• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘মুজিববর্ষ বঙ্গবন্ধুকে জানার একটি প্রয়াস’

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

‘মুজিববর্ষ বঙ্গবন্ধুকে জানার একটি প্রয়াস’

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০২০

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন শফিক। বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পুরো পরিবারটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত একটি চেতনাসমৃদ্ধ পরিবার। তার বাবা আবুল হোসেন ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। তার মা শামসুননাহার। পরিবার থেকেই শফিক বাবা-মার অনুপ্রেরণায়, তাদের সহযোগিতায় স্কুলজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। শফিক বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সে সময়ের একজন খুদে সদস্য ছিলেন। পরিবারের মাধ্যমেই জাতির পিতার কথা জানতে পারেন তিনি। এভাবেই ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তার পথচলা শুরু যা চলমান আছে অদ্যবধি। ছাত্ররাজনীতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সার্বিক বিষয় নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন এই রাজনীতিবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালেহীন বাবু

সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। আপনি ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন। আপনার অনুভূতি কি?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একাদশ জাতীয় সম্মেলন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সারা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রচণ্ডভাবে এখানে আশাবাদী ছিল। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতারা তো বটেই, আমাদের সভানেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে জাতিকে একটি বার্তা দিয়েছিলেন। যেটি হলো, আগামী দিনের বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে  আমাদের তরুণ, শিক্ষিত, মেধাবী নেতৃত্বের দরকার। এখনকার যুগের চাহিদা এটি। যার জন্যই মমতাময়ী নেত্রী চেয়েছিল বা উনার লক্ষ্য ছিল সব সেক্টরের মতো রাজনৈতিক সেক্টরকেও একটি ইতিবাচক, সমৃদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা মনে করি, উনি দীর্ঘদিন ধরে, কাউন্সিলের আগে থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে খুব বিশেষভাবে লক্ষ রেখেছিলেন। তার মধ্যে একটি বিষয় ছিল, প্রবীণ ও নবীন নেতৃত্বের সংমিশ্রণে  একটি আধুনিক সংগঠন বা দল গড়ে তোলা। সেই সমীকরণে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হই। আমি তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন ছাত্রলীগকর্মী। ছাত্রসমাজের একজন প্রতীক হিসেবে আমাকে এই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করায় আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।

আপনার রাজনৈতিক জীবন-

আমার মূল পরিচয়টা ছিল আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী। বাংলাদেশ ছাত্রলীগটাই ছিল আমার প্রাণ। এটাই ছিল আমার মূল শিকড়। সেখান থেকে আমার আজকের এই উত্থান। নেত্রী আমার প্রতি বিশেষ নজর রেখেছেন। আমি বিশ্বাস করি, আমার মতো এমনকি আমার থেকে যোগ্য অনেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এই বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আমি আন্তরিকভাবে তাদের প্রতি সম্মান জানাই। আমি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করি। সেখান থেকে আমি হাঁটি হাঁটি পা পা করে  এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রলীগের কর্মী থেকে তৎকালীন অগ্রজ নেতৃত্বের সঙ্গে সংযুক্ত হই। শিবির তথা সাম্প্রদায়িক জামায়াত গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতাদানকারী তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশে নেতাকর্মীদের আন্দোলনের পাশাপাশি, ছাত্রসমাজের আন্দোলনের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। পরে খালেদা জিয়ার সরকার ১৯৯১ সালে আবির্ভূত হলো। খালেদা জিয়ার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও পরবর্তী সময়ে জামায়াতের ওপর ভর করেই সরকার রাষ্ট্রপরিচালনা শুরু করল। যার ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বর্বরতায়, নৃশংসতায় বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল সেটি নসাৎ হয়ে গেল। সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে আমি ’৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবির ও তাদের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছাত্রসমাজের ওপর হামলা করে এবং আমি গুলিবিদ্ধ হই।

আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেদিন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকায় এসে আমার চিকিৎসা করা হয়। শুধু আমি নই আমার মতো আরো অনেকেই যারা জামায়াত-ছাত্রদলের হামলায় আহত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। মাসের পর মাস গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠায় বিএনপি সরকার এরশাদের মতোই স্বৈররূপ ধারণ করে। সেই সময়ে আমাদের শিক্ষাজীবনের একাধিক ছাত্র আহত ও নিহত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৯৩-এর ৬ ফেব্রুয়ারি একটি আলোচিত অধ্যায়,  এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির ঐক্যবদ্ধভাবে প্রগতিশীল ছাত্রসমাজকে উৎখাত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে গানপাউডার দিয়ে ঘরের একটি অংশ নষ্ট করে দেয়। তপন, বিশ্বজিৎসহ প্রগতিশীল ছাত্রসমাজের অনেককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ’৯৩-এর ৬ ফেব্রুয়ারি আমি শিবিরের সহিংসতার শিকার হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হই। এভাবেই আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই ১৯৯৭ সালে। সেখান থেকেই আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রসমাজের সঙ্গে, জামায়াতবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ে জামায়াত-বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শামিল হই। পরবর্তী সময়ে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ২০০১ সালে  রাজশাহী থেকে ঢাকায় চলে আসি।

ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতির পদে আসীন হই। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন আনোয়ারুল্লাহ। ওই সময়ে খালেদার অনুসারী ভিসি আনোয়ারুল্লাহর বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ গর্জে ওঠে। শামসুন্নাহার হলে রাতের অন্ধকারে পুলিশ এবং ছাত্রদল আমাদের ছাত্রী-বোনদের ওপর হামলা করে। সে সময় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ছাত্রী সাদিকুন নাহার সনি নিহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ছাত্রলীগের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। সেদিন আমাকে ডিবি পুলিশ দ্বারা উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সময়টা ছিল ২০০২ সালে। এমনকি আমার পরিবারও জানত না আমি কোথায়। এই গ্রেপ্তারের পরে আমার পরিবার, আমার সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উদ্বীগ্ন ছিল। পরবর্তী সময়ে আমার বিরুদ্ধে বোমাবাজি, চাঁদাবাজিসহ মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমাকে ৪ মাস ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকে রাখা হয়। আমাকে ডিটেনশনে রাখা হয়। এভাবে আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কর্মী, একজন নেতা হিসেবে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নিজেকে শামিল করেছি। আমি সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাকে মুক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমি ছাত্র আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সেই ধারাবাহিকতায় একাধিকবার আবারো আহত হই। ২০০৫ সালে যখন খালেদাবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় তখনো আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের পেটোয়া বাহিনী প্রচণ্ড আঘাতে জর্জরিত করে। আমাকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তৎকালীন জাতীয় পত্রিকাগুলোতে এটি প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনায় আমি মারাত্মক আহত হয়। আমি সেন্ট্রাল হাসপাতালে অনেক দিন ভর্তি ছিলাম। এভাবেই ছাত্ররাজনীতিতে আমার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আহতের মধ্য দিয়ে আমার আজকের এই অবস্থান। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক হই।

আপনার আদর্শ-

আমার আদর্শ বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমি শফিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী পরিবারের সন্তান। আমি মনে করি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে যেভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন  তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, অধ্যায় উনি বিসর্জন দিয়েছেন। একজন মানুষ, একজন বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত। আমি তার সৃষ্টি করা সেই সংগঠনের একজন কর্মী।  তার যে স্বপ্ন ‘ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, একটি সুখী-সমৃদ্ধ স্বনির্ভর বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। সেদিন যদি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা না হতো  তাহলে আজকে বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ স্বনির্ভর একটি দেশ হতো। আমরা স্বাবলম্বী হতাম। এখনো আমাদের দেশের উন্নয়নের এত আন্দোলন, সংগ্রাম করতে হতো না। আজকে সেই সংগঠের একজন কর্মী হিসেবে তার সুযোগ্যকন্যা, আমাদের গর্বিত প্রধানমন্ত্রী, শ্রদ্ধাভাজন সভানেত্রীর সংগঠনের একজন কর্মী হিসেবে নিজেকে গর্বিত বোধ করি। আজকে সারা বাংলাদেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন নন্দিত, জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আমরা মাঝে মাঝে নিজেকে আনন্দে-উদ্বেলিত করি। আমরা চমকে উঠি, গর্ববোধ করি যে আমার নেত্রী এখন আর আমার নেত্রী নয় উনি এখন বিশ্বনেত্রী। সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের মধ্যে উনি একটি আসন অলংকৃত করেন। এই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দলকে আরো সুসংগঠিত করার মাধ্যমে আমি আমার বাংলার মানুষের বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যারা নিবেদিতপ্রাণ তাদের পাশে দাঁড়ানোর একটি সুযোগ পেয়েছি। আমার জন্মভূমি বগুড়া অ্যান্ট্রি আওয়ামী জোন হিসেবে খ্যাত। সেই বগুড়ার অবহেলিত মানুষের পাশে থেকে আমি প্রকৃতই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, চেতনা ও পরিকল্পনা, দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য তার যে বিশাল স্বপ্ন ছিল তারই আলোকে তার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে মিশন ও ভিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেই কাফেলায় আমি নিজেকে একজন কারিগর হিসেবে নিযুক্ত করতে চাই। এটি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি শ্রদ্ধা জানাই আমি যাদের পদাংক অনুসরণ করেছি, আমার ছাত্রলীগের বড় ভাইরা, সেসব বড় ভাইদের শ্রদ্ধা জানাই। আমি তাদের অনুভব করি। তাদের মূল্যায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করব। ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমি একজন খুদে তৃণমূলের কর্মী হিসেবে জায়গা পেয়ে সত্যিই আমি ধন্য।

আমি যেহেতু ছাত্রলীগের একজন সৈনিক ছিলাম, দলের দুঃসময়ের যারা ছাত্ররাজনীতি করেছে তাদের আমি সম্মান জানাই। ওই উপলব্ধি আমার আছে। যারা দলের দুঃসময়ে ছাত্ররাজনীতি করেছে তাদের মানসিক যে যন্ত্রণা, অস্বস্তি, আমি বিশ্বাস করি এবং করতেও চাই, বাস্তবে রূপ দিতে চাই, তাদের উপলব্ধি, আত্মত্যাগকে ধারণ করে তাদের রাজনৈতিকভাবে কাজ করার, সুযোগ দেওয়ার, কীভাবে আরো সম্পৃক্ত করা যায় সেই প্রস্তাবনা করব জাতীয় নেতাদের কাছে। নেত্রীর কাছেও এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করব। আমি বিশ্বাস করি, তারা যদি যথার্থ সুযোগ পায়, মূল্যায়ন পায় তাহলে একজন ছাত্রলীগকর্মী, একজন সাধারণ মেধাবী ছেলেও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র গঠনে অনেক বড় অবদান রাখতে পারে। তবে তাদের দরকার হলো একটি সুযোগের। একটি স্বীকৃতির।

জননেত্রী শেখ হাসিনা একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা, সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দলে জায়গা দিলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। দল আরো শক্তিশালী হবে। এবাবেই নেত্রীর তাদের জন্য আগামী দিনে একটি নিশ্চিত ঠিকানা, মূল্যায়ন করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

মুজিববার্ষিকীর কাউন্টডাউন ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করা হবে। এটি জাতির চেতনায় কেমন প্রভাব ফেলবে? নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর চেতনা কীভাবে আরো বিকশিত করা যায়?

মুজিববার্ষিকী নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে যার জায়গা থেকে অর্থাৎ স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সবাই আমরা যেন একটি করে পজিটিভ কাজ, যা দেশের কল্যাণে কাজে লাগবে এরকম কাজ যেন করি। যেকোনো ইতিবাচক কাজে নিজেকে শামিল করতে পারি। দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে পারি। এই মুজিববার্ষিকী অনেকভাবেই আমরা ঐতিহাসিক করতে পারি। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি ইতিহাসসমৃদ্ধ উজ্জ্বল একটি অধ্যায়। এটি  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানার একটি প্রয়াস। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরা নেত্রীর বার্তাকে উপলব্ধি করে সবাই ইতিবাচক একটি করে কাজ করবে। যার মধ্য দিয়ে তার পাশের, তার পরিসরের লোকজন উপকৃত হবে। জানবে যে সে মুজিব আদর্শের একজন সৈনিক হতে পারে। এই দেশমাতৃকার, এই রাষ্ট্রের পিতার স্বর্ণালি অধ্যায়ের একজন কর্মী জাতির পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করে যাবে।

আপনারা লক্ষ করলে দেখবেন এই মুজিববার্ষিকী উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে, যেমন বগুড়ার কথাই ধরুন। এই বগুড়াতে মুজিববার্ষিকী উপলক্ষে মঞ্চ করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। কেউ আবার আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন। যে যার অবস্থান থেকে মানুষের সেবা করছে। এটা শুধু বগুড়া নয়। উত্তরবঙ্গের বেশকিছু জায়গায় মুজিববার্ষিকী উপলক্ষে একটি করে মঞ্চ করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শুধু মুজিববার্ষিকীতে জাতির পিতাকে রোমন্থন নয় বরং যত দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থাকবে, আমরা নেতাকর্মীরা থাকব তত দিন মুজিব আদর্শের প্রয়াসকে আমরা চলমান রাখব। আমরা জাতির পিতাকে আমাদের অন্তরে লালন করি। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা একযোগে কাজ করে যাব। এভাবে জাতির পিতাকে সবসময় আমরা স্মরণ করব। এরকম একটি প্রস্তাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের দলে আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযানে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী রাজনীতিতে যোগ হয়েছে নতুনমাত্রা। তবে দলে এখনো অনেক হাইব্রিড রয়েছে যাদের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাকর্মীরা অবহেলিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

আমি আপনার কথার সঙ্গে একমত। আমি আগেই বলেছি আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এসেছি। তাই আমার মধ্যে আমার দলের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অনুভূতি আমি নিজেও অনুভব করি।  আমার নেত্রী এখনো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে আমার ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আপনি লক্ষ করে দেখবেন উনি এখনো অনেক সভা-সেমিনারে বলেন, আমার ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন আমি করতে চাই। আমার কর্মীরাই আমার প্রাণ।

আপনি সিলেট বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। দল থেকে আপনাদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আপনি সিলেট বিভাগকে দলীয়ভাবে আরো সুসংগঠিত করার জন্য কোনো পরিকল্পনা করেছেন কি না?

আমি শুধু সিলেট বিভাগ না। এখানে আসার আগে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম,  তিনটি বিষয়ের ওপর আমি গুরুত্ব দেব। প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বের জায়গাটা ভরাট থাকার কারণে এখানে একটি জট সৃষ্টি হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের ২০০১ সালে লিয়াকত-বাবুর কমিটির পর কিন্তু বেশ কয়েকটি ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে। এমনকি বেশকিছু কমিটি বিদায় নিয়েছে। যার কারণে সাবেক ছাত্রনেতাদের একটি জট সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রী এখন নিজেই সোচ্চার হয়েছেন এই জ্যামের ব্যাপারে। যে কারণে কিছু ছাত্রলীগ নেতাদের উনি জায়গা দিয়েছেন। আমার লক্ষ্য  শ্রদ্ধাবোধের যে জায়গাটুকু। বড়রা যেন সম্মান পায় আর ছোটরা যেন সেই স্নেহ বড়দের কাছ থেকে পায় এই যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ এটিকে আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। আমার যে কর্মএলাকা। যেমন সিলেট বিভাগের দায়িত্ব, তারপর সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে তাদের সঙ্গে মিলে সবার মধ্যে এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনবো। এই জিনিসটা করার জন্য একটি উদ্যোগ নিতে চাই। এটি আমার প্রথম ধাপ।

দ্বিতীয় ধাপ হলো-যেহেতু আমার জন্ম, আমার পরিচিতি, আমার উত্থান ছাত্ররাজনীতি থেকে। আমি একজন ছাত্রলীগার। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমার শিকড়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাবেক ছাত্রলীগারদের মূল্যায়ন কীভাবে করা যায়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্ব স্ব ঠিকানা, একটি পরিচিতি রয়েছে। সেই ছাত্রলীগারদের যেন স্ব স্ব অবস্থানে হলেও তাদের যেন সংগঠনের জায়গা থেকে মূল্যায়ন করতে পারি। তাদের যেন সম্মানজনক কাঠামোর মধ্যে রেখে সচল রাখতে পারি। এটি আমার দ্বিতীয় কর্মপ্রক্রিয়া।

তৃতীয়ত আমি কর্মে বিশ্বাসী। আমি যতটুকুই পারব ততটুকুই মুখ দিয়ে উচ্চারণ করব। কথার সঙ্গে আমি কাজে মিল রাখতে চাই। আমি যেন আগামী দিনে আমার  নেত্রী যে আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে, যেই সূচারুদৃষ্টি নিয়ে আমাকে যে পদে আসীন করেছে আমি সেই মর্যাদা রাখব। আমার নেত্রীর আগামীর যে সমৃদ্ধ-প্রযুক্তিনির্ভর ২০৪১ সালের যে ভিশন, বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের সোনার বাংলা গড়ার একজন সুযোগ্য কারিগর হতে চাই। সেক্ষেত্রে আপনাদের সবার সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads