• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নার্সারী বাগান করে কোটিপতি

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

নার্সারী বাগান করে কোটিপতি

  • ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনিসংহ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০১৯

অক্লান্ত পরিশ্রম আর অবিচল চেষ্টায় যে ভাগ্য বদল হয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার দত্তপাড়া গ্রামের বেকার যুবক মহরম আলী। বেকারত্বকে জয় করে সে এখন উপজেলার রোল মডেল।

১৯৭১ সালে দরিদ্র পিতা সিরাজুল ইসলামের পরিবারে জন্ম নেয়া মহরম আলীদের সংসার চলতো অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। সংসার চালিয়ে সন্তানদের পড়া লেখা করানো পিতার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় মহরম আলী কিভাবে দারিদ্রতাকে জয় করা যায় এই চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হাতে নগদ পু‍ঁজি না থাকায় বিভিন্ন ব্যবসার চিন্তা করেও ব্যবসার পরিকল্পনা বাদ দিতে হয় তাকে। মহরম আলী জানান, তার বাসার পাশে ছিল সরকারী নার্সারী বাগান। এ বাগানে চারা উৎপাদন বিপনন দেখে নার্সারী বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮১ সালে মাত্র ১৫ শতাংশ জমিতে ২হাজার ৬শত টাকা পুজি নিয়ে বিভিন্ন জাতের চারা উৎপাদন করে বনরাজ নার্সারী নামে যাত্রা শুরু করেন। এক বছরে নার্সারী বাগানে চারা বিক্রি করে আশানুরুপ লাভ করেন। এই লাভের টাকায় ২ কাঠা জমি কিনে নার্সারী বাগান বৃদ্ধি করেন। মহরম আলী দিনরাত নার্সারী বাগানে পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত থাকেন।

৩৫ শতাংশ জমির নার্সারী বাগানে ৮ বছর চারা উৎপাদন ও বিক্রির আয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ের উত্তরে আরো ৬৫ শতাংশ জমি কিনে এক একর জমিতে নার্সারী বাগান সম্প্রসারণ করেন। নার্সারী বাগানে প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়ে থাকে। তার বাগানে এলাকার প্রায় ১৫ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মহরম আলী জানান, তার নার্সারী বাগানকে অনুসরণ করে উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাগান গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারী বাগান মালিকদের নিয়ে একটি সমিতি গড়ে তুলেছেন। তিনি এই সমিতির সভাপতি। বনরাজ নার্সারীতে ফলদ বনজ ঔষধি ও ফুলসহ প্রায় শতাধিক জাতের চারা রয়েছে। তার নার্সারীর চারা স্থানীয় এলাকাবাসীর চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি জানান নার্সারী বাগানসহ এক একর জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।

নার্সারীর আয়ে ৩ ছেলের পড়ালেখা এবং সংসার খরচ চালিয়ে সুখে জীবন যাপন করছেন মহরম আলী। জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ায় তিনি এখন অনুকরণীয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। চারা কিনতে ও বাগন দেখতে প্রতিদিন বহু মানুষ তার বাগানে ভীড় করে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নার্সারী মালিকদের সরকারিভাবে কোন ঋণ দেওয়া হয় না। নার্সারীর মালিকরা উপজেলায় বৃক্ষরোপনের চারার চাহিদা পূরণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। শুধু বৃক্ষ মেলার সময় কৃষি বিভাগ থেকে বছরে একবার তাদের ডাক পড়ে। মেলা শেষ হলে আর খোঁজ খবর থাকে না। মহরম আলীর দাবি যদি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সুদ বিহীন ঋণ প্রদানের সুযোগ দেওয়া হতো তবে উপজেলায় নার্সারী বাগানের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পেত তেমনি কমতো বেকার সমস্যা রক্ষা পেত পরিবেশের ভারসাম্য।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, নার্সারী বাগান আমাদের অল্প সময়ে কলমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের চারা সরবরাহ করে আসছে। যার ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ফসল উৎপাদন করতে পারছি। বর্তমানে কৃষি অধিদপ্তর থেকে বাগান মালিকদের লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads