• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
হাতপাখার গ্রাম ভালাইন

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

হাতপাখার গ্রাম ভালাইন

  • নওগাঁ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০১৯

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামে প্রায় ৬৫টি পরিবারের বাস। গ্রামটির প্রায় তিন শতাধিক নারী-পুরুষ হাতপাখা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দরিদ্র এসব পরিবার হাতপাখা তৈরিকেই এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এদিকে তীব্র গরমে কদর বেড়েছে তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখার। এ কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে ভালাইনে। অন্যদিকে এটি এখন ‘হাতপাখার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এখানকার প্রায় সবাই হাতপাখা তৈরি করেন। এটি হয়ে উঠেছে তাদের জীবিকার উৎস। তালপাতা দিয়ে তৈরি এ হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রায় ২৫ বছর থেকে ভালাইন গ্রামে তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরি হয়ে আসছে। হাতপাখা তৈরি করে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন তারা।

তালপাতা দিয়ে তৈরি এ হাতপাখার চাহিদা বেশি থাকায় এখন সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে স্বল্প সুদে ঋণ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরো এগিয়ে যাবেন বলে মনে করছেন এ পেশার কারিগররা।

গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্রসহ কয়েকটি মাসে প্রচণ্ড দাবদাহ থাকে। এছাড়া ভ্যাপসা গরম পড়ে এ সময়। তাই গরমকালে তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিবছর ভালাইন গ্রাম থেকে ঢাকা, সৈয়দপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ফরিদপুর, দিনাজপুরসহ কয়েকটি জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ পাখা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ এবং বিক্রির কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকে। পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখার রূপ দেওয়া হয়। এরপর রংমিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজটা করেন গৃহবধূরা।

সংসারের কাজের পাশাপাশি তৈরি করা হয় এ তালপাতার পাখা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পাখা তৈরি করে বাবা-মাকে সহযোগিতা করে থাকে। তবে পাখা তৈরিতে যে পরিশ্রম ও খরচ সে তুলনায় দাম পান না কারিগররা। বিভিন্ন এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের। তবে স্বল্প পরিশ্রমে টাকা বিনিয়োগ করে বেশি লাভে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ আনজুয়ারা বেগম বলেন, ‘গরমের সময়, বিশেষ করে, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্র মাসে হাতপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিবছরএ সময় ঢাকা, সৈয়দপুর, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ফরিদপুর, দিনাজপুর থেকে লোক আসে আমাদের এখানে পাখা কিনতে।’

পাখা তৈরির কারিগর আরশাদ হোসেন বলেন, ‘পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হয়। পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখার রূপ দেওয়া হয়। এরপর রংমিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুই ও সুতা দিয়ে পাখা বাঁধতে হয়। তবে পাখা তৈরিতে যে খরচ হয়, সেই তুলনায় দাম পাওয়া যায় না।’

আরেক কারিগর কোহিনুর বেগম বলেন, ‘এই গ্রামের সবাই বাপ-দাদার পেশা এখনো ধরে রেখেছে। এ পাখা তৈরি করেই সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। প্রতিদিন আমরা ৬০-৭০টা পাখা তৈরি করতে পারি।’

পাখার কারিগর সাইদুর রহমান বলেন, ‘জেলার সাপাহার, পোরশা উপজেলা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের আড্ডা ও রোহনপুর থেকে তালপাতা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি তালপাতার দাম পড়ে পাঁচ টাকা। এর সঙ্গে রঙিন বাঁশের কাঠি ও সুতায় খরচ হয় দেড় টাকা। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ পড়ে সাড়ে ছয় টাকা করে। সেখানে আমরা পাইকারি বিক্রি করি প্রতি পিস ১০-১২ টাকা। বিভিন্ন জেলার পাইকাররা আসেন। আবার কখনো নিজেরাই দিয়ে আসি। যে পরিমাণ পরিশ্রম ও খরচ হয় সেই তুলনায় আমরা দাম পাই না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে পাখা তৈরি করি। লাভের একটি অংশ চলে যায় এনজিওতে। সরকার যদি স্বল্পসুদে আমাদের ঋণের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে লাভের পরিমাণ কিছুটা বাড়ত।’

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবারক হোসেন জানান, পাখা তৈরির কারিগররা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে চলেছে। আর্থিক কারণে যেন এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads