• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ইমরানের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ইমরানের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ইমরান শরিফ পেশায় একটি বহুজাতিক কোম্পানির আইন কর্মকর্তা। থাকেন রাজধানীর উত্তরায়। পেশাতে নিজের সবটুকু নিয়ে জড়িয়ে থাকলেও ইমরানের আছে অন্য আরেক পরিচয়, তিনি দুবারের গিনেসওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অধিকারী। দেশের নাম বিশ্বের মাঝে ভিন্নভাবে তুলে ধরতে তার এই উদ্যোগ। সমপ্রতি, ইমরান দেশের জন্য বয়ে এনেছেন অনন্য এক স্বীকৃতি। জাতীয় পতাকার ক্যাটাগরিতে লাল-সবুজ রঙের চিঠি লেখার খাম দিয়ে বানানো পতাকা ক্যাটাগরিতে মোট ৪ হাজার ৯৭০টি খাম ব্যবহার করে ইমরানের বানানো পতাকাটি গেল বছর ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবসের দিনই নথিভুক্ত করে গিনেসওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ। গিনেসওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এখন যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম জাতীয় পতাকার জন্য; বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে যা সর্বপ্রথম ও একমাত্র বিশ্ব রেকর্ডও বটে।

ঢাকার মিরপুরে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা ইমরানের পড়াশোনা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ও আইনের ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে তালিকাভুক্ত আইনজীবী তিনি।

হঠাৎ করেই এমন চিন্তা কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ইমরান বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি, দেশাত্মবোধ ইত্যাদির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটা অনেক পুরোনো। সবসময় চিন্তায় থাকত দেশ-মাটি-মানুষ তথা জন্মভূমি-সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে কী কী কাজ করা যেতে পারে। মূলত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বিশ্ব রেকর্ডের চিন্তা মাথায় আসে সেই ভাবনা থেকেই’। নতুন রেকর্ড নিয়ে ইমরান বলেন, ‘এই বিশ্ব রেকর্ডের সঙ্গে আমি চারটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছি- জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, মহান বিজয় দিবসে আয়োজন করা এবং মুুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। নির্দিষ্ট মাপের জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের এনভেলাপ বা চিঠি লেখার ৪,৯৭০টি খাম দিয়ে সুবিশাল জাতীয় পতাকা তৈরি করি, যার পরিমাপ ছিল ৬০ বর্গমিটার; জাতীয় পতাকার রঙের প্রতিটি খামের ভেতরে অবজেক্ট হিসেবে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রথম দুচরণ, যা এখন অবধি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম জাতীয় পতাকা হিসেবে বিশ্ব রেকর্ডের তালিকায় স্থান নিয়ে আছে।’

চলতি বছরের ২০ এপ্রিল গিনেস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইমরানকে দেওয়া এই স্বীকৃতির সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম এনভেলাপ মোজাইক পতাকাটি ৬০ বর্গমিটারের। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর পতাকাটি বানিয়েছেন ইমরান শরিফ। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের এই বিভাগের আনুষ্ঠানিক নাম ‘লার্জেস্ট এনভেলাপ মোজাইক (ফ্ল্যাগ)’। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আনুপাতিক মাপ ঠিক রেখে বানানো পতাকাটিতে সবুজ অংশের তিন হাজার ৮৮৩টি এবং লাল অংশের এক হাজার ৮৭টি খাম, নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ হাতেই সব খাম তৈরি করেন ইমরান। ইমরান আরো উল্লেখ করেন, গত বছরের বিজয় দিবসে পতাকাটি বানিয়েছিলাম। প্রথম পর্যায়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে রেকর্ড গড়তে চেয়ে আবেদন করার প্রায় তিন মাস পর তারা আমার রেকর্ডের অনুমোদন দেয়। আনুষ্ঠানিকতা শুরু করি এর পরই। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি নির্ধারিত আয়তনের লাল-সবুজ রঙের কাগজ দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম পতাকা বানিয়েই। এর সঙ্গে খামের ভেতরে লেখার জন্যও আলাদা কাগজ নিতে হয়েছিল। বিশ্বের বিচিত্র ও অনন্য-অসাধারণ বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ যা পূর্বে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’ নামে পরিচিত ছিল।

এবারই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানো ইমরানের প্রথম নয়, আগে থেকেই তার ঝুলিতে আছে আরো একটি বিশ্ব রের্কড। প্রথম রেকর্ড নিয়ে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম পেপারক্লিপ চেইন’ ছিল আমার প্রথম বিশ্বরেকর্ড। দেশাত্মবোধ এবং চমকপ্রদ কিছু করার মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ডের কাজে সংযুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থেকেই এই পথচলায় আসা। পেপারক্লিপ চেইন দ্বারা বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করার ইচ্ছা থাকলেও সেই ক্যাটাগরি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় না থাকায় বিশ্ব রেকর্ড কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি মেলে দীর্ঘতম পেপারক্লিপ চেইন হিসেবে যার দৈর্ঘ্য ছিল ২.৫২৭ কিলোমিটার বা আড়াই কিলোমিটার (প্রায়)। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘পেপারক্লিপ বা জেমসক্লিপ’-এর সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ৭১৫টি; অসীম ধৈর্য পরীক্ষার এই প্রথম বিশ্বরেকর্ডের জন্য লেগেছে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময়। এত পথ আসাটা অবশ্য মোটেই সহজ ছিল না। ‘প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকে অজানা অগণিত অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতা। ঠিক তেমনি আমার বিশ্ব রেকর্ডের পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সবার অবদান অনস্বীকার্য। এক একটি বিশ্ব রেকর্ড মানে হচ্ছে, বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের ভিড়ে এই কৃতিত্বটিই স্বীকৃত বিশ্বসেরা। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ-যোগ করেন ইমরান। শুধুমাত্র নিজে বিশ্ব রেকর্ডধারী হয়েও থেমে থাকেননি তিনি, সরাসরি উপস্থিত থেকে এবং সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে বেশ কয়েকজনের বিশ্ব রেকর্ডের অনন্য স্বীকৃতিতে ভূমিকা পালন করছেন ও আগামীতেও করবেন।

আগামী দিনে এগিয়ে যেতে চান সবার সহযোগিতা নিয়ে। সামনে নতুন আরেকটি রেকর্ড নিয়ে শিগগিরই হাজির হচ্ছেন ইমরান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩২ বছর বয়সী এই বিশ্ব রেকর্ডার জানালেন, আরো একটি রেকর্ডের আনুষ্ঠানিকতা চলমান রয়েছে। ইচ্ছা রয়েছে আগামী বছরের শুরুর দিকে আয়োজনের। এছাড়াও চমকপ্রদ খবর হচ্ছে, স্থান সংকুলানের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আমার বর্তমান রেকর্ডের চেয়ে আরো দীর্ঘতম জাতীয় পতাকা বানাতে পারিনি, কিন্তু আমার সংরক্ষণে প্রায় ১৫ সহস্রাধিক লাল-সবুজের এনভেলাপ থাকায় ব্যাটে-বলে মিললে ইতিহাসের পাতায় আরো দীর্ঘতম জাতীয় পতাকা বানিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকটে রেখে যেতে চাই। কিছু করতে চাই যার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামটি হবে অনন্য-সাধারণ ও মর্যাদার; যা রেখে যেতে চাই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মাঝে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads