• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পৃষ্টপোষকতার অভাবে বিলুপ্ত’র পথে কুষ্টিয়ায় তাঁতের গামছা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

ফিচার

পৃষ্টপোষকতার অভাবে বিলুপ্ত’র পথে কুষ্টিয়ায় তাঁতের গামছা

  • জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কুষ্টিযা কুমারখালী উপজেলায় তাঁতের গামছা শিল্পের শ্রমিকরা চরম করোনাকালীন সময়ে দুর্দিনে মধ্যে দিনযাপন করছে। তাঁত মালিকরা অর্থনৈতিক সঙ্কটে ও কাঁচামালের মুল্যের বৃদ্ধির কারণে। প্রতিকূলতার কারণে উপজেলা এককালের প্রসিদ্ধ গামছা শিল্পটি আজ বিলুপ্ত এর পথে। শিল্পের সাথে জড়িত শত-শত শ্রমিক বেকার হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

গফুর কারিগর জানান, উপজেলা জুড়ে তাঁত পল্লি গুলো তাঁতের খটখট শব্দে রাত-দিন মুখরিত থাকতো, আজ সেখানে শ‍ুনশান নীরবতা। তবু বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে কোনোমতে টিকে আছে কয়েকটি পরিবার।

শ্রমিক লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ভাষায় এদের কারিগর বলা হয়। সুতো কিনে বিভিন্ন রং মিশিয়ে নিজেদের তাঁতে সুনিপুণ হাতে গামছা তৈরি করে তাঁত পল্লিতে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হত এই তাঁতের গামছা। কেবলই হারানো স্মৃতি। তবে উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবার এখনও গামছা তৈরি করে কোনোভাবে পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কিন্তু নানা সঙ্কটেও তারাও হারিয়ে যেতে বসেছেন এই শিল্প।

জীবনের শুরু থেকে বাপ-দাদার পেশা এ তাঁত চালিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন কুমারখালী তেবাবাড়িয়ার জাফর শেখ। জাফর শেখের গামছা সারাদেশে রপ্তানি হতো। তার অনুপস্থিতিতে ছেলে খোকন শেখ, অনেক কষ্টে তাঁদের পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছে। জাফর শেখ বড় ছেলে জহুরুল বাবার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুটি তাঁতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁতের কাজ শিখে নিজের ঘরে বসে গামছা তৈরী করি।

কুমারখালী, খোকসা, ও কুষ্টিয়া, মিরপুর, পাংশা, লাঙ্গল বাঁধ, উপজেলায় প্রায় ৮০ হাজারেরও অধিক গামছা তাঁতী ছিল। এরমধ্যে খটখটি তাঁত ১৪ হাজার হস্তচালিত পিটলং তাঁত ৪৪ হাজার ও বিদ্যুৎ চালিত ২০ হাজার। প্রতি বছর ২শ’ ৬০ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় তৈরি হত এ জেলায়। ২ কোটি ৮৮ লাখ পিস লুঙ্গি, ১৫ লাখ পিস বেড কভার, ৭২ লাখ পিস গামছা তোয়ালে উৎপাদন হত। এক সময় এ জেলায় বস্ত্রশিল্পের বার্ষিক আয় ছিল ৩শ’ কোটি টাকার উপরে। দেশের মোটা কাপড়ের চাহিদার ৬৩ ভাগ পূরণ করতো কুষ্টিয়ার তাঁতীরা। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ তাঁত কাপড়ের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বর্তমানে এ চাহিদা কমে ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। সব কিছুর দাম বাড়লেও আশানুরুপ তাঁতবস্ত্রের কোন দাম না বাড়ায় কুষ্টিয়ার ১ লাখ ১৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫০ হাজার তাঁত শ্রমিক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও পুরাতন পেশা হিসেবে এ পেশায় টিকে আছে কয়েক হাজার তাঁতী। কুমারখালী ঐতিহ্য তাঁত শিল্পের জন্য সরকারের নতুন করে ভাবতে হবে।কুষ্টিয়া তাঁত বোর্ডের তথ্য মতে, জেলায় ১৫ হাজার পাওয়ার লুম ও ২ হাজার হ্যান্ডলুমে ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।

গামছা শিল্পের শ্রমিক সাহেব আলী জানান, উপজেলা জুড়ে হাতে গুনা কয়েকটি এলাকায় তাঁতের গামছা তৈরি করা হচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়া ও পৃষ্ঠপোশকতার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কুমারখালী ঐহিত্যবাহী তাঁতের গামছা শিল্প।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads