• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ

শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ

প্রতীকী ছবি

ফিচার

শিশুশ্রম বন্ধে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ

  • আসিফ হাসান রাজু
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

আজকের শিশু আগামী দিনের কাণ্ডারি- এ নিয়ে এখন আর কারোরই সন্দেহের অবকাশ নেই। যাদের হাত ধরে গড়ে উঠবে নতুন ভুবন। কিন্তু অনেক কারণে অল্প বয়সে বিলীন হচ্ছে শিশুদের নিয়ে গড়ে তোলা এ স্বপ্ন। সদ্য জন্ম নেওয়া একটি শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তখন তাকে নিয়ে তার পরিবার, সমাজ নানা ধরনের স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। কিন্তু দেখা যায় অনেক শিশু অল্প বয়সে নানা ধরনের শ্রমের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করার ফলে তাকে নিয়ে গড়ে তোলা সেই স্বপ্নকে আর বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, দরিদ্রতার কারণে শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় পরিবারের ভার। যে বয়সে তার হেসে-খেলে দিন পার করার কথা, যে বয়সে তার বই হাতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তাকে হাতে তুলে নিতে হয় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? আমাদের সমাজ, নাকি রাষ্ট্র? শ্রমিক অধিকারকে সংরক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধন-২০১৩) প্রণয়ন করেছে। এ আইনের ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পেশায় বা প্রতিষ্ঠানে ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশু ও কিশোরকে নিয়োগ করা যাবে না বা কাজ করতে দেওয়া যাবে না। অথচ আজ সহসা চোখে পড়ে চারদিকে শিশুদের দিয়ে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে। এমন কিছু পরিস্থিতিতে একটি শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে, সে বুঝে ওঠার সময় পায় না কোন ধরনের সুযোগ বা অধিকার থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেক শিশু জীবিকার তাগিদে নিজেকে ব্যাপৃত করছে বিভিন্ন কাজে। সমাজের একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী লোক সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফার আশায় কম মজুরিতে শিশুদের অমানুষিকভাবে খাটিয়ে নিচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত চলছে শিশু শ্রমিকদের ওপর অমানবিক অত্যাচার। শিশু শ্রমিকদের ওপর মালিকশ্রেণি কখনো ভালো আচরণ দূরে থাক, প্রতিনিয়ত তাদের ওপর চালায় শ্রমশোষণ, ন্যায্য মজুরি থেকে ঠকানো, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। যে শিশুরা একদিন দেশ পরিচালনা করবে, পুরো জাতির আশা, স্বপ্ন, বিশ্বাস যাদের ওপর, আজ তারাই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করছে। অনেকটা এরকম বলা যায়, ফুল ফোটার আগেই ঝরে পড়ার মতো ব্যাপার। অনেকক্ষেত্রে দরিদ্রতার কশাঘাতে বাধ্য হয়ে শিশুরা শ্রম বিনিময় করে থাকে। এরা অতিদরিদ্র গরিব পরিবারের সন্তান। ফলে গরিব পরিবারের অভিভাবকরা একসময় বাধ্য হয়েই অন্ন সংস্থানের তাগিদে শিশুদের পাঠায় বিভিন্ন কাজ করতে। সাধারণত শিশু শ্রমিকরা গৃহকর্ম, ছোট ছোট কল-কারখানা, রিকশা চালানো, টেম্পোর হেল্পার, হোটেল বয়ের কাজের সঙ্গে যুক্ত।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু শ্রমের সঙ্গে যুক্ত, তাদের অধিকাংশ পরিবার দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করছে। কিন্তু তারা তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু পাচ্ছে না। তবে শিশুশ্রমের একক কোনো কারণ নেই, এর একাধিক কারণ রয়েছে। শিশুশ্রম দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। একইসঙ্গে দারিদ্র্যের কারণে অল্প বয়সে যেমন শিশুরা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, একইভাবে তারা বঞ্চিত হচ্ছে তার মৌলিক অধিকার থেকেও। শিশুর অধিকার রক্ষায় সরকারকে এ বিষয়ে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে, যাতে করে তারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়। শিশু অধিকার সম্পর্কে যেসব আইন প্রচলিত আছে, তার যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। শিশুশ্রম রোধে কেবল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এককভাবে কাজের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং এ অবস্থা থেকে শিশুদের মুক্ত করতে দেশের পেশাজীবী সুশীল সমাজ, নীতিনির্ধারক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই শিশুশ্রমের হাত থেকে রক্ষা পাবে শিশুরা।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads