• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শিল্প মানে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষা

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

শিল্প মানে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষা

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

দেশের অন্যতম প্রধান ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। জলরঙ, তৈলচিত্রের পাশাপাশি নিয়মিত ভাস্কর্য শিল্পের চর্চা করেন। শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও সমান জনপ্রিয় আধুুনিক এই ভাস্কর্য শিল্পী। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল অলিম্পিক পার্কে একজন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তার একাধিক শিল্পকর্ম স্থাপিত হয়েছে। অলিম্পিক পার্ক ছাড়াও আরো কয়েকটি পার্কে তার কাজ স্থান পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের অনারারি এই অধ্যাপকের দীর্ঘ সময়ের শিল্পচর্চা নিয়ে আজকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-সালেহীন বাবু

শিল্প চায় সম্মান, আদর ও ভালোবাসা। শিল্প ও প্রেম একে-অপরের পরিপূরক। বিশেষ করে ভাস্কর্য শিল্পের বেলায় এ কথাটি ভীষণভাবে প্রযোজ্য। স্থাপত্যের সঙ্গে ভাস্কর্যের সবিশেষ মিল পাওয়া যায়। ভাস্কর্য শূন্যতাকে শোষণ করে নির্মিত হয়। ভীষণ নিঃশব্দ আর প্রতিকমুখী এ শিল্প। সরাসরি এবং স্পষ্ট। যার মধ্যে কৃত্রিমতার ছিটেফোঁটাও নেই।

আধুনিক ভাস্কর্য চর্চায় অন্যতম রূপকার আপনি, শুরুটা হয়েছিল কীভাবে?

শিল্প নির্মাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মূল্যবোধ। ভাস্কর্যের জন্য এটি আরো বেশি দরকার। ভাস্কর্য এ দেশে নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই এ চর্চা হয়ে আসছে। আমাদের সময়ের আগে কিন্তু আধুনিক ভাস্কর্য চর্চা তেমন ছিল না, দু-একজন হয়তো করেছেন। রাজ্জাক স্যার চারুকলায় ভাস্কর্য বিভাগ চালু করেন। তার হাত দিয়েই এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে।

আপনার জন্ম কিশোরগঞ্জে। কেমন ছিল আপনার ছেলেবেলা?

আমার জন্ম কিশোরগঞ্জের গচিহাটার সহশ্রামে। গচিহাটা একটি রেলস্টেশনের নাম। এই বিখ্যাত স্টেশনটি ও রেলগাড়ির সঙ্গে ছোটবেলা থেকে আমার পরিচয়। আমাদের অঞ্চলকে বলা হয় ‘হাওর’ অঞ্চল। কিন্তু রেললাইন গেছে উঁচু জায়গা দিয়ে। আমাদের জায়গাটা একটু উঁচু। ফলে দূরের গ্রামগুলো দেখা যায় না।

আমাদের বাড়িটা হাওরের কিনারায়। ছেলেবেলায় খেলাধুলা করেছি, হেসেখেলে বড় হয়েছি। আমার স্কুলের নাম বড়গ্রাম হাইস্কুল। খুব নামকরা স্কুল। বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। ওই স্কুল থেকে আমি ১৯৬২ সালে মেট্রিক পাস করি। আমাদের স্কুলটা বিখ্যাত লেখক নীরোদ চৌধুরীর বাড়ির খুব কাছে।

তার ভাইপো আমার সঙ্গে পড়ত। সেই সুবাদে আমি নীরোদ চৌধুরীর বাড়িতে কয়েক দিন পরপর যেতাম। আমাদের গ্রামে অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকজন বাস করত, ফলে আমার মানস গঠনে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।

ছোটবেলায় কি আপনি ছবি আঁকতেন?

ছেলেবেলায় আমি স্কেচ করতাম। মনে পড়ে, আমার দাদার একটি ড্রয়িং করেছিলাম যা তার মুখাবয়াবের সঙ্গে মিলে যায়। এতে সবাই খুব খুশি হয়। তখন তো ছবি-টবি এত ছিল না। এটাই ঘরে ফ্রেম করে রেখে দেওয়া হয়। আমার আব্বা ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু আমার ছবি আঁকাটা পছন্দ করতেন। উনি হয়তো আমাকে কোনো জায়গায় নিয়ে গেলেন...টাউনে, নিয়ে বলতেন-তুমি মসজিদের ছবি আঁকো। মসজিদের ছবি আঁকলাম। আমাদের কিশোরগঞ্জে শহীদে মসজিদ। আব্বা ওই মসজিদের ইমামের কাছে আমাকে নিয়ে গিয়ে বললেন, আমার ছেলে এটা এঁকেছে, আপনাকে দেবে। আরে কী খুশি!

তুমি মসজিদেরই ছবি এঁকেছো, সুন্দর হয়েছে তো! এ রকম ঘটনা কিছু ছিল। তারপরে আমি টাউনে গেলেই আব্বাকে বলতাম, আমাকে রং কিনে দেন। আব্বা কিনে দিতেন। তখন আস্তে আস্তে গ্রো করল। আমাদের স্কুলটা ছিল হিন্দুপ্রধান। ভালো ভালো টিচার ছিল।

আমি ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়েছিলাম ভৈরব কলেজে। মাস খানেক ক্লাস করার পর এই সাবজেক্টটা আমার একদম ভালো লাগল না। আমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাসায় চলে যাই।

তারপরই কী আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন?

আমার চারুকলায় পড়ার ইচ্ছা কিন্তু আব্বাকে বলতে পারছি না। তখন আমাদের পোস্টমাস্টার এক দিন আব্বাকে বললেন, ‘আপনার ছেলে আর্ট কলেজে পড়তে চায়, ওকে সেখানে ভর্তি করে দিন।’ আব্বা ওনার কথায় রাজি হলেন। আব্বার সঙ্গে ঢাকায় এলাম। আমরা আবেদিন স্যারের খোঁজে সরাসরি তার শান্তিনগরের বাসায় গেলাম। উনি বারান্দায় বসে ছিলেন। এই প্রথম আমি জয়নুল আবেদিনকে দেখলাম। আমার আব্বা সহজ-সরল মানুষ। তিনি আবেদিন স্যারকে বললেন, ‘ও তো আর্ট কলেজে ভর্তি হতে চায়।’ স্যার বললেন, ‘কালকে নিয়ে আস, আমি ওকে ভর্তি করে নিব।’ পরদিন আর্ট কলেজে যাওয়ার পর, আবেদিন স্যার আমার কাগজপত্র, ড্রয়িং দেখে ভর্তি করে নিলেন।

ছাত্রজীবনে আপনার আদর্শ শিক্ষক কে ছিলেন?

শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার আমাকে খুব সাহস দিতেন। সারা রাত ছবি এঁকে সকালে ক্লাসে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। স্যার বললেন, ‘ওকে ডেকো না।’ ওই দিন তিনি আমার স্কেচ খাতা নিয়ে দেখেন-খাতাভর্তি স্কেচ। আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে, সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় হঠাৎ এক দিন আবেদিন স্যার আমাকে ডাকলেন। আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। উনার সামনে যাওয়ার পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার এক্সিবিশনে কতগুলো ওয়াটার কালার আছে? এগুলো আমরা ডিপার্টমেন্ট থেকে ফ্রেম করে দিচ্ছি।’

আমাদের প্রিন্ট মেকিংয়ের অনেক বড় বড় ফ্রেম ছিল। টিচাররা ইউজ করত মাঝে মাঝে। আমি গিয়ে দেখি, আমার ছবিগুলো সব ফ্রেম করা হয়ে গেছে। ছবিগুলো টাঙানো হলো। তারপর আবেদিন স্যার বললেন, ‘এই শোনো, তোমার যে কয়টা ছবি আছে আমি কিনে নিলাম, এগুলো আমার। আমার যে বিভিন্ন গেস্ট আসে তাদের এগুলো প্রেজেন্ট করব। তুমি অফিস থেকে পয়সা নিয়ে যাও।’ আমি খুশিতে কেঁদে ফেলি। ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় আমার একটি মেজর অ্যাকসিডেন্ট হয়। ওই সময় আবেদিন স্যার সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন। মোটামুটি সুস্থ হওয়ার পর ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেই। তারপর ডা. আছির উদ্দিনের পরামর্শে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাই।

লন্ডনে চিকিৎসাকালে আপনি তো বহু গ্যালারি পরিদর্শন করেছিলেন-

লন্ডনে যাওয়ার আগে আবেদিন স্যারের পরামর্শে চট্টগ্রাম ক্লাবে একটি প্রদর্শনী করে কিছু টাকা জোগাড় করি। তারপর লন্ডনে গেলাম। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা আমাকে চার মাস লন্ডনে থাকতে বললেন। এমনকি চিকিৎসকরা আমি স্টুডেন্ট বিধায় আমার চিকিৎসা খরচ ফ্রি করে দিলেন। ওই সময় আমি লন্ডনে ৪ মাস, প্যারিসে ২ সপ্তাহ, রোমে ২ সপ্তাহ থাকি এবং ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া আলবার্ট মিউজিয়াম, পোট্রেট গ্যালারি, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, প্যারিসের লুভ্যর মিউজিয়ামসহ রোমের বিখ্যাত সব গ্যালারি পরিদর্শন করি। এরপর চিত্রকলা সম্পর্কে আমার ধারণা বদ্ধমূল হয়। দেশে ফিরে তখন একটাই স্বপ্ন নতুন কিছু করব।

তারপরই কী আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন?

বাংলাদেশে আসার পর চারুকলায় ৮ মাস কাজ করি। আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেই ১৯৭০ সালে। সে সময় বেতন ৩০০ টাকা। শিল্পী আবদুর রাজ্জাক ভাস্কর্য বিভাগ চালু করেছেন। ওই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে জয়নুল আবেদিনই আমাকে নিয়োগ দিলেন। তিনি বললেন, ‘হামিদ, তুমি পারবা। আজ থেকে ভাস্কর্য বানানো শুরু কর। তবে জলরঙটা ছেড় না।’

ভাস্কর্য বিষয়ে আপনি উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন ভারত এবং আমেরিকায়-

দেশ স্বাধীন হওয়ায় ইন্ডিয়ান স্কলারশিপ ওপেন হলো। আবেদিন স্যার বললেন, ‘তুমি স্কলারশিপের জন্য অ্যাপ্লাই করো, মাস্টার্স কইরা আসো।’ অ্যাপ্লাই করলাম। তিনি সিলেকশন কমিটির মেম্বার ছিলেন। নির্দিষ্ট দিনে আমি ইন্টারভিউ দিতে ঢুকছি, দেখি আবেদিন স্যার চলে যাচ্ছেন। স্যারকে বললাম, ‘স্যার আমি তো ইন্টারভিউ দিতে আসছি।’

উনি বললেন, ‘যাও ইন্টারভিউ হবে না। আমি সিলেকশন দিয়ে আসছি, তোমার স্কলারশিপ হয়ে গেছে।’ তারপর ১৯৭৪ সালে গেলাম বড়দা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি ভারতের গুজরাটে অবস্থিত। সেখান থেকে ১৯৭৬ সালে এমএফএ করলাম। পরে ১৯৮২-১৯৮৩-তে নিউইয়র্কের স্কাল্পচার সেন্টারে উচ্চশিক্ষা নিই।

নভেরা আহমেদ-

নভেরা আহমেদ ইজ পাইওনিয়র। বাইরে থেকে পড়াশোনা করেছেন। ভাস্কর্য বিষয়টা খুব ভালোভাবে বুঝতেন। শুরুটা আসলে তিনিই করেছেন। আধুনিক মানুষ ছিলেন। একটাই দুঃখ অল্প সময়ের জন্য। আমরা তো ঢাকাতেই এসেছি ১৯৬৮ সালে। তার আগেই তিনি চলে গেছেন প্যারিসে। সেই যে গিয়েছেন আর ফিরলেন না।

জলরঙ, তেলচিত্রের পাশাপাশি আপনি নিয়মিত ভাস্কর্য চর্চা করছেন-

আমার শিল্প চর্চার শুরু হয় পেইন্টিং দিয়ে। এ জন্য এখনো আমি জলরঙ, তেলরঙ, স্কেচ করি। এ মাধ্যমে আমি একাধিক প্রদর্শনীও করেছি। তবে ভাস্কর্য চর্চার মূল প্রেরণা আবেদিন স্যার ও রাজ্জাক স্যার। আমাদের দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ তৈরির সময় আমি রাজ্জাক স্যারের সহশিল্পী হিসেবে কাজ করি। বড়দায় থাকতে বৌম্বের এক প্রদর্শনীতে আমার ভাস্কর্য উপমহাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের নজর কাড়ে। হুসেনও আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। এরপর ১৯৮১ সালে বঙ্গভবনে ‘পাখি পরিবার’, সিউল অলিম্পিকে ১৯৮৮ সালে ‘স্টেপস’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০-তে ‘সংসপ্তক’, ২০০৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাতীয় ভাস্কর্য উদ্যানে আমি ভাস্কর্য করেছি। এ ছাড়া ঢাকা, সিলেট ক্যান্টনমেন্টসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আমি ভাস্কর্য করেছি। ফলে মানুষের কাছে ভাস্কর্য শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

আপনি তো ঝুলন্ত ভাস্কর্য, স্থাপনা করছেন-

আসলে শিল্প মানে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষা। আমি ভাস্কর্য শিল্পকে নতুন মাত্রা দিতে চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন ফর্মের পাশাপাশি ঢাকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউনাইটেড হাসপাতালে ঝুলন্ত ভাস্কর্য করেছি। আমার স্বপ্ন ভাস্কর্য শিল্প মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া। এতে শিল্প রূচির বিকাশ ঘটবে।

বাংলাদেশের ভাস্কর্য চর্চা আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে অবস্থান কোথায়?

অন্যান্য দেশে আধুনিক ভাস্কর্য চর্চার যে চর্চা চলছে, বাংলাদেশও কিন্তু এদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই। আগের থেকে অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যদি ভালো করে দেখি তাহলে দেখব পেইন্টিংয়ের চাইতে স্কাল্পচার অনেক অনেক এগিয়ে গেছে।

হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক-

গাজীপুরের কড্ডায় সামিট গাজীপুর ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র কম্পাউন্ডের উন্মুক্ত স্থানে গড়ে উঠেছে হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম একটি ভাস্কর্য পার্ক। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যে কেউ পার্কটি পরিদর্শন করতে পারেন।

সারা পৃথিবীতেই পরিকল্পিত ভাস্কর্য পার্ক ধারণাটি খুব বেশি পুরনো নয়। ইতিপূর্বে অপরিকল্পিত এবং বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পার্ক হয়ে থাকলেও গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সুপরিকল্পিত ভাস্কর্য পার্কের ধারণাটি বিশ্বব্যাপী শিল্পী সমাজ এবং শিল্পবোদ্ধাদের গণনায় আসে। বর্তমানে সুপরিকল্পিত ভাস্কর্য পার্ক সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসংখ্য ভাস্কর্য পার্ক গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে দলগত পার্ক যেমন আছে আবার অন্যদিকে একজন শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে একক ভাস্কর্য পার্কও রয়েছে। বাংলাদেশে একক বা দলগত কোনো প্রকার ভাস্কর্য পার্কই অতীতে ছিল না।

পৃথিবীর বিখ্যাত ভাস্কর্য পার্ক ঘুরে দেখতে দেখতে এবং বিশ্বখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পীদের সংস্পর্শে আসার সুবাদে আমার মনেও সুপ্ত বাসনা জাগে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক ভাস্কর্য পার্ক গড়ে তুলব। আর সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকার সাভারে একটি জায়গাও কিনেছিলাম। কিন্তু পরে উপলব্ধি করি এই পরিমাণ জায়গা ভাস্কর্য পার্ক গড়বার জন্য যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া একটি ভাস্কর্য পার্ক রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা ঝক্কি-ঝামেলাও রয়েছে। যেটি কোনো রকম পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া একজন ব্যক্তির পক্ষে এককভাবে করা সম্ভব নয়। তাই আমি বিকল্প ভাবনা ভাবতে থাকি। আর বিকল্প ভাবনাটি বাস্তবায়নে এক বিরাট সহায়ক ভূমিকা পালন করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপ এবং এর মূল কর্ণধার ও শিল্প সংগ্রাহক মুহাম্মদ আজিজ খান।

আমার প্রস্তাবে স্বপ্রণোদিত হয়ে মুহাম্মদ আজিজ খান তার বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুই একরের অধিক পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দেন। আর এই জায়গাতেই আমি আমার ভাস্কর্য পার্কের বাস্তব রূপায়ণের কাজ শুরু করি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে এর কাজ এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। প্রয়োজনমতো এটিকে আরো পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হবে বলে শিল্পী জানান।

বর্তমানে পুরো ভাস্কর্য পার্কটিতে স্থান পেয়েছে মোট ২০টি ভাস্কর্য এবং দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম ৪০০ ফুট লম্বা ও ২২ ফুট উচ্চতার একটি দেয়ালে ম্যুরাল। পার্কে স্থাপিত ম্যুরালটি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে স্টোন এবং মেটালে তৈরি। যেহেতু এটি একটি ওপেন স্পেস সেহেতু রোদ-বৃষ্টি কিংবা ঝড়ের কবলে পড়ে যাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকটি শিল্পীর ভাবনায় ছিল এবং সেই অনুযায়ী ভারী মিশ্র মাধ্যমে এটি তৈরি। একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে তৈরি বিধায় ম্যুরালটিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র বা একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ছায়া খুঁজে পাওয়া যায়। দূর থেকে লক্ষ করলে এটিকে অনেকটা পেইন্টিংয়ের মতোও দেখা যায়। ম্যুরালটিতে শিল্প এবং সৃষ্টির এক অপূর্ব মেলবন্ধন রচিত হয়েছে। সবাইকে দেখার আমন্ত্রণ রইল। এভাবেই দেশীয় ভাস্কর্য শিল্প এগিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads