• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জাবি ক্যাম্পাসে ভাতৃত্বের বন্ধনে প্রাণবন্ত ইফতার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

জাবি ক্যাম্পাসে ভাতৃত্বের বন্ধনে প্রাণবন্ত ইফতার

  • জাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০১৯

দুপুরের ভ্যাপসা গরম পেরিয়ে বিকালে প্রশান্তির নির্মল বাতাস। তপ্ত রোদে ঝলছে যাওয়া শরীরটা মৃদু দক্ষিণা বাতাসে ঠান্ডা হতে বসেছে তখন। প্রাণে দোলা দিচ্ছে শান্তির আমেজ। এইতো আর কিছুক্ষণ! যখন বেলা গড়িয়ে পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলতে শুরু করেছে ঠিক তখনি জমে ওঠেছে বন্ধুদের সাথে ইফতার আড্ডা। 

বলছি দেশের অন্যতম নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার, প্রকৃতির অপরুপ লীলাভূমির প্রাণকেন্দ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত ইফতার আয়োজনের গল্প। প্রকৃতি যেমন আপন দ্যোতনায় এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারীদের কোলে ডেকে নেয় ঠিক তেমনি পবিত্র মাহে রমজানে একজন যেন হয়ে উঠে আরেকজনের সহোদর ভাই। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে একে অপরে পরম মমতায় ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় এখানে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, আবাসিক হল, ক্যাফেটেরিয়া চত্বর, পরিবহন চত্ত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি সবুজ স্থানে শিক্ষার্থীরা ইফতার করার জন্য সমবেত হন। সবাই গোল হয়ে বসে মেতে ওঠে ইফতারের আনন্দে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ইফতার আয়োজন করে থাকে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও হতদরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে।

ইফতার আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জাকিউল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে ইফতারের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। হলে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার অনুভূতিটাই আলাদা। ইফতার করাটা শুধু খাওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, তাদের সাথে সম্পর্কও গভীর হয়। বন্ধুদের সাথে ইফতার করলে পরিবার থেকে দূরে থাকার কথা আর মনে থাকে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ইফতার নিয়ে অনুভূতি এমনই। শুধু রমজান মাস নয়, যাদের বছরের অধিকাংশ সময়ই কাটে পরিবার থেকে দূরে। রমজান শুরুর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ তাদেরই উপস্থিতিতে পরিণত হয় প্রাণের মিলনমেলায়।

খেলার মাঠে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মৃধা মোহাম্মদ বেলাল। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও টিউশন থাকায় বাড়িতে যেতে পারছি না। পরিবার ছাড়া ইফতার করায় কিছুটা খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু বন্ধুদের সাথে ইফতার করতে পেরে খুব ভালো লাগে। আনন্দে বুকটা ভরে যায়। 

পাশেই ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লোক প্রশাসনের বিভাগের নিপুণ ইশতিয়াক। ক্যাম্পাস ফাঁকা, কিছুটা খারাপ লাগে। কিন্তুু বন্ধুরা মিলে যখন ইফতার করি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে ইফতারের আগের সময়টুকু। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা— এসব খুবই আনন্দদায়ক।’

কারো কারো এবার ক্যাম্পাসে শেষ ইফতার। স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে বন্ধুদের সাথে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো। জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। মাস্টার্সের পরীক্ষা সামনে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাব। হলে হৈ-হুল্লোড় করে সবার সাথে আর ইফতার করা হবে না। এ সময়টুকু খুব মিস করব।’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে আ ফ ম কামালউদ্দিন হল, শহীদ সালাম বরকত হল, আল বেরুণী হল সহ বিভিন্ন আবাসিক হলের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া বাজার, ইসলাম নগর বাজার ও ডেইরী গেট সংলগ্ন এলাকায় ইফতারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। সেখানে হরেক রকমের ইফতার বিক্রি করা হচ্ছে। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, বুন্দিয়া, বেগুনি, পেঁয়াজুসহ বিভিন্ন রকমের ইফতার।

সবকিছু মিলিয়ে জাবি ক্যাম্পাস ইফতার মুহুর্তে হয়ে উঠছে এক টুকরো ভালবাসার ছোট্র পরিবার। যেখানে আদর, যন্ত আর কদরের অভাব থাকে না। কে আপণ কে পর কোনকিছুর তোয়াক্কা না করে সব ভেদাভেদ ভুলে ভাতৃত্বের তীর্থস্থান হয়ে উঠছে যেন পুরো ক্যাম্পাস। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads