• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
‘ল্যাম্বোরগিনি’ বানালেন আকাশ

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

‘ল্যাম্বোরগিনি’ বানালেন আকাশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০১৯

প্রথম দেখাতেই যে কারো মনে হতে পারে এটি একটি বিদেশি গাড়ি। কিন্তু সেই ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ গাড়িটি বাংলাদেশে তৈরি করা হয়েছে। তাও আবার একটি অটোরিকশা ওয়ার্কশপে। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্য। আর গাড়িটি বানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তরুণ আকাশ আহমেদ। আকাশের বাড়ি ফতুল্লার লামাপাড়াতে। বাড়ির পাশেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে রয়েছে নিজের বাবার অটোরিকশা ওয়ার্কশপ। সেখানেই তৈরি হয়েছে ‘ল্যাম্বোরগিনির’ আদলে আকাশের গাড়িটি। এটি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে প্রায় ১০ ঘণ্টা পাড়ি দিতে সক্ষম।

সেই ছোটবেলা থেকেই গাড়ি বানানোর শখ ছেলেটার। নিজের বানানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নটাও তখন থেকেই দেখতে শুরু করে আকাশ। কিন্তু যে দেশে বড় বড় কোম্পানিও গাড়ি বানাতে গিয়ে ছিটকে পড়েছে সেখানে এই স্বপ্ন বড়ই অলৌকিক। তাই কেউ তাকে পাত্তাই দিল না। কিন্তু আকাশ থেমে যায়নি। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন দেশের মানুষের কাছে।

দেড় বছর আগের কথা। ওয়ার্কশপে কাজ করতে করতে বাবার কাছে গাড়ি বানানোর প্রস্তাব দিল আকাশ। বাবা নবী হোসেন ছেলের আগ্রহকে না বলতে পারেননি। যদি মন খারাপ করে তাই একটি সুযোগ দিয়ে দিলেন। আর তখন থেকেই স্বপ্নের পেছনে ছোটা শুরু আকাশের। কিন্তু কী গাড়ি বানাবে আকাশ? সে তো কোনো ডিজাইন জানে না। তবে ক্যালেন্ডারের পাতায় ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি গাড়ির মডেল দেখেছিল। সেই ডিজাইনকেই বেছে নিল আকাশ। এবার শুরু হয়ে গেল তার গাড়ি বানানোর কাজ।

বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ করে নিয়েই অল্প অল্প করে কাজ শুরু। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ফলো করা, জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করা, ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন, নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে বানিয়ে ফেলল। আকাশ জানায়, গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। বাকি সব কিছু আমার নিজের হাতে তৈরি। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট ব্যাকলাইট, গিয়ার, এসবও আমি নিজে হাতে তৈরি করেছি, যা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় আজ সেটি পূর্ণাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে।

আকাশ আরো জানায়, গাড়িটিতে প্রায় ৫টি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে লাগবে ৫ ঘণ্টা। রাস্তায় নামলে ২ জন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে। আর পুরো গাড়িটি এ অবস্থায় দাঁড় করাতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে এলে ৩ লাখ টাকাতেও বানানো যাবে।

‘এই কাজে দেড় বছরে প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকটা অনুমাননির্ভর করেই পাড়ি দিতে হয়েছে অধিকাংশ পথ। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই। আর সে কারণেই আমি গাড়িটি তৈরি করতে পেরেছি। ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু যেহেতু করেছি তাই শেষ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। ঈদের ছুটিতে গাড়িটি নামানোর পরেই অসাধারণ সাড়া পেয়েছি। কেউ কেউ হিংসায় বাজে মন্তব্য করলেও তাতে পাত্তা দেইনি। নিজের তিল তিল করে গড়া পরিশ্রমে তৈরি করেছি এই গাড়িটি। তবে গাড়িটিতে আরো কিছু কাজ বাকি আছে।’

এ প্রসঙ্গে আকাশের বাবা নবী হোসেন বলেন, আমার ছেলে এই গাড়ি বানিয়েছে এটা এখনো এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমি তাদের বলিও না তারা বিশ্বাস করুক। কিন্তু আমার ছেলের ওপর হিংসা করে তার ক্ষতি যাতে না করে এই অনুরোধ সবার কাছে। অনেকেই এসে বিরক্ত করে ছেলেকে। সম্প্রতি একজন জোর করে চালাতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে সামনে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। এখন গাড়িটি খুলে মেরামত করতে হবে।

আকাশের পরবর্তী লক্ষ্য জানতে চাইলে আকাশ বলে, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যাতে আমাকে গাড়িটি বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। অন্য কারো কাছে আমি এটির নকশা বিক্রি করতে চাই না। শুধু অনুমতি দিলেই আমার জন্য অনেক সুবিধা হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি দেখে আমি আরো ২৫টি গাড়ি তৈরির অর্ডার পেয়েছি। বাজারজাত করলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকাতেই মানুষ পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবে। ব্যক্তিগতভাবে আরেকটি গাড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে। তবে সেটির মডেল আপাতত অপ্রকাশিতই থাকুক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads