মোবাইলে আসক্তি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। আগে শিশুরা বেড়ে উঠত নানা ধরনের কবিতা, গল্প এবং গানের মাধ্যমে। মা তার সন্তানকে গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত। কিন্তু বর্তমান সময়ে অধিকাংশ শিশু বেড়ে উঠছে মোবাইলের সঙ্গে সখ্যের মাধ্যমে। ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনের কারণে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশুরা। মোবাইল ফোনকে স্বাস্থ্যের জন্য ‘টাইম বোমা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে প্রযুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা। সম্প্রতি প্রায় ২০০টি গবেষণায় মোবাইল ফোনকে মস্তিষ্কের টিউমার ও ক্যানসারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন, আইপ্যাড ছাড়া যেন শিশু-কিশোরদের চলেই না।

শিশুরা নানা ধরনের কার্টুন, গেম খেলার জন্য মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ঘুমের আগে পিসি বা ফোনের ডিসপ্লের আলো ঘুমের হরমোনকে ছড়িয়ে দিতে বাধা সৃষ্টি করে।’ তাই গবেষক দল পরামর্শ দিয়েছেন, ‘ঘুমের আগে পিতা-মাতা যেন তাদের সন্তানদের প্রযুক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখেন। কারণ শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ভালো ঘুমের বিকল্প নেই।’ ২০০৮ সালে সুইডেনে হওয়া এক গবেষণায় জানা গিয়েছিল, যে শিশুরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের শরীর অন্যান্য শিশুর চেয়ে পাঁচ শতাংশ কম হারে বৃদ্ধি পায়। মোবাইল ফোনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে যুক্তরাজ্যে সরকার ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

বর্তমান সময়ে মোবাইলের অপব্যবহারের সঙ্গে অধিকাংশ তরুণসমাজ জড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীদের মাঝে আজ উৎপাদনশীলতা ভয়াবহ রকমের কমে গেছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, অসচেতন ও ইন্নোসেন্টরাই অধিক শিকার হচ্ছে। প্রায়ই দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা কানে ইয়ারফোন ব্যবহার করে গান শুনতে শুনতে পথ চলতে থাকে। যার দরুন তাদের মনোযোগ অন্যদিকে থাকে। এ কারণে আমাদের দেশে ইতোমধ্যে অনেক দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা দেখেছি।

মোবাইল ফোন আজ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জন্য হুমকিস্বরূপ। শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত রাখার এখনই সময়। এজন্য পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে দেখা যায় যখন একজন শিক্ষার্থী পড়তে বসেন, তার মনোযোগ পড়ার চেয়ে ফোনের দিকে বেশি থাকে। ফলে পড়ালেখা বা নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাশীলতাও কেড়ে নিচ্ছে মোবাইল আসক্তি। অনেক সময় দেখা যায়, মোবাইল আসক্তির কারণে সম্পর্কের মধ্যেও ভাটা পড়তে থাকে। একই সঙ্গে বসে বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু সবার মনোযোগ যারযার স্মার্টফোনের দিকে। স্মার্টফোনের আসক্তির কারণে অনেক রাত জেগে ঘুমাতে যাওয়া। ফলে একজন মানুষের যে পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন, সেটাও হয়ে ওঠে না। তাই এখনই আমাদের উচিত মোবাইল আসক্তির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ahraju.ru@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads