• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রবাসী সাঈদ উর রবের লেখকসত্তা

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

প্রবাসী সাঈদ উর রবের লেখকসত্তা

  • রায়হান উল্লাহ
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০২০

একজন প্রবাসী সবচেয়ে বেশি দেশপ্রেম বুকে পুষে রাখেন। এ কথার সঙ্গে দ্বিমত থাকতে পারে অনেকের। তাদের মনে যুক্তি আসতে পারে দেশ ছেড়ে গেলে দেশপ্রেম কীসের? এ ছেড়ে যাওয়া প্রকৃত ছেড়ে যাওয়া নয়। যদি মানুষটি দেশের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। আমাদের আপনজন অগণিত প্রবাসী বাংলাদেশি এমনটি করছেন। তিনি আয় করে নিজেকে রক্ষা করছেন। আজ কথা হবে এমন একজনকে নিয়ে যিনি একাধারে ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক ও সংগঠক। এমন আরো অনেক পরিচয় আছে তার। এসব পরিচয় দেশ ও দেশের বাইরে অনেকেই জানেন। কিন্তু তার একটি গুণ খুব বেশি মানুষ জানেন না। তিনি একজন লেখক। কথা হচ্ছে প্রবাসী সাঈদ উর রবকে নিয়ে। এটি একটি অতি পরিচিত নাম। তিনি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া মানুষ। মানুষের কথা যখন আসে তখন বলতে তিনি আপামর মানুষের পরম প্রিয়।

এবার তার স্বাভাবিক কিছু কার্যক্রম জানা যাক। দীর্ঘ সময় প্রবাস জীবনে আছেন তিনি। আমেরিকার মতো দেশের ঝলমলে হাতছানি তাকে খুব বেশি ভোলাতে পারেনি। তিনি উত্তর আমেরিকার বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক ঠিকানা, দর্পণ এবং সংবাদ সংস্থা এনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি দেশসেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক গেমস অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন অনেকবার। পদকও জিতেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করে ঢাকা শারীরিক কলেজ থেকে বিপিএড এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ফিটনেস ম্যানেজমেন্টে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। বিমানবাহিনীতে চাকরি পেলেও মন টেকেনি। তিনি তার দেশের বাড়ি কুলাউড়ায় গড়ে তুলেছেন দেশের প্রথম আর্টস অ্যান্ড স্পোর্টস মিউজিয়াম সেন্টার, যা জেলার মানুষের জন্য পরম একটি সুখকর বিষয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বাঙালি সমাজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আনন্দ-বেদনা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা যারা লেখায় লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছেন, সাঈদ উর রব তাদের অন্যতম। সাঈদ উর রব নিউইয়র্কে আসার পর সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত হন। সাপ্তাহিক ঠিকানার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এক দশকেরও বেশি সময়। এককালের কৃতী অ্যাথলেট; ডিসকাস এবং শটপুট থ্রোতে জাতীয় রেকর্ডধারী, রেসলিংয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। এসবের মাঝে তার ম্রিয়মাণ একটি গুণ লেখকসত্তা। তিনি ভালো মানের একজন লেখক।  তার প্রকাশিত বই ঢের। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য- অনিয়মই নিয়ম, আমার ভাবনা, আতান্তর, ঠিকানা এলবাম, ঠিকানার মুখোমুখি সেরা-১৩৩, ঠিকানা সম্পাদকীয় (১৯৯৪-২০০৩), ‘সাঈদ উর রব ১৯৭৭-২০১২’, নোঙর ও প্রবাসে বাঙালি-বাঙালির প্রবাস।

আবারো বলছি তিনি একজন ক্রীড়াবিদ। সহজেই তার প্রকাশিত বই একটি প্রামাণ্য দলিল; ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সবার জন্য। নিউইয়র্কের ২০০৮ সালের বইমেলায় সাঈদ উর রবের একটি বই বেরিয়েছিল। যার নাম ‘অনিয়মই নিয়ম’। যদি কোনো সমাজে অনিয়মই নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে, তাহলে কেমন হয় কিংবা হতে পারে সে সমাজের অবস্থা? লেখক সাঈদ উর রব তার বিচক্ষণ দৃষ্টিতে তখনকার বাংলাদেশ ও বিশ্বের সামগ্রিক বাস্তবতা তুলে ধরতে চেয়েছেন তার এই গ্রন্থের তেরোটি নিবন্ধে। তিনি খুব স্পষ্ট করেই বলতে চেয়েছেন কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদের কারণেই বাংলাদেশের এমন বেহাল অবস্থা হয়েছিল; বিশ্ব হয়েছিল চরম দুঃসময়ের মুখোমুখি। সাঈদ উর রব তার লেখাগুলোতে কখনো হয়েছেন খুবই দ্রোহী, আবার কখনো তার স্বদেশপ্রেম বিগলিত হয়েছে মৃত্তিকার প্রতি অশেষ মমতায়। তার প্রধান বক্তব্য হচ্ছে সব অনিয়মকে নিয়ম করে এই দেশ, জাতি এবং সমকালের বিশ্বকে কেন ভ্রান্তপথে পরিচালিত করা হচ্ছে? সাঈদ উর রব ভিন্ন ধাতুর। তিনি খেলা ছেড়ে মনোযোগ দেন ব্যবসা ও সাংবাদিকতায়।

তিনি আরেকটি উদ্যোগ নেন যা বাংলাদেশের সব ক্রীড়াবিদের জন্য আনন্দের এবং অনুকরণযোগ্য। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে তাকে নিয়ে যত লেখা-ছবি-প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোকে একীভূত করে প্রকাশ করেছেন একটি বই। একজন সাঈদ উর রবের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা বা স্তুতিগাথা না হয়ে বইটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের একটি সময়ের দলিল। ঠিকানা গ্রুপ প্রকাশিত ‘সাঈদ উর রব ১৯৭৭-২০১২’ বইটি পাঠকদের কাছে হাজির করে তিনি আরেকটি কীর্তি গড়লেন; যা তার খেলোয়াড়ি কীর্তির মতো দারুণ উজ্জ্বল। তিনি উজ্জ্বল তার লেখমালায়ও। অনেকে সাহসী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সমাজের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন না কিংবা বলতে পারেন না। সাঈদ উর রব সে সৎসাহস দেখাবার জন্য এগিয়ে এসেছেন।

পরিশেষে বলতে হয় আমরা চাই এক সময়ের তুখোড় অনেক অভিধার মালিক সাঈদ উর রব লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাক। ভুল বলা হলো; তা তিনি পেয়েই আছেন। আমরা চাই এর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads