• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
একজন বরেণ্য কথাসাহিত্যিকের প্রস্থান

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

একজন বরেণ্য কথাসাহিত্যিকের প্রস্থান

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৪ আগস্ট ২০১৯

রিজিয়া রহমানের উপন্যাসগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে তার প্রতিটি উপন্যাসেই নির্দিষ্ট এবং স্বতন্ত্র বিষয় রয়েছে। কোনোটিতে বস্তিজীবনের কথা, কোনোটিতে নিষিদ্ধপল্লীর কথা আবার কোনোটিতে উঠে এসেছে বাংলা এবং বাঙালির ইতিহাসের সন্ধান। কোনোটিতে আবার আত্মজীবন নিয়ে কথা। সাহিত্য রচনায় এরকম বহুমাত্রিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছেন রিজিয়া রহমান। সাহিত্যকে কোনো গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাননি তিনি। প্রত্যেকটি উপন্যাসই তিনি ব্যক্তিজীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন।

রিজিয়া রহমান বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক। জন্ম কলকাতায় হলেও পরে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপরে শৈশব-কৈশোর, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা এখানে, আমাদের এই বাংলাদেশে। লিখে চলেছেন প্রায় ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে। লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। সাহিত্যের ভুবনের অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এ কথাসাহিত্যিক। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

১৯৩৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভারতের কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন রিজিয়া রহমান। তার পৈতৃক নিবাস কলকাতার কাশিপুর থানার নওবাদ গ্রামে। বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সিদ্দিক ছিলেন একজন চিকিৎসক ও মা মরিয়াম বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তারা সপরিবারে বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রাথমিকে পড়া অবস্থায় কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৯৬০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। ওই বছরই সংবাদের সাহিত্য পাতায় ছাপা হয় তার কবিতা। ১৯৬৭ সালে ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতার সম্পাদক কামরুন নাহার লাইলির উৎসাহে তিনি ‘লাল টিলার আকাশ’ নামক গল্প লেখেন। পরে ‘ললনা’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে তিনি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে চলে যান। এরপর দেশে ফিরে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। সাহিত্য পত্রিকা ‘ত্রিভুজ’-এর সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে পরবর্তী সময়ে জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা বোর্ডের ট্রাস্টি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্য পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিন বছর বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের সব অঙ্গনে তার ছিল সপ্রতিভ বিচরণ। রিজিয়া রহমানের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলো হলো- অগ্নিস্বাক্ষর, নির্বাচিত গল্প, চার দশকের গল্প, দূরে কোথাও। উপন্যাসগুলো হলো- ঘর ভাঙা ঘর, উত্তর পুরুষ, রক্তের অক্ষর, বং থেকে বাংলা, অরণ্যের কাছে, অলিখিত উপাখ্যান, শিলায় শিলায় আগুন, ধবল জ্যোৎস্না, সূর্য সবুজ রক্ত, একাল চিরকাল, ঝড়ের মুখোমুখি, প্রেম আমার প্রেম প্রভৃতি।

উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকও অর্জন করেন।

সেই মধ্য পঞ্চাশের দিকে একজন নারী হিসেবে সাহিত্য চর্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সে সময় ছিল না। বিষয়টি অনেকটাই দুরূহ ছিল। তার পরিবার সংস্কৃতিমনা হওয়াতে এদিক দিয়ে বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন তিনি।

রিজিয়া রহমানের কাছে সব লেখাই ছিল একই রকম আনন্দের। প্রথম দিকে কবিতা লিখতেন। তারপরে ছড়া, গল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী লিখেছেন। তার আত্মজীবনীমূলক প্রথম বই হলো ‘অভিবাসী আমি’। এর পরে লিখেছেন ‘নদী নিরবধি’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads