• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

মহেশখালীর মিষ্টিপান

ছবি : সংগৃহীত

খাদ্য

মহেশখালীর মিষ্টিপান

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০১৮

মহেশখালীর মিষ্টিপানের খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পান ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মিষ্টিপান কিনে বড় বড় টুকরিতে (ঝুড়ি) ভর্তি করেন। স্থানীয় পানচাষিরাও টুকরিতে করে মহেশখালীর বিভিন্ন হাটবাজারে মিষ্টিপান বিক্রি করছেন উৎসবের আমেজে। এর জনপ্রিয়তার কারণে ফোকগান শিল্পী শেফালী ঘোষের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক জনপ্রিয় গান- যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম। এমনকি উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রুনা লায়লার কণ্ঠেও শোনা গেছে মহেশখালীর পানের গল্প। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার আদিবাসীরা পান খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করেন হাজার বছর আগে থেকে। পান যে এ অঞ্চলের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, তার প্রমাণ মেলে খোদ শ্রীমদ্ভগবতে। এতে দেবতা কৃষ্ণের পান খাওয়ার অভ্যাসের কথা পাওয়া যায়।

জানা যায় ভারতবর্ষের রাজা-সম্রাটদের অন্দরমহলেও ব্যাপকভাবে পান খাওয়ার প্রচলন ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা নূরজাহানের পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল এবং তিনি তা অন্দরমহলের অন্যান্যের কাছেও জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরি, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মাঘি, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টিপান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী।

এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পেশাও পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এর জমি পানচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহেশখালীর পানের অন্যতম বিশেষত্ব হলো এর মিষ্টি স্বাদ, যার কারণে এই পান সারা দেশে বিখ্যাত। মহেশখালীর এই বিখ্যাত মিষ্টিপান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানিও করা হয়। এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি আফ্রিকায়ও ছড়িয়ে রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মিষ্টিপান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে। পান অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ফসল।

সুতরাং পান চাষের জন্য বিশেষ দক্ষতা ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা জরুরি। পানক্ষেতকে বলা হয় পানের বরজ। মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরনের- পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই থেকে তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে-জুনে শেষ হয়। অপরদিকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যেকোনো সময়। এক বিরা বড় মিষ্টিপান ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। মাঝারি পান এক বিরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট পান ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চার৪টি পানে হয় এক গণ্ডা, এভাবে ৪৫ গণ্ডা পানকে এক বিরা বলা হয়। সপ্তাহে অন্তত দুদিন মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পানের হাট বসে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads